সংঘর্ষ চলাকালে দোকানপাট ভাংচুর ও লুটপাট করা হয়েছে। হামলায় হরষপুর রেলওয়ে স্টেশন ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় ঢাকা-সিলেট ও সিলেট-চট্টগ্রাম আন্তঃনগর রেল যোগাযোগ সাময়িক বন্ধ থাকে

স্টাফ রিপোর্টার, মাধবপুর থেকে ॥ হবিগঞ্জের মাধবপুরে মসজিদে নামাজ পড়ানোকে কেন্দ্র করে দুই উপজেলার লোকজনের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। গতকাল শুক্রবার দুপুরে মাইকে ঘোষণা দিয়ে উভয়পক্ষের লোকজন সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। সংঘর্ষে উভয়পক্ষের অন্তত অর্ধশতাধিক লোক আহত হয়। সংঘর্ষ চলাকালে বিজয়নগর উপজেলার লোকজন মাধবপুর উপজেলায় অবস্থিত হরষপুর স্টেশন বাজারে হামলা করে দোকানপাট ভাংচুর ও লুটপাট করেছে। সংঘর্ষে গুরুতর আহতদের মাধবপুর, বি-বাড়ীয়া ও হবিগঞ্জ ২৫০ শয্যা জেলা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। সংঘর্ষ চলাকালে ঢাকা-সিলেট ও ঢাকা-চট্টগ্রাম রেল চলাচল বন্ধ থাকে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, মাধবপুর উপজেলার হরষপুর মাদ্রাসার ইমাম নিয়োগকে কেন্দ্র করে হরষপুর গ্রাম ও পার্শ¦বর্তী বিজয়নগর উপজেলার প্রাক-হরষপুর গ্রামের লোকদের মাঝে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলে আসছে। স্থানীয় প্রশাসন কিছুদিন পূর্বে একজন ইমাম নিয়োগ দিয়ে বিরোধ নিষ্পত্তি করেন। এরপর পরিস্থিতি বেশ কিছুদিন স্বাভাবিক ছিল। গতকাল শুক্রবার হরষপুর দারুল উলুম মাদরাসার শিক্ষক বশির আহমেদ মাদ্রাসা মসজিদে জুমআর নামাজে ইমামতি করতে চেয়েছিলেন। ছাত্ররা এতে বাঁধা দিলে লোকজন দু’পক্ষে ভাগ হয়ে ঝগড়াতে লিপ্ত হয়। এরপর নামাজ শেষে হরষপুর গ্রামবাসীর সাথে বশির আহমেদের জন্মস্থান ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগর উপজেলার বুল্লা ও এখতিয়ারপুর গ্রামবাসী মাইকে ঘোষণা দিয়ে দেশীয় অস্ত্র নিয়ে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। ওই সময় মাধবপুর উপজেলার হরষপুর রেলস্টেশনের ব্যবসায়ীদের উপরও অতর্কিত হামলা চালানো হয়। এতে অর্ধশতাধিক লোক আহত হয়। গুরুতর আহত শিয়ালউড়ি গ্রামের রাজু আহমেদ, সুলতানপুর গ্রামের জামাল, সামিদ মিয়া (৩৫), আরমান মিয়া (১৭), সুচন মিয়া (২৮), কাউছার আহমেদ (৩২), জামাল মিয়া (৫৫), ইয়াসিন শাহ (২১), রাসেল (১৬), ফুল মিয়া (২৮), চান মিয়া (৪৫), মঈদ উদ্দিন রাজুকে (২৪) মাধবপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, বি-বাড়ীয়া ও হবিগঞ্জ সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। সংঘর্ষ চলাকালে হরষপুর রেলস্টেশন বাজারের প্রায় ৫০টি দোকান ভাংচুর ও লুটপাট করা হয়। হামলায় হরষপুর রেলওয়ে স্টেশন ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় ঢাকা-সিলেট ও সিলেট-চট্টগ্রাম আন্তঃনগর রেল যোগাযোগ সাময়িক বন্ধ থাকে।
হরষপুর রেলস্টেশনের মাস্টার মো. জাহিদ হোসেন জানান, উশৃঙ্খল লোকজন স্টেশনে আক্রমণ করে কাঁচ ভেঙ্গে দিয়েছে। তিনটি ট্রেন মনতলা ও মুকন্দপুর স্টেশনে বিকেল ৩টা থেকে আটকে থেকেছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের পর সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় সেগুলো গন্তব্যের দিকে ছেড়ে যায়।
ধর্মঘর ইউপি চেয়ারম্যান ফারুক আহমেদ পারুল জানান, বিজয়নগরের কতিপয় সন্ত্রাসী মাদ্রাসার মসজিদের ইমাম নিয়োগকে কেন্দ্র করে হরষপুর বাজারের অন্তত ৩০ থেকে ৪০ জন ব্যবসায়ীর দোকানপাট ভাংচুর ও লুট করেছে। এতে অনেকে আহত হয়েছেন। দুর্বৃত্তরা নিরস্ত্র মানুষের উপরে হামলা করে নজিরবিহীন ঘটনা সৃষ্টি করেছে।
মাধবপুর থানার ওসি জাবেদ মাসুদ জানান, বর্তমানে পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে। খবর পাওয়া মাত্রই আমরা সেনাবাহিনী ও বিজিবির সহযোগিতা চেয়েছিলাম। রেলওয়ে স্টেশনের ব্যারিয়ার পড়ে থাকার কারণে আমাদের ঘুরে আসতে কিছুটা দেরি হয়েছে। তবে এ বিষয়ে তদন্ত করে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।