মো. মামুন চৌধুরী ॥ বছরের বৈশাখ থেকে শ্রাবণ মাসের শেষ পর্যন্ত জলাশয়ে সবধরনের মাছ ডিম ছাড়ে। ঠিক এ সময়ে হবিগঞ্জের হাওরসহ প্রাকৃতিক জলাশয়ে কারেন্ট জাল দিয়ে অবাধে ডিমওয়ালা মাছ নিধন করছে একশ্রেণীর লোকেরা। মাছ ডিম ছাড়ার পূর্বেই মেরে ফেলা হচ্ছে। শুধু তাই নয়, বড় হবার পূর্বেই নিধন করা হচ্ছে নানা প্রজাতির পোনা মাছ। শিকারীদের হাত থেকে মাছ রেহাই পাওয়া দায় হয়ে দাঁড়িয়েছে। এসব মাছ জলাশয়ে থাকলে কয়েকগুণ উৎপাদন হত। এ অবস্থায় হবিগঞ্জে দেশীয় নানা প্রজাতির ডিমওয়ালা ও পোনা মাছের সংরক্ষণের অভাব দেখা দিয়েছে।
এখানে জেলা মৎস্য বিভাগ বলছে মাছ রক্ষায় অভিযান অব্যাহত আছে। অভিযানে কারেন্ট জালসহ মাছ শিকারের নানা যন্ত্র জব্দ করে পুড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে।
জানা গেছে, হবিগঞ্জ জেলার একদিকে হাওর। অপর প্রান্তে পাহাড় ও শিল্পাঞ্চল। জেলার সবস্থানেই কমবেশী নদী, ডোবা, নালা, খাল, বিল, পুকুরসহ নানা জলাশয় রয়েছে। এগুলো সরকারি ও বেসরকারি জমিতে অবস্থিত। হাওর অঞ্চলে রয়েছে সরকারি বিল ও নদী। শিকারীরা নানা কৌশলে কারেন্ট জাল, চায়না জালসহ অন্যান্য যন্ত্র ব্যবহার করে মাছ ধরে বিক্রি করছেন। বর্ষা এলে জলাশয়গুলোতে এক সময় প্রচুর মাছ পাওয়া যেত। বর্তমানে দেশীয় মাছ পূর্বের তুলনায় পাওয়া যাচ্ছে না। এখনকার দিনে বর্ষার শুরু থেকে জলাশয়গুলোতে মাছ ধরতে কারেন্ট জাল, খুচা, ফারণ, বর্শি, অন্যান্য জালসহ নানা ধরণের যন্ত্র নিয়ে জলাশয়ে হুমড়ি খেয়ে পড়েন শিকারীরা। এ কারণে মাছ ডিম ছেড়ে বংশ বিস্তার করতে বাধার মুখে পড়েছে। আর তাতে করে দিন দিন হ্রাস পাচ্ছে দেশীয় নানা প্রজাতির মাছ।
জেলার আজমিরীগঞ্জ উপজেলার হাওর অঞ্চল পরিদর্শনকালে দেখা গেছে একশ্রেণীর লোকেরা প্রতিযোগীতামূলক কারেন্ট জাল ও অন্যান্য জাল দিয়ে ডিমওয়ালাসহ পোনা মাছ অবাধে শিকার করছে। তেমন কেউ এর প্রতিবাদ করছে না। অনেকে মন্তব্য করেছেন, হবিগঞ্জের হাওরাঞ্চলের মাছের নিরব কান্না কেউ শোনার নেই।
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক তোফাজ্জল সোহেল বলেন- হবিগঞ্জের জলাশয়ে বাইম, টেংরা, রুই, কাতল, ঘনিয়া, আইড়, গজার, শৈল, বোয়াল, ছাপিলাসহ ২৫ থেকে ৩০ প্রজাতির মাছ রয়েছে। এসব মাছ প্রাকৃতিকভাবে জলাশয়ে জন্ম নিয়ে থাকে। বাংলা বছরের বৈশাখ থেকে শ্রাবণ মাস পর্যন্ত নানা প্রজাতির মাছগুলো জলাশয়ে ডিম ছাড়ে। এ সময় মাছগুলো শিকার না হলে ব্যাপক আকারে মাছের বিস্তার হত। কিন্তু একশ্রেণীর লোকজন কারেন্ট জালসহ নানা যন্ত্র দিয়ে মাছগুলো শিকার করছে। যদিও মৎস্য বিভাগের পক্ষ থেকে বলা হয়ে থাকে এসব লোকদের হাত থেকে মাছগুলোকে রক্ষা করতে নানা পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে। বিভিন্ন সময় অভিযান চালিয়ে কারেন্ট জাল, ডিমওয়ালা মাছ ও পোনা মাছসহ আহরণকারীকে আটক করা হয়ে থাকে। তারপরও যেন কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না।
জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোহাম্মদ ওয়াহিদুর রহমান মজুমদার জানান, পোনা ও ডিমওয়ালা মাছ রক্ষায় অভিযান অব্যাহত রয়েছে। অভিযানে কারেন্ট জাল, চায়না জালসহ মাছ শিকারের বিভিন্ন যন্ত্র জব্দ করে পুড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। এছাড়া নানা স্থানে সচেতনতামূলক প্রচারণা করা হয়। দেশীয় মাছের বংশ বিস্তারে নিময়নীতি অনুসারে কার্যক্রম পরিচালনা হচ্ছে।
তিনি জানান, এখানের মিঠা পানির মাছ স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে নানা স্থানে রফতানি হয়। দিন দিন মাছের উৎপাদন বাড়াতে বিল খনন, মৎস্যজীবিদের প্রশিক্ষণ, বর্ষায় জলাশয়ে পোনা মাছ অবমুক্ত করা, কারেন্ট জাল প্রতিরোধে ব্যবস্থা গ্রহণ, শিকারীদের হাত থেকে ডিমওয়ালা মাছ রক্ষাসহ নানাভাবে কাজ করা হচ্ছে। প্রাকৃতিক জলাশয়ের পাশাপাশি পুকুরেও বাণিজ্যিকভাবে মাছ করা হয়ে আসছে। এ জেলায় জলাশয়ের পরিমাণ প্রায় ৪৬ হাজার ৭৪৪ হেক্টর। মাছ উৎপাদন হয় ৪৯ হাজার ৫৫০ মেট্রিকটন। চাহিদা ৪৪ হাজার ৫০০ টন। উদ্বৃত্ত ৫ হাজার ৫০ মেট্রিকটন।