বিচার চেয়ে পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তর ঢাকাসহ বিভিন্ন দপ্তরে আবেদন করেছেন ভুক্তভোগি
স্টাফ রিপোর্টার ॥ পরিবার পরিকল্পনা বিভাগ হবিগঞ্জ-এর আওতাধীন পইল ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রের পরিবার কল্যাণ পরিদর্শিকা (এফডব্লিউডি) নূরজাহান বেগম এর বিরুদ্ধে নবজাতকের প্রাণহানির অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় বানিয়াচং উপজেলার কাটখাল গ্রামের মোঃ সেলিম মিয়া প্রতিকার চেয়ে পরিচালক প্রশাসন, পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তর ঢাকা, সচিব, স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগ ঢাকা, মহাপরিচালক, পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তর ঢাকা, মনিটরিং কর্মকর্তা (সিলেট বিভাগ), পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তর ঢাকা, পরিচালক, পরিবার পরিকল্পনা সিলেট, পরিচালক (এমসিএইচ), পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তর ঢাকা, উপপরিচালক, পরিবার পরিকল্পনা হবিগঞ্জসহ বিভিন্ন দপ্তরে আবেদন করেছেন।
লিখিত আবেদনে তিনি উল্লেখ করেন- তার স্ত্রীর ১ম সন্তানের নরমাল ডেলিভারী জন্য সেবা নিতে গেলে পইল ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রের পরিবার কল্যাণ পরিদর্শিকা নূরজাহান বেগম ব্যথায় প্রয়োগকৃত ইনজেকশন প্রদানের মাধ্যমে ব্যথা উঠিয়ে তার স্ত্রীর তলপেটে চাপ প্রয়োগ করে ডেলিভারী করান। ডেলিভারী করানোর সময় নবজাতককে জোরপূর্বক টানা হেঁচড়া এবং পেটে চাপ প্রয়োগের ফলে মাথায় আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে জন্মের পরপরই বাচ্চার খিঁচুনি শুরু হয়। অন্যদিকে বাচ্চার মায়ের ইপিসিওটমি (ডাক্তারি ভাষায়) বা কাঁটাছেড়ার ফলে রক্তক্ষরণসহ শারীকভাবে ভীষণ অসুস্থ হয়ে পড়ে। এদিকে বাচ্চা ও তার মায়ের শারীরিক অবস্থা বেগতিক দেখে বাচ্চার মা ও বাচ্চাকে নাড়ী না কেটে গর্ভফুলসহ নূরজাহান বেগম হবিগঞ্জ ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট সদর হাসপাতালে দ্রুত নিয়ে যেতে বলেন। তার কথামতো তৎক্ষণাৎ হাসপাতালে নেওয়ার পরও নবজাতকের অবস্থার উন্নতি না হওয়ায় উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে সিলেট রেফার করা হয়। অসুস্থ মাকে ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট হবিগঞ্জ সদর হাসপাতালে ভর্তি রেখেই নবজাতককে জীবন বাঁচাতে উন্নত চিকিৎসার্থে কর্তব্যরত ডাক্তারের পরামর্শে সিলেট মা ও শিশু হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করানো হয়। সেখানে ১০ দিন এনআইসিইউতে থাকার পর গত ৪ জুন নবজাতক শিশু মারা যায়। অন্যদিকে মায়ের ইপিসিওটমি বা কাঁটাছেড়ার কারণে শারীরিক অবস্থার অবণতি ঘটে। এখন পর্যন্ত তিনি অসুস্থ অবস্থায় শয্যাশায়ী হয়ে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। সিলেট ইবনে সিনা হাসপাতালে ডাক্তার পরীক্ষা নিরীক্ষা করে তিন মাস পর আবার অপারেশনের মাধ্যমে সেলাই ঠিক করাতে হবে বলে জানান। শুধু তাই নয়, ভবিষ্যতে তার স্ত্রী গর্ভধারণ করলে বাচ্চার ডেলিভারিতে ঝুঁঁকি রয়েছে বলেও জানান কর্তব্যরত চিকিৎসক।
সেলিম মিয়া আবেদনে আরও উল্লেখ করেন, লোকমুখে শুনেছেন নূরজাহান বেগম নরমাল ডেলিভারীতে পারদর্শী। এজন্যই তারা নূরজাহান বেগমের কাছে নিরাপদ মাতৃসেবা ও ডেলিভারি সেবা নিতে শরণাপন্ন হন। নূরজাহান বেগম বেগম তার বাচ্চা জন্মের পূর্বের দিন তাদের সাথে কথাবার্তার ভিত্তিতে হবিগঞ্জ সদর উপজেলার গোপায়া ইউনিয়নের আনন্দপুর এলাকায় তার শশুর বাড়িতে গিয়ে গর্ভবর্তী মায়ের পূর্বের যাবতীয় রিপোর্ট দেখে পইল ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রে নরমাল ডেলিভারী করা যাবে বলে তাদের আশ্বস্থ করেন। ডেলিভারীর ক্ষেত্রে আর কোন পরীক্ষা নিরীক্ষা লাগবে কি না জিজ্ঞাসা করলে তিনি লাগবে না বলে জানান। ডেলিভারী করাতে তিনি ১ হাজার ৫০০ টাকা ফি নেন। পরদিন তার কথামতো স্ত্রীকে পইল ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রে নিয়ে যান সেলিম মিয়া। মূলত, নূরজাহান বেগমের আশ^স্থ ও পরামর্শের কারণেই স্ত্রীকে তার কাছে নরমাল ডেলিভারী করাতে যান সেলিম মিয়া। নূরজাহান বেগম ডেলিভারীর পূর্বে একবারের জন্যও কোন পরীক্ষা নিরীক্ষা (রক্ত ও আলট্রাসনোগ্রাফি) করানোর প্রয়োজনবোধ মনে করেননি।
আবেদনে উল্লেখ করা হয়, নবজাতককে ১০ নিন এনআইসিইউতে রেখে প্রায় দুই থেকে আড়াই লাখ টাকা চিকিৎসা ব্যয় হয়েছে। পাশাপশি তার স্ত্রীর চিকিৎসায় আরো আনুমানিক পঞ্চাশ হাজার ৫০ টাকার প্রয়োজন। এমতাবস্থায়, তার নবজাতকের প্রাণহানির সুষ্ঠু বিচার ও চিকিৎসা খরচের আর্থিক ক্ষতিপূরণ আদায়সহ নূরজাহান বেগমকে শাস্তির আওতায় আনার দাবি জানানো হয়।