এস এম সুরুজ আলী ॥ হবিগঞ্জের আজমিরীগঞ্জ পৌর এলাকার শরীফনগর নতুন বাড়ির বাসিন্দা গোলাম নবীর বয়স এখন ৭৩ বছর। ১৯৭০ সালে নবম শ্রেণীতে পড়া অবস্থায় তার সাথে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দেখা হয়েছিল। এ সময় বঙ্গবন্ধু লঞ্চ দিয়ে হবিগঞ্জের আজমিরীগঞ্জ সফরে এসেছিলেন, একটি জনসভায় নির্বাচনী বক্তব্য দেওয়ার জন্য। কিন্তু বঙ্গবন্ধু যাতে জনসভায় বক্তব্য না দিতে পারেন এজন্য বাধা সৃষ্টি করা হয়। বঙ্গবন্ধুর জনসভায় সাধারণ জনগণ যাতে আসতে না পারেন সেজন্য রাস্তাঘাট বন্ধ করে দেওয়া হয়। এজন্য জনসভায় বঙ্গবন্ধু বক্তৃতা করতে পারেননি। পরে অনেক অনুরোধে মেঘনা রিভার ফোর্সের কোম্পানি কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা ফজলুর রহমান চৌধুরী ও গোলাম নবীর বাবা মহরম আলী বঙ্গবন্ধুকে স্থানীয় মাজার জিয়ারতে নিয়ে যান। এ সময় বঙ্গবন্ধুর সাথে জাতীয় ৪ নেতাসহ আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। মাজার জিয়ারত শেষে বঙ্গবন্ধুর হাতে গোলাম নবীর পিতা প্রতীকি নৌকা তুলে দেন। এ তিনি বাবার পাশে ছিলেন।
গোলাম নবী দৈনিক হবিগঞ্জের মুখকে জানান, বঙ্গবন্ধু আমার বাবাকে ভাই হিসেবে সম্বোধন করেছিলেন। আজমিরীগঞ্জ থেকে নির্বাচনী প্রচারণা শেষে বঙ্গবন্ধু সুনামগঞ্জ চলে যান। এ সময় থেকে আমি বঙ্গবন্ধুর নীতি আদর্শকে ভালবেসে আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে জড়িয়ে পড়ি।
গোলাম নবী জানান, ৭০ এর নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিজয় হলো। ৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধ পরবর্তী ৭৪ সালে এসএসসি পাস করেন গোলাম নবী। তারপর পরিবারের দরিদ্রতার কারণে আর লেখাপড়া করতে পারেননি। সংসারের হাল ধরতে গিয়ে প্রথমে খুচরা চা বিক্রি করেন। পরবর্তীতে চায়ের ব্যবসা করেন। বৃদ্ধ বয়সে স্ত্রী ১ পুত্র ও ১ কন্যা সন্তান নিয়ে অনেক কষ্টে তার জীবন চলছে। এর মধ্যে ৪ বছর পূর্বে তার ঘরের একটি গাভী ষাড় বাচ্চা জন্ম দেয়। ওই ষাড়টি বঙ্গবন্ধু, শেখ নাসের রহমান ও তার বাবা মহরম আলীর নামে কোরবানী দেওয়ার জন্য মানত করেন গোলাম নবী। এ হিসেবে ওই ষাড়টি কোরবানী দিবেন। কোরবানী দেওয়ার পর ষাড়ের মাংস এলাকার গরীব দুঃখী মানুষের মাঝে বিলিয়ে দেবেন।
গোলাম নবী বলেন- আমি আমার বাবা সারা জীবন নিঃস্বার্থভাবে আওয়ামী লীগ করেছি। বিনিময়ে কিছু পাইনি। কয়েকবার বঙ্গবন্ধু কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার সাথে দেখা করতে ঢাকায় গিয়েছিলাম। কিন্তু দেখা করতে পারিনি। শেষ বয়সে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে দেখা করতে চাই।
শুক্রবার দুপুরে সরেজমিনে আজমিরীগঞ্জ পৌর এলাকার শরীফনগর গোলাম নবীর বাড়িতে গিয়ে জানা যায়, যুবক বয়স থেকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভক্ত গোলাম নবী। তাই ছোট থেকেই আওয়ামী লীগের সব মিছিল-মিটিংয়ে অংশগ্রহণ করা ছিল তার নেশা। তিনি এবারও পবিত্র ঈদুল আজহায় বঙ্গবন্ধুর নামে কোরবানির ব্যবস্থা রেখেছেন। আসন্ন ঈদুল আজহায় গরু কোরবানি করবেন বঙ্গবন্ধুর নামে। গোলাম নবী বলেন- যতদিন বেঁচে থাকবো দলের জন্য কাজ করব। তবে কিছু পাওয়ার আশায় না, এসব করি দলকে ভালোবেসে। তবে আমার কোনো কিছু পাওয়ার ইচ্ছে নেই। শুধু একটিই আক্ষেপ, প্রধানমন্ত্রীকে একবার সরাসরি দেখার। স্থানীয় বাসিন্দা আবু বক্কর জানান, আমার বয়স প্রায় ৬০ বছর। আমি ছোট থেকেই দেখছি গোলাম নবী বঙ্গবন্ধুর ভক্ত। দিন রাত দলের জন্য কাজ করেন। দলকে ভালোবাসেন। বঙ্গবন্ধুর প্রতি ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ ঘটাতেই তিনি বঙ্গবন্ধুর নামে কোনবানী দিচ্ছেন। এমন মানুষ এলাকায় আর নেই।