স্টাফ রিপোর্টার ॥ হবিগঞ্জ শহরের নতুন পৌরসভা সংলগ্ন মাদার কেয়ার জেনারেল হাসপাতালে ভুল চিকিৎসার ঘটনায় ডাঃ এস, কে ঘোষসহ ৫ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে। বিচারক মামলাটি আমলে নিয়ে সিভিল সার্জন ও ডিবির ওসিকে তদন্ত প্রতিবেদন দেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। গতকাল বুধবার শায়েস্তানগর সার্কিট হাউজ এলাকার বাসিন্দা (অব:) অফিস সুপার মোঃ শাহাজাহান বাদি হয়ে মাদার কেয়ার হাসপাতালের গাইনী সার্জন ডাঃ এস কে ঘোষ (৬০), ডাঃ বদরুল আলম (৪০), সাবেক সিভিল সার্জন ডাঃ গোলাম রাজ্জাক (৬৫), সাবেক সিভিল সার্জন ডাঃ মোঃ আব্দুল্লাহ (৬৪) ও হাসপাতালের পরিচালক মোঃ সিরাজুল ইসলাম আপনকে (৪৮) আসামি করে মামলাটি দায়ের করেন।
মামলার বিবরণে জানা যায়, শাহজাহানের পুত্রবধূ জান্নাতুল ফেরদৌস নিজেও একজন চিকিৎসক। ২০২২ সালের ৮ মার্চ অন্তঃস্বত্ত্বা অবস্থায় তাকে মাদার কেয়ার জেনারেল হাসপাতাল এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারে নিয়ে গেলে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ওই সময় রোগীর স্বজনদের জানানো হয় তাকে সিজার করতে হবে। তখন ডাঃ এস কে ঘোষ নিজেকে অভিজ্ঞ সার্জন হিসেবে উপস্থাপন করলে তারা সিজারে রাজি হন। কিন্তু সিজারের প্রায় ৪১ দিন পর জান্নাতুল ফেরদৌসের পেটের কাটা জায়গা সংলগ্ন সেলাইয়ের মধ্য দিয়ে পূজ ও রক্ত দেখতে পান। বিষয়টি ডাঃ এস কে ঘোষকে জানালে তিনি ২০ এপ্রিল জান্নাতুল ফেরদৌসকে তার চেম্বারে দেখা করতে বলেন। সেদিন ডাঃ ঘোষ দুইটি ওষুধ লিখে দেন এবং ড্রেসিং করার পরামর্শ দিয়ে বলেন ঠিক হয়ে যাবে। তার পরামর্শে ড্রেসিং করা হয়। কিন্তু অবস্থার উন্নতি না হলে ডাঃ এস কে ঘোষ ১০ দিন পর আবার ড্রেসিং করে সেকেন্ডারী সেলাই দেন। তার পরও পূজ ও পানি পড়তে থাকলে ডাঃ ঘোষ কয়েকদিন ড্রেসিং করে টার্শিয়ারী সেলাই দেন। কিন্তু জান্নাতুল ফেরদৌসের অবস্থার অবণতি হতে থাকলে তাকে সিলেটের আল হারামাইন হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানকার চিকিৎসক অধ্যাপক ডাঃ শামসুন্নাহার বেগম হেনা প্রয়োজনীয় পরীক্ষা নিরীক্ষার পর অপারেশন করে জান্নাতুল ফেরদৌসের পেটের ভিতর থেকে সিজারে ব্যবহৃত ফেলে রাখা ফরেন অবজেক্ট রিমুভ করেন এবং বডি গ্রানুুলোমা সনাক্ত করেন। ওই অধ্যাপকের নিকট ২ মাস চিকিৎসা নিয়েও জান্নাতুলের অবস্থার উন্নতি হয়নি। পরবর্তীতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়, শেখ হাসিনা ন্যাশনাল ইন্সিটিউট বার্ন এন্ড সার্জারীসহ ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা করানো হয়। জান্নাতুলের অবস্থা এতটাই খারাপ হয় যে, কেউ তার সুস্থতার নিশ্চয়তা দিতে পারেননি। পরবর্তীতে বাদির ছেলে জান্নাতুলকে ভারতের চেন্নাই ভেলুর সিএমসি হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে আবারো অপারেশন করে দীর্ঘ ৩ মাস চিকিৎসা নেওয়া হয়। সেখানকার চিকিৎসকরা জানান, জান্নাতুলকে আগামী ১ বছর ভারতের হাসপাতালের ফলোআপে থাকতে হবে। সেখানে ১৯ দিন চিকিৎসা করানো হয়।
মামলায় আরো বলা হয়, জান্নাতুলের চিকিৎসায় ডাঃ ঘোষের অবহেলা ছিলো। এছাড়া ওই হাসপাতালে অপরিস্কার ও সিজার করার মতো প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি না থাকা স্বত্ত্বেও অধিক মুনাফার আশায় সকল আসামিরা জান্নাতুলের সিজার করেন। এ বিষয়ে প্রতিবাদ করলে আসামিরা বাদিকে হুমকি ধামকি প্রদর্শন করেন। জান্নাতুল বর্তমানেও অসুস্থ অবস্থায় দিন কাটাচ্ছেন। আসামিদের এমন ভুল চিকিৎসার কারণে এখন পর্যন্ত তাদের ৩০ লাখ টাকা ক্ষতি হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়।
এ বিষয়ে সিভিল সার্জন নুরুল হক ভূইয়া জানান, এখনও কাগজপত্র পাইনি। পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।