কাবিখা প্রকল্পে সোয়া ২ কোটি টাকা দুর্নীতির অভিযোগ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ হবিগঞ্জের লাখাইয়ে কাজের বিনিময়ে খাদ্য (কাবিখা) কর্মসূচির ৫৪০ মেট্রিক টন চাল যার বাজার মূল্য প্রায় ২ কোটি ১৬ লাখ টাকা দুর্নীতির ঘটনায় এবার উপজেলা চেয়ারম্যানসহ ৬ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে। মঙ্গলবার সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান মো. সিরাজুল ইসলাম বাদি হয়ে হবিগঞ্জের সিনিয়র স্পেশাল জজ ও দায়রা আদালতে মামলাটি দায়ের করেন। মামলায় লাখাই উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট মুশফিউল আলম আজাদ, সাবেক উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মো. আলী নূর, তেঘরিয়া ইউপি চেয়ারম্যান মো. নোমান সারওয়ার জনি, বামৈ ইউপি চেয়ারম্যান মো. আজাদ হোসেন ফুরুক, করাব ইউপি চেয়ারম্যান মো. আব্দুল কদ্দুছ ও বুল্লা ইউপি চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট খোকন চন্দ্র গোপকে বিবাদীভূক্ত করা হয়েছে।
মামলায় বাদিপক্ষের আইনজীবী এম.এ.এ.এম গউছ উদ্দিন জানান, দুর্নীতি দমন কমিশন আইন ও দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনে মামলাটি দায়ের করা হয়েছে। আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে দুর্নীতি দমন কমিশন হবিগঞ্জ কার্যালয়ের উপ-পরিচালককে তদন্তের দায়িত্ব দিয়েছেন।
মামলার বাদি লাখাই ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান মো. সিরাজুল ইসলাম জানান, বিভিন্ন সংবাদপত্রে লাখাই উপজেলার কাবিখা প্রকল্পের দুর্নীতি নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এতে বুঝা যায়, উপজেলা চেয়ারম্যানসহ অন্য আসামীরা এ দুর্নীতির সাথে জড়িত। দেশের সম্পদ এভাবে লুট হতে দেয়া যায় না। তাই একজন সচেতন মানুষ হিসেবে এ মামলা দায়ের করেছি।
মামলার অভিযোগ সম্পর্কে জানতে লাখাই উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট মুশফিউল আলম আজাদের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি সাংবাদিককে বলেন, নির্বাচনকে সামনে রেখে ভোটারদের আমার প্রতি অসন্তুষ্ট করতে মামলাটি দায়ের করা হয়েছে। প্রত্যেক নাগরিকের মামলা করার অধিকার আছে। এ প্রকল্পের সাথে আমার কোন সংশ্লিষ্টতা নেই। তদন্তের মাধ্যমে প্রকৃত সত্য বেরিয়ে আসবে। তিনি বলেন, যে প্রকল্পের কথা বলা হচ্ছে, তা উপজেলা পরিষদের বরাদ্দকৃত প্রকল্প নয়। এটি একটি বিশেষ প্রকল্প। সবকিছু ইউএনও দেখে থাকেন। আমি শুধু কমিটির অনুমোদন দিয়েছি। অথচ মামলায় ইউএনওকে আসামী করা হয়নি। আমার নির্বাচনকে বাঁধাগ্রস্থ করার জন্য এ মামলা দায়ের করা হয়েছে।
মামলার বিবরণে জানা যায়, লাখাই উপজেলা চেয়ারম্যান মুশফিউল আলম আজাদ ও সাবেক উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মো. আলী নূরের সুপারিশে ২০২২-২০২৩ অর্থবছরে ৮টি প্রকল্পে ৫৪০ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ দেয়া হয়। যার মূল্য ২ কোটি ১৬ লাখ টাকা। আসামীরা প্রকল্প গ্রহণ, অনুমোদন, বরাদ্দ গ্রহণ ও প্রকল্প সম্পন্ন হওয়ার ভূয়া কাগজপত্র তৈরি করে টাকা আত্মসাৎ করেন। বাস্তবে ওই প্রকল্পগুলোর কোন অস্তিত্ব নেই। প্রকল্পের যাবতীয় কাগজপত্রাদি তৈরী করে ভূয়া তথ্য যুক্ত করে প্রধান নির্বাহী ব্যক্তি হিসেবে স্বাক্ষর দিয়ে উক্ত টাকা আত্মসাৎ করেছেন।
উল্লেখ্য, এ প্রকল্পের দুর্নীতি নিয়ে এর আগে দু’টি মামলা দায়ের করা হয়েছে। গত ২১ মার্চ উপজেলার বামৈ ইউপি চেয়ারম্যান মো. আজাদ হোসেন ফুরুক ও সাবেক প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মো. আলী নূরসহ ৬ জনের বিরুদ্ধে আদালতে প্রথম মামলা দায়ের হয়। এরপর করাব ইউপি চেয়ারম্যান মো. আব্দুল কদ্দুছ, বুল্লা ইউপি চেয়ারম্যান খোকন চন্দ্র গোপ ও সাবেক প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মো. আলী নূরকে আসামী করে আদালতে আরেকটি মামলা দায়ের করা হয়। এ প্রকল্প নিয়ে তৃতীয় মামলায় উপজেলা চেয়ারম্যান মুশফিউল আলম আজাদকে বিবাদী করা হলো।