স্টাফ রিপোর্টার ॥ অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষকদের জীবদ্দশায় সহযোগিতা ও তাদের কাজের স্বীকৃতিকে সমাজে উপস্থাপন করার এক ব্যতিক্রমী উদ্যোগ নেয় টি আলী স্যার ফাউন্ডেশন। মৌলভীবাজার জেলার আদর্শ শিক্ষকের স্বীকৃতি হিসেবে ৫ জন শিক্ষককে টি আলী স্যার ফাউন্ডেশন সম্মাননা পদক-২০২৪ এ ভূষিত করে সংস্থাটি। এছাড়া মৌলভীবাজার জেলার ১৪ জন শিক্ষককে সম্মাননা দেয় ফাউন্ডেশনটি। দুই ক্যাটাগরিতে এই সম্মনানা দেওয়া হয়। মঙ্গলবার মৌলভীবাজার সদর উপজেলার আলী আমজাদ সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের হলরুমে জমকালো অনুষ্ঠানের মাধ্যমে তাদেরকে সম্মানিত করা হয়। অনুষ্ঠানের শুরুতেই পবিত্র কোরআন থেকে তেলাওয়াত করেন ফেঞ্চুগঞ্জ ফরিজা খাতুন উচ্চ বিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মো. ময়ুব আলী ও গিতা পাঠ করেন অরপিতা সুত্রধর। অনুষ্ঠানে উপস্থত গুণী অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষকদের ফুল দিয়ে বরণ করেন স্কুলে সিনিয়র শিক্ষক আব্দুল মতলিব ও দশম শ্রেণির ছাত্রী তাহিহা তাবাসুম। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন মৌলভীবাজার জেলা শিক্ষা অফিসার মোহাম্মদ ফজলুর রহমান। আলী আমজাদ সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো: মইনুল হকের সভাপতিত্বে ও সিনিয়র শিক্ষক বাবুল উদ্দিন খান এর পরিচালনায় অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন টি আলী স্যার ফাউন্ডেশনের বাংলাদেশ সমন্বয়ক, সিলেট সরকারি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও সিলেট বিভাগ বাংলাদেশ মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতির সভাপতি কবির খান। অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য দেন অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক মো. আব্দুল করিম, আলহাজ্ব মোহাম্মদ মাশুক, মো. আমজদ আলী, মো. সফিকুর রহমান, ভিডিও কলে নিহারেন্দ্র ভট্টাচার্য্য, খুরশীদ উল্লাহর পক্ষে ছেলে রাসেল আব্দুল। পরে সম্মাননাপ্রাপ্ত ১৪ শিক্ষক ও তাদের পরিবারের হাতে বায়োগ্রাফি তুলে দেওয়া হয়। এর মধ্যে ৫ জনকে দেওয়া হয় টি আলী স্যার ফাউন্ডেশন সম্মাননা পদক ২০২৪। সম্মাননাপ্রাপ্ত শিক্ষকরা হলেন- মোহাম্মদ আজিম উদ্দিন, বড়লেখা উপজেলার ছিদ্দেক আলি উচ্চ বিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত সহকারি শিক্ষক। আলহাজ্ব মোহাম্মদ মাশুক, কুলাউড়া উপজেলার ভুকশিমইল স্কুল এন্ড কলেজের প্রাক্তন প্রতিষ্ঠাতা প্রধান শিক্ষক। আবুল ইসলাম, জুড়ী উপজেলার সাগরনাল উচ্চ বিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক। মো. সফিকুর রহমান, মৌলভীবাজার সদর উপজেলার আজমনি বহু পাক্ষিক উচ্চ বিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত সহকারী শিক্ষক। নিহারেন্দু ভট্টাচার্য্য, কমলগঞ্জ উপজেলার মুন্সীবাজার কালী প্রসাদ উচ্চ বিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক।
৯ জন শিক্ষককে দেওয়া হয় টি আলী স্যার ফাউন্ডেশন বিশেষ সম্মাননা পদক। সম্মাননাপ্রাপ্ত শিক্ষকরা হলেন- মো. খুরশীদ উল্লাহ, মৌলভীবাজার জেলার কুলাউড়া উপজেলার কানিহাটি বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক। দ্বীপেন্দ্র চন্দ্র ভট্টাচার্য, শ্রীমঙ্গল ভিক্টোরিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত সহকারী শিক্ষক। আব্দুল হামিদ, শ্রীমঙ্গল উপজেলার দি বার্ডস রেসিডেনসিয়েল মডেল স্কুল এন্ড কলেজের অবসরপ্রাপ্ত সহকারী শিক্ষক। আব্দুল করিম, রাজনগর উপজেলার রাজনগর পোর্টিয়াস উচ্চ বিদ্যালয়ের ধর্মীয় শিক্ষক (হেড মাওলানা)। হিমাংশু মোহন পাল, জুড়ী উপজেলার রাঘনা বটুলী উচ্চ বিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত সহকারী শিক্ষক। নিরঞ্জন চন্দ্র দাস, বড়লেখা উপজেলার ফকিরবাজার উচ্চ বিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত সহকারী শিক্ষক। মো. আমজদ আলী, কমলগঞ্জ উপজেলার ভান্ডারীগাঁও উচ্চ বিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত সহকারী প্রধান শিক্ষক। মো. ফজলুর রহমান, মৌলভীবাজার সদরের জগৎসী গোপাল কৃষ্ণ উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজের অবসরপ্রাপ্ত সহকারী প্রধান শিক্ষক। নিরঞ্জন কুমার দেব, রাজনগর উপজেলার মেহেরুন্নেছা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক। এছাড়া সম্মননাপ্রাপ্ত প্রত্যেক শিক্ষককে আর্থিক অনুদান দেওয়া হয়।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে মৌলভীবাজার জেলা শিক্ষা অফিসার মোহাম্মদ ফজলুর রহমান বলেন, শিক্ষা জাতির মেরুদন্ড। আর শিক্ষকরা সেই মেরুদন্ড তৈরির শ্রম শিল্পী। একটি শিশু ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর থেকে পরিবারের সদস্যদের কাছ থেকে যেমন স্নেহ-ভালোবাসা পেয়ে বড় হয়, তেমনি শিশুর ভবিষ্যৎ লক্ষ্যে পৌঁছাতে শিক্ষকরা আলোর দিশারি হয়ে কাজ করেন।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে সিলেট সরকারি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক এবং টি আলী স্যার ফাউন্ডেশনের বাংলাদেশ সমন্বয়ক কবির খান বলেন, মা-বাবার পর শিক্ষকরাই শিক্ষার্থীদের জীবনে সবচেয়ে বেশি প্রভাব বিস্তার করেন। একজন ভালো শিক্ষকই শিক্ষার্থীদের উজ্জ্বল ভবিষ্যতের জন্য সঠিক পথ দেখাতে পারেন। জীবনে সফলতার পেছনে যার দক্ষতা ও দিকনির্দেশনা থাকে তিনি হচ্ছেন শিক্ষক। একজন শিক্ষককে প্রথমে একজন ভালো মানুষ হতে হবে। তজম্মুল আলী একজন মানুষ গড়ার কারিগর। ভালোবেসে তাঁর অগণিত ছাত্রছাত্রী নাম রাখেন টি আলী স্যার। টি আলী স্যার সিলেট জেলার বিয়ানীবাজার উপজেলার বৃহত্তর জলঢুপে জন্মগ্রহন করেন। তিনি ১৯৪৭ সাল থেকে ১৯৭৮ সাল পর্যন্ত দীর্ঘ ৩১ বছর হবিগঞ্জ সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেন। শিক্ষকতার পাশাপাশি হোস্টেল সুপারের মত গুরু দায়িত্বও পালন করেন। ২০১৯ সালে সিলেট জেলার বিয়ানীবাজার উপজেলার কৃতি সন্তান এই শিক্ষকের নামে প্রতিষ্ঠিত হয় যুক্তরাজ্য ভিত্তিক চ্যারিটি সংস্থা টি আলী স্যার ফাউন্ডেশন। মূলত অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষকদের সম্মাননা ও আর্থিকভাবে পিছিয়ে পড়া শিক্ষকদের সহযোগিতার উদ্দেশ্য নিয়ে প্রতিষ্ঠিত হয় ফাউন্ডেশনটি। আদর্শবান শিক্ষক আর্থিক দিক দিয়ে পিছিয়ে থাকা শিক্ষকদের সন্ধান অথবা ব্যক্তিত্ব সম্পন্ন রুচিশীল অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক যাদের খোঁজ খবর অনেকে রাখেন না তাদেরকে খোঁজে কাজের স্বীকৃতি প্রদান করে ফাউন্ডেশনটি।
প্রসঙ্গত, টি আলী স্যার ফাউন্ডেশন ২০২০ সালে সিলেট বিভাগে আদর্শ শিক্ষকদের নিয়ে কাজ শুরু করে। ফাউন্ডেশনটি আদর্শ শিক্ষকদের সম্মাননা পদকে মনোনয়নে একটি বোর্ড গঠন করে। এই মনোনয়ন বোর্ডের প্রধান টি আলী স্যার ফাউন্ডেশনের বাংলাদেশ সমন্বয়ক, সিলেট সরকারি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও সিলেট বিভাগ বাংলাদেশ মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতির সভাপতি কবির খান। বিভাগের চার জেলার মধ্যে মৌলভীবাজার জেলার প্রত্যেক উপজেলায় অবসরপ্রাপ্ত দুইজন আদর্শ শিক্ষককে সম্মাননা পদকে মনোনয়ন জরিপ চালিয়ে যায়। এরই ধারাবাহিকতায় মনোনয়ন বোর্ড মৌলভীবাজার জেলার ৭ উপজেলার অবসরপ্রাপ্ত আদর্শ শিক্ষকের সম্মাননার স্বীকৃতি হিসেবে টি, আলী স্যার ফাউন্ডেশন সম্মাননা পদক ২০২৪ সালের জন্য ১৪ জন মনোনয়নপ্রাপ্ত শিক্ষকদের নামের তালিকা প্রকাশ করে। এছাড়া তাদের জীবন বৃত্তান্ত সংগ্রহের পর অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষকদের বর্ণাঢ্য জীবনী প্রকাশ করে। মনোনয়নপ্রাপ্ত শিক্ষকদের প্রত্যেকের জীবনী সুন্দর ফ্রেমবন্দি করে অনুষ্ঠানে তাদের প্রত্যেকের হাতে তুলে দেওয়া হয়। টি আলী স্যার ফাউন্ডেশন সম্মাননা পদক-২০২৫ আগামী বছর সুনামগঞ্জ জেলার গুণী শিক্ষকদের জীবিত অবস্থায় সম্মাননা দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে। সে অনুযায়ী সংস্থাটি তাদের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে।