নুর উদ্দিন সুমন ॥ মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক চুনারুঘাটের হযরত সৈয়দ শাহ নাসির উদ্দিন সিপাহসালার এর মাজার জিয়ারত করেছেন। শুক্রবার বিকেলে সিলেট থেকে সড়ক পথে তিনি চুনারুঘাট উপজেলায় অবস্থিত নাসির উদ্দিন সিপাহসালার এর মাজার জিয়ারত করতে আসেন। পরে তিনি স্থানীয় সংসদ সদস্যসহ প্রশাসনের বিভিন্ন কর্মকর্তাদের সাথে শুভেচ্ছা বিনিময় এবং সরকারের বিভিন্ন উন্নয়ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন। তিনি জানান, একান্ত ব্যক্তিগতভাবে মাজার জিয়ারত করতে এসেছেন। এসময় উপস্থিত ছিলেন সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন, জেলা প্রশাসক মোছাঃ জিলুফা সুলতানা, পুলিশ সুপার আক্তার হোসেন, উপজেলা চেয়ারম্যান আলহাজ্ব আব্দুল কাদির লস্কর, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আয়েশা আক্তার, সহকারী কমিশনার (ভূমি) মাহবুব আলম মাহবুব, ওসি হিল্লোল রায়, মাজারের খাদেম সৈয়দ সফিক আহমেদ চিশতী, নজরুল ইসলাম চিশতী ও সুহেল আহমেদ চিশতি, চুনারুঘাট প্রেসক্লাব সভাপতি মোঃ জামাল হোসেন লিটনসহ মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযোদ্ধা সন্তান কমান্ড নেতৃবৃন্দ।
উল্লেখ্য, সিলেটে চিরনিদ্রায় শায়িত হযরত শাহ জালাল (রঃ) ইয়ামনী ও প্রধান সেনাপতি তরফ রাজ্য বিজয়ী বীর পুরুষ সিপাহ সালার হযরত শাহ সৈয়দ নাসির উদ্দিন (রঃ) মদীনা শরীফে জন্মগ্রহণ করেন এবং তিনি বাগদাদ শরীফে বসবাস করতেন। প্রাচীন ইতিহাসের আলোকে তার জন্ম আনুমানিক ১২৫০ খ্রিস্টাব্দে। বাগদাদ থেকে দিল্লীতে এসে সুলতান আলাউদ্দিন খিলজীর অধীনে ফৌজ বিভাগে যোগদান করেন। দিল্লীর সম্রাট তার কামালিয়াতের পরিচয় পেয়ে শাহী সৈন্য বাহিনীর নেতৃত্বে গ্রহণ ক্রমে সিলেট অঞ্চলকে বিজয়ের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেওয়ার অনুরোধ করেন। সিলেট বিজয়ী হযরত শাহ জালাল (রঃ) সাথে পথিমধ্যে মোলাকাত হয় এবং মুসলমানদের উপর গৌড় গোবিন্দের অত্যাচারের সংবাদে ব্যথিত হয়ে শাহী সৈন্যদের সঙ্গে যোগদান করতে সম্মতি প্রকাশ করেন। আল্লাহর রহমতে ৭০৩ হিজরী ১৩০৩ খ্রিস্টাব্দে সিলেট অঞ্চলকে বিজয় করেন। পরে অত্যাচারী রাজা আচক নারায়নকে সমুচিত উপযুক্ত শিক্ষা দিতে একদল মুজাহিদ বাহিনী সহ শাহী সৈন্যদের নেতৃত্ব দান করেন বাংলার আসামের বিভিন্ন অঞ্চলে প্রাচীন তরফের রাজধানীর মূল পাঁচটি মুসলমান পরিবার বংশ মর্যাদায় অত্যন্ত গৌরবান্বিত, যা লস্করপুর হাবেলী, সুলতানশী হাবেলী, দাউদনগর (বড় হাবেলী, মধ্যহাবেলী ও ছোট হাবেলী), নরপতি হাবেলী ও পৈল হাবেলী। পরবর্তীকালে বিশাল তরপ রাজ্য ভাগবাটোয়ারা হয়ে পরগনা সৃষ্টি হয়। এর পর মোগল সম্রাট আমলে হবিগঞ্জ সদর উপজেলার লস্করপুর সাহেব বাড়ী তরফের রাজধানী দেওয়ানী ভার অর্পিত হয়। এসময় তরফ হতে ১২টি পরগণা খারিজ হয়ে যায়। অতপর সিপাহ সালার হযরত শাহ সৈয়দ নাসির উদ্দিন (রঃ) তরফ রাজ্যের শাসনকর্তা নিযুক্ত হয়ে রাজধানীর হবিগঞ্জ জেলার চুনারুঘাট উপজেলার মুড়ারবন্দ দরবার শরীফে স্থান হিসেবে সমগ্র দেশ বিদেশেই সুপরিচিত। আর এই মুড়ারবন্দের পবিত্র স্থানে চিরনিদ্রায় পূর্ব-পশ্চিমে শায়িত রয়েছেন প্রধান সেনাপতি তরফ রাজ্য বিজয়ী সিপাহ সালার (মদনী) হযরত শাহ্ সৈয়দ নাসির উদ্দিন (রঃ), হযরত সৈয়দ শাহ ইসরাইল ওরফে শাহ বন্দেগী (রঃ), হযরত সৈয়দ শাহ ইলিয়াছ ওরফে কুতুবুল আউলিয়া (রঃ), বন্দেগী শাহ সৈয়দ দাউদ (রঃ) সহ ১২০ জন ওলি-আউলিয়া। সিপাহ সালার হযরত শাহ সৈয়দ নাসির উদ্দিন (রঃ) তার জীবনে কোন দিন ফজরের নামাজ কাযা হয়নি। তিনি গৌড় গোবিন্দের লৌহ ধনুতে ছিলা সংযোগ করেছিলেন। তার মৃত্যুর পর মুসলমানদের দাফনের নিয়ম অনুযায়ী উত্তর দক্ষিণে না দিয়ে পূর্ব পশ্চিমে দেয়ার জন্য বলে গিয়েছিলেন। কিন্তু তৎকালীন স্থানীয় ওলামায়ে কেরামগণ তা না করে উত্তর দক্ষিণে দাফন করেন। কিন্তু দেখা গেল দাফনের পর কবর স্থান থেকে ৪০ কদম দূরে আসা মাত্রই সিপাহ সালার (মাদানী) হযরত শাহ সৈয়দ নাসির উদ্দিন (রঃ) এর কথামতো মাজার বিকট এক শব্দের পর পূর্ব-পশ্চিম হয়ে যায়। তাই সিপাহসালার (মাদানী) হযরত শাহ সৈয়দ নাসির উদ্দিন (রঃ) এর মাজার মুড়ারবন্দে পূর্ব-পশ্চিমে রয়েছে। সৈয়দ নাসির উদ্দিন (রঃ) সহ তার সঙ্গীরা মুড়ারবন্দে অতিমনোরম প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যে ঘেরা ৫ শতাধিক জামগাছের সুশীতল ছায়ায় শায়িত আছেন। সিলেট-ঢাকা মহাসড়কের শায়েস্তাগঞ্জ গোলচত্ত্বর নতুনব্রীজ হতে চুনারুঘাট উপজেলার শ্রীকুটা বাসস্ট্যান্ড এর পূর্বদিকে রয়েছে মুড়ারবন্দ সিপাহসালা সৈয়দ নাসির উদ্দিন (রঃ) এর মাজারের প্রথম গেইট। এর প্রায় ১ কিলোমিটার পূর্বে মুড়ারবন্দ মাজারে প্রবেশ করতে ৩টি গেইট রয়েছে। প্রতি বছর ১৩, ১৪ ও ১৫ জানুয়ারী তিন দিনব্যাপী পবিত্র বার্ষিক ওরস অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে।