এগারো মামলা ও আয়কর ফাঁকি ॥ কয়েক কোটি টাকার সম্পদ থাকলেও কোন ট্যাক্স দিচ্ছেন না সরকারকে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ হলফনামায় সম্পদ এবং মামলার তথ্য গোপন করায় আজমিরীগঞ্জ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী আলী আমজাদ তালুকদার এর মনোনয়নপত্র অবৈধ ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন। একজন চেয়ারম্যান প্রার্থীর এমন কা-ে ভোটারদের মাঝেও তাকে নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে।
অনুসন্ধানে জানা যায়, আলী আমজাদ তালুকদার ১১টি মামলার আসামী; কিন্তু নির্বাচনী হলফনামায় তিনি উল্লেখ করেছেন তাঁর বিরুদ্ধে মাত্র একটি মামলা রয়েছে। অন্যদিকে, আজমিরীগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন স্থানে আলী আমজাদ তালুকদারের কোটি টাকার সম্পদ থাকলেও হলফনামায় স্বর্ণালঙ্কার ছাড়া মাত্র ৩ লাখ ৩ হাজার টাকা সম্পদের কথা উল্লেখ করেছেন তিনি। গত বুধবার মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাইকালে নির্বাচন কমিশন আলী আমজাদ তালুকদারকে এসব বিষয়ে প্রশ্ন করলে তিনি সদুত্তর দিতে ব্যর্থ হন। পরে জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ও রিটার্নিং কর্মকর্তা মোঃ সাইদুর রহমান তার মনোনয়নপত্র অবৈধ ঘোষণা করেন।
হলফনামায় উল্লেখ করা স্বর্ণালঙ্কার ছাড়া আলী আমজাদ তালুকদারের মোট সম্পদের পরিমাণ মাত্র ৩ লাখ ৩ হাজার টাকা। ৫ ভড়ি স্বর্ণালঙ্কার রয়েছে উপহারস্বরূপ। বাৎসরিক আয় দেখিয়েছেন মাত্র দেড় লাখ টাকা।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, আলী আমজাদ তালুকদারের অন্তত কয়েক কোটি টাকার সম্পদ রয়েছে। উল্লেখযোগ্য সম্পদের তালিকায় রয়েছে দুইটি বাজারে কোটি টাকা মূল্যের দুটি বহুতল ভবন, দুই তলা বিশিষ্ট বাসভবন, পশ্চিমভাগে তিন তলা বিশিষ্ট নির্মাণাধীন ভবন, বড় আকারে মহিশের খামার এবং দুটি বৃহৎ অকারের ফিশারী।
দুই শতাধিক বিঘা কৃষি জমি থাকলেও হলফনামায় কৃষিখাতে বাৎসরিক আয় দেখিয়েছেন মাত্র ১ লাখ ২০ হাজার টাকা। অথচ ওই জমি বর্গা দিলেও এখান থেকে বাৎসরিক আয় হওয়ার কথা অন্তত ১০ লাখ টাকা।
নির্বাচন কমিশন সূত্র জানায়, আলী আমজাদ তালুকদার তার আয়কর ফাইলে শূণ্য রিটার্ণ দাখিল করেছেন; অর্থাৎ এক টাকাও সম্পদের ট্যাক্স দেননি। এভাবে দীর্ঘদিন ধরে সরকারের ট্যাক্স ফাঁকি দিচ্ছেন তিনি। এত সম্পদ থাকার পরও আইন অনুযায়ী সরকারকে ট্যাক্স না দেওয়ার বিষয়টিও বেআইনী।
এ বিষয়ে হবিগঞ্জের জ্যেষ্ঠ এক আয়কর আইনজীবী বলেন, এত সম্পদ থাকার পরও কোন ট্যাক্স না দেওয়া আইন পরিপন্থী কাজ। নির্বাচন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ চাইলে আলী আমজাদ তালুকদারকে আইনের আওতায় আনতে পারে।
আলী আমজাদ তালুকদার মাত্র ৩ লাখ টাকার মালিক হলে নির্বাচনে কিভাবে বিপুল পরিমাণ টাকা খরচ করবেন এমন প্রশ্ন রেখে প্রতিদ্বন্দ্বি আরেক প্রার্থী বলেন, কোন প্রার্থী যদি নির্বাচনে জয়ী হওয়ার আগেই কোটি টাকার সম্পদ গোপন করে তাহলে তার পক্ষে অন্তত জনগণের আমানত রক্ষা করা কঠিন হবে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন ভোটার বলেন, উপজেলা চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী আলী আমজাদ তালুকদারের মনোনয়নপত্র অবৈধ ঘোষণা হওয়ার পরও তিনি এলাকায় প্রচার করছেন তার প্রার্থীতা বৈধ। শতশত মোটরসাইকেল নিয়ে তিনি এমন প্রচারণা চালাচ্ছেন। তারা এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।
এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনের এক কর্মকর্তা বলেন, ১১টি মামলার তথ্য ও সম্পদের পরিমাণ গোপন করা একজন প্রার্থীর ক্ষেত্রে বৃহৎ আকারের অনিয়ম। এ কারণে হবিগঞ্জের বিভিন্ন নির্বাচনে একাধিক প্রার্থী আপীলেও মনোনয়নপত্র ফিরে না পাওয়ার নজির রয়েছে। বাকীটা আদালতের এখতিয়ার।
এ ব্যাপারে উপজেলা চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী আলী আমজাদ তালুকদারের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমার কোটি টাকার সম্পদ থাকলে এটি আমার বিষয়। এ ব্যাপারে কোন কথা বলতে চাই না। আমি প্রার্থীতা ফেরৎ পাওয়ার জন্য আপীল করেছি।