ইউএনও বললেন যারা বালু বিক্রি করছে তাদের বিরুদ্ধে শীঘ্রই ব্যবস্থা নেয়া হবে
নবীগঞ্জ প্রতিনিধি ॥ নবীগঞ্জ উপজেলার কুশিয়ারা নদীর চর কেটে বালু-মাটি বিক্রি করছে স্থানীয় প্রভাবশালীরা। উপজেলার দীঘলবাক ইউনিয়নের চরগাঁও ও কসবা গ্রামে কোন ধরণের ইজারা ছাড়া বেআইনীভাবে চলছে চর কেটে বালু উত্তোলন। বছরের পর বছর এমনটা চলতে থাকলেও কোনভাবেই তা বন্ধ করা যাচ্ছে না। কয়েকজন প্রভাবশালী ব্যক্তি পুলিশ ও ভূমি অফিসকে ম্যানেজ করে লোপাট করছেন সরকারি সম্পত্তি। আশঙ্কা নদীর চর কাটার ফলে বন্যার দাপটে দীঘলবাক ইউনিয়ন আরো ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির মুখে পড়বে।
এ ব্যাপারে স্থানীয়দের সাথে কথা বলতে চাইলে প্রভাবশালীদের ভরে তারা প্রথমে এ প্রতিবেদকের সাথে কথা বলতে অস্বীকৃতি জানান। পরে নাম না প্রকাশের শর্তে জানান, ইনাতগঞ্জ ভূমি অফিস ও স্থানীয় পুলিশ ফাঁড়িকে ম্যানেজ করেই কুশিয়ারা নদীর চর কেটে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। আর সেই বালু বিক্রি হচ্ছে বিভিন্ন কোম্পানী ও ব্যক্তির কাছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, প্রতিরাত ৮টা থেকে গভীর রাত পর্যন্ত ট্রাক ও ট্রাক্টর বোঝাই করে মাটি ও বালু পৌঁছে দেয়া হয় গন্তব্যে। এসব ট্রাক ও ট্রাক্টর মাটি ও বালু বোঝাই করে ইনাতগঞ্জ বাজার দিয়ে চলাচল করে। ইনাতগঞ্জ বাজারের সরু রাস্তাগুলো ওইসব ট্রাক-ট্রাক্টরের দখলে রয়েছে। যে কারণে রাস্তায় যানজট লেগেই থাকে। যে কারণে দুর্ঘটনা ঘটছে। সম্প্রতি ওই বাজারে যানজটের জন্য ব্যাটারিচালিত অটোরিক্সার ধাক্কায় এক সন্তানের জননীর মর্মান্তিক মৃত্যু হয়।
অনুসন্ধানে জানা যায়, বছরের পর বছর ধরে দীঘলবাক ইউনিয়নের চরগাঁও ও কসবা গ্রামের কয়েকজন প্রভাবশালীর নেতৃত্বে সংঘবদ্ধ চক্র কুশিয়ারা নদীর ঘাট এলাকা থেকে মাটি ও বালু উত্তোলন করছে। আর এ কাজে ৭০-৮০ জন শ্রমিক নিয়োগ দিয়েছে ওই চক্রটি। শ্রমিকরা নদীর চর কেটে ট্রাক ও ট্রাক্টরে বালু ও মাটি তুলে দিচ্ছেন। এরপর এগুলো চলে যাচ্ছে বিভিন্ন কোম্পানি, ইটভাটা ও ব্যক্তির কাছে। নদীর চর থেকে প্রতি ট্রাক বালুর মূল্য রাখা হচ্ছে ৫শ’ থেকে ৬শ’ টাকা।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় এক ব্যক্তি জানান, যারা চর কাটার সাথে যুক্ত রয়েছেন, তারা ইতোমধ্যেই আঙ্গুল ফুলে কলাগাছে পরিণত হয়েছেন। নবীগঞ্জ উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ওই চরে খুব একটা অভিযান চালানো হয় না। আবার অভিযান পরিচালিত হলেও যারা নেপথ্যে তা আগেভাগেই গাঁ ঢাকা দেন।
মাটি ও বালু উত্তোলনে কাজ করা ষাটোর্ধ্ব এক শ্রমিক নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, ‘তুমরা কেনে আইছো। পত্রিকাত লেইখ্যা কিতা অইবো। বড় সাব ইখানো আওনের আগেওই আমরা খবর ফাইলাই।’ কিন্তু কিভাবে অভিযানে পূর্বেই খবর পাওয়া যায়, তা জানাতে ওই শ্রমিক অস্বীকৃতি জানান।
ওই এলাকার সাধারণ মানুষদের সাথে কথা বলে জানা যায়, দীঘলবাক ইউনিয়নটি বন্যাকবলিত এলাকা হিসেবে পরিচিত। গত বছর শতাধিক ঘর-বাড়ি পানির নিচে তলিয়ে যায়। ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা হওয়া সত্ত্বেও প্রকাশ্যে নদীর চর কেটে ফেলা হচ্ছে। যা নিয়ে স্থানীয়দের মধ্যে ক্ষোভ রয়েছে। কিন্তু এ কাজের সাথে জড়িতরা সকলেই প্রভাবশালী। আবার পুলিশ ও প্রশাসনের ছত্রছায়াও রয়েছে।
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) হবিগঞ্জ জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক তোফাজ্জল সোহেল বলেন, ‘নদীমাতৃক আমাদের এই বাংলাদেশ। কিছু অসাধু লোকজনের কারণে নদীর চর কেটে বালু বিক্রি করার উৎসব চলছে। কুশিয়ারা নদীর একটি অংশ নবীগঞ্জের বন্যা কবলিত এলাকা হিসেবে চিহ্নিত। একের পর এক নদীর চর কেটে বালু বিক্রি করার ফলে এলাকাটি বন্যা কবলিত এলাকা হিসেবে আরো বেশি ঝুকিঁপূর্ণ হয়ে উঠছে। তাই দ্রুত চর কাটা বন্ধে প্রশাসন সোচ্চার হবে বলে আশা করছি। তা না হলে সমূহ বিপদ।’
নবীগঞ্জ উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) উত্তম কুমার দাশ চর কেটে বালু বিক্রির সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, ‘এখানে একাধিক পক্ষ কুশিয়ারা নদীর তীর থেকে অবৈধভাবে মাটি-বালু বিক্রি করে আসছে। এ ব্যাপারে কিছুদিন পূর্বে আমরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করি এবং বালুর স্তুপ জব্দ করাসহ মোবাইল কোর্টে কয়েকজনকে সাজা ও জরিমানা করি। অভিযান অব্যাহত থাকবে।’
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মহিউদ্দিন বলেন, ‘বালু উত্তোলনের খবর পেয়ে তাৎক্ষনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করে নদীর চর থেকে বালু কাটা ও বিক্রি বন্ধ করা হয় এবং বালু মাটি জব্দ করা হয়। যারা বালু বিক্রি করছে তাদের সবার বিরুদ্ধে শীঘ্রই নিদিষ্ট বালু ও মাটি ব্যবস্থাপনা আইন ২০১০ এর আওতায় ব্যবস্থা নেয়া হবে। সরকারকে রাজস্ব না দিয়ে যারা এ ধরণের কার্যক্রম করে তাদের বিরুদ্ধে আমাদের অবস্থান অত্যন্ত শক্ত।’