আব্দুল হালীম ॥ পাখির কলকাকলিতে মুখরিত হয়ে উঠে আশপাশের এলাকাগুলো। এ সুযোগে সৌখিন ও পেশাদার পাখি শিকারিরা বন্দুক, বিষটোপ, জাল ও বিভিন্ন ধরনের ফাঁদ পেতে এসব পাখি, গুই সাপ, বাশকাটা ও হরিণ নিধন করছে প্রতিনিয়ত। পাখি শিকার করা আইনত নিষিদ্ধ হলেও এ ব্যাপারে কর্তৃপক্ষ কোনো উদ্যোগ নিচ্ছে না বলে অভিযোগ স্থানীয়দের।
হবিগঞ্জের চুনারুঘাট উপজেলার শ্রীবাড়ি চা বাগানের পাশে ‘জঙ্গল বাড়ি’ এলাকায় শিকারীরা মেতে উঠেছে পাখি নিধনের মহোৎসবে। হাজার হাজার পাখির কলকাকলীতে এ অঞ্চলের ছোট ছোট বিল-ঝিলগুলো মুখরিত হয়ে উঠে। পাখির কিচির মিচির শব্দে আনন্দঘন পরিবেশকে করে তোলে আরও প্রাণবন্ত। কিন্তু শিকারিরা সারা রাত ধরে নিধন করা পাখি ও হরিণ অবাধে বিক্রি করছে স্থানীয় হাটবাজারে। জঙ্গলে থাকা বালি হাঁস, জলপিপি, কোম্বডাক, সরালী কাস্তে চাড়া, পাতাড়ি হাঁস, কাঁদা খোচা, হুরহুর, খয়রা, সোনা রিজিয়া, হরিণসহ রয়েছে নানা প্রজাতির প্রাণী। পাখিরা শুধু প্রকৃতির শোভা বর্ধনই করে না, ভারসাম্যও রক্ষা করে। পোকামাকড় খেয়ে এরা কৃষকের উপকার করে। বন বিভাগ সূত্র জানায়, ১৯৭৪ সালে বন্য প্রাণি রক্ষা আইন ও ২০১২ সালে বন্য প্রাণি সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা আইনে দন্ডের বিধান রয়েছে। এতে বলা হয়েছে, পাখি নিধনের সর্বোচ্চ শাস্তি এক বছর জেল, এক লাখ টাকা দন্ড বা উভয় দন্ডে দন্ডিত। একই অপরাধের পুনরাবৃত্তি হলে অপরাধীর দুই বছরের জেল, দুই লাখ টাকা জরিমানা বা উভয় দন্ডের বিধান রয়েছে। কিন্তু বাস্তবে এ আইনের কোনো প্রয়োগ হচ্ছে না।
এদিকে রেমা-কালেঙ্গার রেঞ্জের রশিদপুর এলাকার ৫নং গ্যাস ফিল্ডের সামনে হাতিমারা বাগানের ভেতর থেকে বাঁশ পাচার হচ্ছে প্রতিদিন।
এ ব্যাপারে জঙ্গলবাড়ি এলাকার খোরশেদ মিয়া জানান, এখানে ৩০/৪০ বছর যাবত পাখি দেখে শুনে রাখতেছি। কিন্তু এখন পাখি শিকার চলছে। পাশ^বর্তী রানিগাঁও এলাকার কিছু মানুষ নানান ভাবে পাখি শিকার করছে। ২ বছর আগে পাখি শিকার নিয়ে মাতামাতি করছিলাম। তখন আমার জিপ গাড়িটি ভেঙ্গে ফেলে। এনিয়ে সামাজিক বিচার এমনকি চুনারুঘাট থানায় মামলাও করেছিলাম। এমনকি গাড়িটি ভাঙ্গারীর কাছে বিক্রি করতে হয়েছে। এখন আবার সেই আগের মতো শুরু করে দিয়েছে।
এ ব্যাপারে চুনারুঘাট উপজেলার রানিগাও ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান রিপন জানান, আমাদের এলাকার কিছু লোক এই সমস্ত কাজ করে। তবে তারা সামাজিকভাবে বিচ্ছিন্ন এলাকা থেকে। তিনি বলেন পাখি শিকার করা অপরাধ। এগুলো দেখে-শুনে রাখি আমরা।
কামাইছড়া চা বাগানের শ্রমিক পাখি প্রেমিক রবি কোস্টা জানান, এই এলাকায় হরিণ, গুইসাপ, সাপ, পাখি ধরে শিকারীরা। এ শিকারীর থাবা থেকে এলাকাকে বাঁচাতে হবে। আর পোকা-মাকড় খেয়ে পাখি পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করে। পাখি ধরামারা ও ক্রয়-বিক্রয় আইনত দন্ডনীয় অপরাধ। পাখি আমাদের জীবনের জন্য অত্যন্ত জরুরী। পাখি বাঁচলে মানুষ বাঁচবে।
এ ব্যাপারে সাতছড়ি বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্যের রেঞ্জার আল আমিন বলেন আমি ও হবিগঞ্জের বনবিভাগের উপ-পরিচালক তৌহিদুল ইসলামকে সাথে নিয়ে ঘটনাস্থলে এসেছি। মূলত বিভাগীয় বন কর্মকর্তার নির্দেশেই এখানে আসা। বাশকাটা, পাখিসহ বন্যপ্রাণী নিধনের ব্যাপারে অভিযোগ পেয়েই আমরা এসেছি। সকল অভিযোগের সত্যতা পেয়েছি। এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এ ব্যাপারে চুনারুঘাট-মাধবপুরের এমপি ও বেসামরিক বিমান ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী এডভোকেট মাহবুব আলী বলেন, পাখিসহ সকল বন্যপ্রাণী নিধন বন্ধ করা হবে। শুধু চুনারুঘাট নয় কোন স্থানেই বন্যপ্রাণী নিধন করতে পারবে না। এ সময় মন্ত্রী বলেন কোন বিট অফিসার বা কেউ রক্ষা পাবে না। তদন্তপূর্বক এর ব্যবস্থা নেয়া হবে। পাখি নিধনের ব্যপারে জিরো টলারেন্স থাকবে। এ ব্যাপারে আমি বনমন্ত্রীর সাথে কথা বলবো। চুনারুঘাট সুন্দরের এক লীলা ভূমি।
বণ্যপ্রাণী বেচে থাকার তাগিদে কাজ করছেন কর্তৃপক্ষ। পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় পাখির গুরুত্ব অপরিসীম। তাই এ সকল পাখি রক্ষায় প্রশাসনসহ স্থানীয়দের এগিয়ে আসা জরুরি।
আইন থাকলেও পাখি নিধন বন্ধে তেমন কোনো পদক্ষেপ নেই। এ কারণে দেশ থেকে নানা প্রজাতির পাখি বিলুপ্ত হচ্ছে। পাখি নিধন বন্ধে সচেতেনতা সৃষ্টি ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন এলাকাবাসী।