ওসি’র সাথে মতবিনিময় সভায় ব্যবসায়ীদের মতামত

চুরি প্রতিরোধে শহরের প্রবেশ পথে পুলিশের নজরদারি বৃদ্ধি এবং শহরের গুরুত্বপূর্ণ স্থান ও দোকানপাটে সিসি ক্যামেরা লাগানোর দাবি

মঈন উদ্দিন আহমেদ ॥ হবিগঞ্জ শহরে একের পর এক চুরির ঘটনায় ব্যবসায়ীদের সাথে আইন শৃঙ্খলা বিষয়ে সদর থানা পুলিশের মতবিনিময় অনুষ্ঠিত হয়েছে। শায়েস্তানগরে সদর থানার ওসি’র উপস্থিতিতে অনুষ্ঠিত মতবিনিময় সভায় চুরি প্রতিরোধে শহরের বিভিন্ন পয়েন্টে পাহারাদার নিয়োগের সিদ্ধান্ত হয়। সেই সাথে টহল পুলিশের রাতের ডিউটি আরও জোরদার ও রাত ১১টার পর চা দোকানসহ সকল ধরনের দোকানপাট বন্ধ রাখার ব্যাপারে মতামত দেন ব্যবসায়ীরা। হবিগঞ্জ সদর থানার অফিসার ইনচার্জ ওসি মোহাম্মদ মাসুক আলী নিজে এ তথ্য জানান। বিষয়টি তিনি তাঁর ফেসবুক আইডিতে তুলে ধরেন। সভায় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন হবিগঞ্জ ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতি-ব্যকস সভাপতি ও হবিগঞ্জ পৌরসভা নির্বাচনে মেয়র প্রার্থী মোঃ শামছুল হুদা।
এদিকে হবিগঞ্জ শহরে চুরি প্রতিরোধে কি পদক্ষেপ নেয়া যায় সে বিষয়ে দৈনিক হবিগঞ্জের মুখ পত্রিকায় শহরের বিভিন্ন পর্যায়ের ব্যবসায়ীদের মতামত তুলে ধরা হচ্ছে। অধিকাংশ ব্যবসায়ী তাদের মতামতে চুরি প্রতিরোধে শহরের প্রবেশ পথে পুলিশের নজরদারি বৃদ্ধি, শহরের গুরুত্বপূর্ণ স্থান এবং ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে সিসি টিভি ক্যামেরা লাগানোর দাবি জানিয়েছেন।
হবিগঞ্জ শহরের উমেদনগর এলাকার ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী মোঃ কাউছার মিয়া বলেন, শহরে একের পর এক চুরির ঘটনায় ব্যবসায়ীদের মাঝে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। করোনার কারণে এমনিতেই ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত। বিশেষ করে খাবারের দোকানগুলো বন্ধ থাকায় তারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন বেশি। এর সাথে সম্প্রতি যুক্ত হওয়া চুরির ঘটনা ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের পথে বসার উপক্রম করে তুলেছে। শহরে একের পর এক ঘটছে চুরির ঘটনা। চুরি প্রতিরোধে তিনি শহরের সকল প্রবেশ পথে পুলিশী তল্লাশী কার্যক্রম জোরদারের দাবি জানান। পাশাপাশি শহরে পুলিশী টহল জোরদারেরও দাবি জানান তিনি। তিনি বলেন, যারা একটু স্বাবলম্বী তারা তাদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে এমনকি মার্কেট মালিকরাও তাদের মার্কেটের সামনে ব্যক্তিগত পর্যায়ে পাহারাদার নিয়োগ করে থাকেন। এতে তারা তাদের প্রতিষ্ঠানে চুরি রোধ করতে পারলেও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা। অনেক সময় দেখা যায় যে সকল প্রাইভেট প্রতিষ্ঠান বা মার্কেটের সামনে পাহারাদার রয়েছে সে সব স্থানেও চুরি সংঘটিত হচ্ছে। এতে সহজেই প্রতীয়মান পাহারাদার সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করছে না। সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করলে চুরির ঘটনা ঘটতো না। তিনি ব্যক্তিগতভাবে নিয়োগকৃত পাহারাদার দায়িত্ব পালন করছে কি না তাও মনিটরিং এর দাবি জানান।
পাশাপাশি তিনি শহরের গুরুত্বপূর্ণ স্থান এবং ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে সিসি টিভি ক্যামেরা লাগানোর উপর গুরুত্বারোপ করেন। তিনি মনে করেন শহরের গুরুত্বপূর্ণ স্থান এবং ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে সিসি টিভি ক্যামেরা লাগানো হলে চুরির হার অনেক কমে আসবে।
উমেদনগর এলাকার ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী মিনহাজ উদ্দিন বলেন, শহরে চুরি প্রতিরোধে অবশ্যই পুলিশী টহল বৃদ্ধি করতে হবে। পাড়া মহল্লা সব স্থানেই পুলিশের নজরদারি বৃদ্ধি করতে হবে। প্রত্যেক ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে সিসি টিভি ক্যামেরা লাগাতে হবে। শুধু ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে নয়, রাস্তার বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানেও সিসি টিভি ক্যামেরা লাগাতে হবে। যদি প্রতিটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে সিসি টিভি ক্যামেরা লাগানো হয় এবং পুলিশী টহল বৃদ্ধি করা হয় তাহলে চুরির হার অনেক কমে আসবে। শুধু চুরি নয়, পুলিশী টহল বৃদ্ধি পেলে শহরে বখাটেপনাসহ অন্যান্য অপরাধও কমবে।
শহরের পৌরসভা এলাকার বিশিষ্ট ব্যবসায়ী সাইফুর রহমান তারেক বলেন, সব সময়ই কমবেশি চুরি হয়ে থাকে। তবে শীতকালে চুরির ঘটনা ঘটে বেশি। এসব চুরি প্রতিরোধে পুলিশ প্রশাসনের পাশাপাশি নিজেদেরেকেও সচেতন হতে হবে। শহরের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে সিসি টিভি ক্যামেরা লাগাতে হবে। পাশাপাশি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানেও সিসি টিভি ক্যামেরা নিশ্চিত করতে হবে। যদি অধিকাংশ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান সিসি টিভি ক্যামেরার আওতায় আনা যায় তাহলে চুরির হার অনেক কমে আসবে। তাছাড়া ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও মার্কেটে ব্যক্তিগত পাহারাদার নিয়োগে তিনি গুরুত্ব দেন। শুধু পাহারাদার নিয়োগ নয়, তারা সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করছে কি না তা মনিটরিংয়ের উপরও গুরুত্ব দেন তিনি। তিনি বলেন, অনেক সময় দেখা যায় পাহারাদার ঘুমিয়ে আছে। এ সুযোগে দোকানে বা মার্কেটে চুরি সংঘটিত হয়েছে। শহরে এমন উদাহরণও কম নয়। মনিটরিং করা হলে এসব অনিয়ম দূর হবে। আর পাহারাদার সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করলে চুরিও অনেক কমে আসবে।