স্টাফ রিপোর্টার ॥ সিলেট-হবিগঞ্জ ও সিলেট-মৌলভীবাজার রোডে বিআরটিসির নতুন বাস চালু হতে না হতেই ওই বাস সার্ভিসের ম্যানেজারকে মারপিট ও গাড়ি ভাংচুর করে এ দুটি লাইনে বিআরটিসির বাস চলাচল বন্ধ করে দিয়েছে পরিবহন শ্রমিকরা।
বিআরটিসি’র সিলেট কাউন্টার সূত্রে জানা যায়, গতকাল সকাল সাড়ে ৯টার দিকে অর্ধশত পরিবহন শ্রমিক এসে কাউন্টারে হামলা চালায়। এসময় তারা কাউন্টারে তালা ঝুলিয়ে দেয় এবং বিআরটিসির ডিপো ম্যানেজারের সরকারি গাড়ি ভাংচুর করে। তাদের অভিযোগ, তাদের কাউন্টার থেকে নগদ প্রায় সাড়ে ১২ হাজার টাকা এবং একটি ল্যাপটপ ছিনিয়ে নেয় পরিবহন শ্রমিকরা।
এ ব্যাপারে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলে আইনি পদক্ষেপ নেবেন বলে জানিয়েছেন বিআরটিসি সিলেট ডিপোর ম্যানেজার জুলফিকার আলী। এর আগে গত ২২ ডিসেম্বর হবিগঞ্জ-সিলেট সড়কে বিআরটিসি বাসের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হয়েছিলো। উদ্বোধনের দিন থেকেই এই রুটে বিআরটিসির বাস চলাচলে আপত্তি জানিয়ে আসছেন পরিবহন মালিক-শ্রমিকরা।
সম্প্রতি সিলেট-মৌলভীবাজার-হবিগঞ্জ রোডে বিআরটিসির নতুন বাস চালু হয়। শুরু থেকেই বাস মালক সমিতি ও সড়ক পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের আওতাধীন শ্রমিকরা নিজেদের ক্ষতির আশংকায় এর বিরোধিতা করে আসছেন।
হুমায়ুন রশীদ চত্বরে বিআরটিসি কাউন্টারের ম্যানেজার অভিযোগ করেন, সকাল ৯টায় শেরপুর মৌলভীবাজারগামী একটি বাস শেরপুরে অবরোধ করেন পরিবহন শ্রমিকরা। এরপর সকাল সাড়ে ৯টায় হুমায়ুন রশীদ চত্বরে বিআরটিসি কাউন্টারে পরিবহন শ্রমিকরা গিয়ে অতর্কিত হামলা চালান। এ সময় তারা কাউন্টারে লুটপাট ও ডিপো ইনচার্জ জুলফিকার আলীকে মারধর করেন। তারা সরকারি গাড়ির কাঁচ ভেঙে ফেলেন। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এ সময় পরিবহন শ্রমিক নেতারা দাবি করেন, তাদের সাথে আলোচনা না করে ও তাদের অনুমতি না নিয়ে গাড়ি চালানোয় তারা ক্ষুব্ধ। এ ঘটনার পর থেকে আর কোনো বাস কাউন্টার থেকে ছেড়ে যায়নি। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত পুলিশি প্রহরায় বাস ছাড়ার প্রস্তুতি চলছে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা। বিআরটিসি সিলেটের ম্যানেজার জুলফিকার আলী বলেন, আমরা আইনি পদক্ষেপ নেব। সেজন্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সাথে আলোচনা করা হচ্ছে।
এদিকে গতকাল রাতে হবিগঞ্জ পৌর বাস টার্মিনালে জরুরী সভায় বসেন হবিগঞ্জ জেলা বাস মালিক সমিতি, জেলা বাস, মিনিবাস, কোচ ও মাইক্রোবাস শ্রমিক ইউনিয়নের নেতৃবৃন্দ। সভায় কি সিদ্ধান্ত হয়েছে, এ ব্যাপারে হবিগঞ্জ জেলা বাস, মিনিবাস, কোচ ও মাইক্রোবাস শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মোঃ সজিব আলী জানান, আগামীকাল আমাদের বিভাগীয় কমিশনার ডেকেছেন। আমরা তাঁর সাথে আলাপ-আলোচনা করে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেবো। তবে কয়েকজন শ্রমিক নেতা জানান, বিআরটিসি বাসের ফিটনেস নেই। এ পরিবহনের রোড পারমিট লাগে না। সরকারকে ট্যাক্স দিতে হয় না। কিন্তু আমাদের পরিবহন সরকারকে সব কিছু দিয়ে চলাচল করে। সরকার যদি সিদ্ধান্ত পরিবর্তন না করে তাহলে আমরা পরিবহন চলাচল বন্ধ করে দেবো।
প্রসঙ্গত, গত ২২ ডিসেম্বর সকালে সচিবালয়ে সিলেট-মৌলভীবাজার-শ্রীমঙ্গল ও সিলেট-হবিগঞ্জ রুটে বিআরটিসি বাস সার্ভিস উদ্বোধন করেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। উদ্বোধনের দিন থেকেই এই দুই রুটে বিআরটিসির বাস চলাচলে আপত্তি জানিয়ে আসছেন পরিবহন মালিক-শ্রমিকরা। যদিও যাত্রীরা বিআরটিসির বাসকে স্বাগত জানিয়েছেন।