বাঁধা প্রদানকারীদের বর্ষপূর্তি পালন ॥ উপজেলাবাসী হতাশ
চুনারুঘাট প্রতিনিধি ॥ সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করেও স্বার্থান্বেষী মহলের বাধাঁর কারণে ৫ বছর পরও হবিগঞ্জের উন্নয়নের সোপান বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার কাজ শুরু হয়নি। ফলে চুনারুঘাট তথা হবিগঞ্জবাসী চরম হতাশা প্রকাশ করেছেন। এদিকে অর্থনৈতিক অঞ্চল বাধাঁপ্রদানকারী চা শ্রমিকরা শনিবার আন্দোলনের ৫ বছর পুর্তি পালন করে ইকনোমিক জোন প্রতিষ্ঠা বন্ধ রাখার দাবি জানিয়েছে।
গ্যাস ও বিদ্যুতের সহজলভ্যতা, যোগাযোগ ব্যবস্থা এবং চা শ্রমিকদের জীবনমান উন্নয়নে চুনারুঘাট উপজেলার চান্দপুর টিজি মৌজায় “হবিগঞ্জ অর্থনৈতিক অঞ্চল” প্রতিষ্ঠার কাজ শুরু হয় ২০১৪ সালে। হবিগঞ্জের তৎকালীন জেলা প্রশাসক মো. জয়নাল আবেদীন সরকারি ঐ ভূমিতে স্পেশাল ইকনোমিক জোন প্রতিষ্ঠার প্রস্তাবনা প্রেরণের প্রেক্ষিতে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের তৎকালীন নির্বাহী চেয়ারম্যান এবং সচিব ফখরুল ইসলাম ২০১৫ সালের জানুয়ারী মাসে স্থানটি পরিদর্শন করে সেখানে জোন প্রতিষ্ঠার আগ্রহ প্রকাশ করেন। পরবর্তীতে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের যুগ্ম সচিব ও বেজা চেয়ারম্যান পবন চৌধুরী ঐ বছরের মার্চ মাসে চুনারুঘাটের চা বাগানসহ বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষের সাথে মতবিনিময় করে দ্রুত এ স্থানে বিশেষ ইকোনমিক জোন স্থাপনের কাজ শুরু শুরু আগ্রহ প্রকাশ করেন। ২০১৫ সালের অক্টোবর মাসে জেলা প্রশাসক সাবিনা আলম বেজা চেয়ারম্যানের নামে উক্ত ৫’শ ১১ একর জমি কবুলিয়াত নামা রেজিস্ট্রি করে দেন। পরবর্তীতে প্রধানমন্ত্রী জোনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহন ও চুড়ান্ত অনুমোদন মিলে ২০১৫ সালের অক্টোবর মাসে। সকল প্রস্তুতি শেষে কাজ শুরুর সময় চান্দপুর ও বেগম খান চা বাগানের আংশিক শ্রমিকরা সরকারি খাস খতিয়ানের জমি নিজেদের দাবী করে আন্দোলন বাধাঁ প্রদান করে। তার সাথে যোগ দেন জেলা বামপন্থী সংগঠন বাসদ ও কমিউনিস্ট ও বেশ কয়েকজন রাজনৈতিক নেতা। তারা ইকনোমিক জোনের বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু করেন। এক পর্যায়ে ইকনোমিক জোন বাস্তবায়নের পক্ষে ইকনোমিক জোন বাস্তবায়ন কমিটি করে চুনারুঘাটবাসী। তারাও আন্দোলনের কর্মসূচী ঘোষণা ও পালন করেন। এক পর্যায়ে পরিবেশ উত্তপ্ত হয়ে উঠলে বেজা কর্তৃপক্ষ উক্ত ইকনোমিক জোনের কাজ স্থগিত ঘোষণা করে। দীর্ঘ ৫ বছর ধরেই ইকনোমিক জোন প্রতিষ্ঠার কাজ বন্ধ রয়েছে। এনিয়ে চুনারুঘাটের নানা মহলের নেতারা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, প্রায় ৪শ’ চা শ্রমিকের জন্য জেলা উন্নয়নের বড় কর্মকান্ড বন্ধ করে দেওয়া অত্যন্ত দুঃখজনক। চুনারুঘাট উপজেলার বিভিন্ন মহল অনতিবিলম্বে ইকনোমিক জোন প্রতিষ্ঠার দাবি জানিয়েছেন।
অভিজ্ঞরা বলছেন বিশেষ ইকনোমিক জোন প্রতিষ্ঠা হলে চা বাগানসহ জেলার অর্ধলাখ বেকার যুবক যুবতীর কর্মসংস্থানের পাশাপাশি চুনারুঘাট শহর তথা হবিগঞ্জ জেলার চেহারা পাল্টে যাবে। ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক পরিবর্তন হওয়ার পর চুনারুঘাট অর্থনৈতিক ভাবে যে ক্ষতির মধ্যে পড়েছে তা দূর হবে এবং বেকার যুবকদের কর্মসংস্থান হবে। পাশাপাশি চা বাগান, সাতছড়ি জাতীয় উদ্যান ও রেমা-কালেঙ্গার মত অভয়ারন্য থাকায় সেখানে পর্যটন শিল্পেরও বিকাশ ঘটবে। এছাড়া জেলার একমাত্র বাল্লা স্থলবন্দরের উন্নয়ন হবে এবং ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে আমদানী রপ্তানীও বাড়বে। এতে দেশের রাজস্বও বাড়বে। চুনারুঘাটবাসী ইকনোমিক জোন প্রতিষ্ঠার বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী এবং বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রীর সুদৃষ্টি কামনা করেন।