এসএম সুরুজ আলী ॥ ১৮৮১ সালে ৯.০৫ বর্গ কিলোমিটার এলাকা নিয়ে প্রতিষ্ঠিত হয় হবিগঞ্জ পৌরসভা। নানা চড়াই উৎরাই ও প্রতিকূলতা পেরিয়ে এ পৌরসভা এখন ১ম শ্রেণীর পৌরসভা। এ পৌরসভা বিভিন্ন সময়ে প্রশাসক, চেয়ারম্যান ও মেয়র নির্বাচিত স্বনামধন্য ব্যক্তিগণ। এক সময় এ পৌরসভায় শহরের অনেক প্রতিষ্ঠিত উচ্চ শিক্ষিত ব্যক্তি কাউন্সিলর নির্বাচিত হয়েছেন। জেলার নারী আন্দোলনের তুখোড় নেত্রীরা কাউন্সিলর হিসেবে নির্বাচিত হয়ে দায়িত্ব পালন করেছেন। এখন তরুণ নেতৃত্ব এগিয়ে আসছে এই পৌরসভায়। বর্তমান সরকার নারীর উন্নয়নে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে কাজ করছে। নারীদের অধিকার আদায়ে সরকার সচেষ্ট। নারীর নেতৃত্বের বিকাশ ঘটানোর লক্ষে প্রতিটি নির্বাচনে নারীদের আলাদা প্রতিদ্বন্দ্বিতার সুযোগ দেয়া হয়েছে। নারীরা বিভিন্ন ক্ষেত্রে নেতৃত্ব দিয়ে আসছেন। আসন্ন হবিগঞ্জ পৌরসভা নির্বাচনকে সামনে রেখে প্রতি বারের ন্যায় এবারও ডজন খানেক নারী নির্বাচনী প্রচারণায় নেমেছেন। তাদের অনেকেই শিক্ষিত ও উচ্চ শিক্ষিত তরুণী। তবে প্রচারণার ক্ষেত্রে তরুণী প্রার্থীরা এগিয়ে রয়েছেন। তারা ইতিমধ্যে নিজ নিজ এলাকায় ছবি সম্বলিত পোস্টার, ফেস্টুন ও রঙিন ব্যানার লাগিয়েছেন। এসব ব্যানার পোস্টারে এলাকার উন্নয়ন, মাদক নির্মূলে ভূমিকা রাখার প্রত্যয় ব্যক্ত করছেন তারা। পাশাপাশি তারা উঠান বৈঠক ও গণসংযোগ করছেন। এসব নারী প্রার্থীদের নিজ নিজ পাড়া, মহল্লা থেকেও সমর্থন দেয়া হচ্ছে। দৈনিক হবিগঞ্জ মুখ পত্রিকায় পৌরসভার নির্বাচনকে সামনে রেখে মেয়র প্রার্থীদের পাশাপাশি কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর প্রার্থীদের নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণার সংবাদ পর্যায়ক্রমে প্রকাশ করা হবে। হবিগঞ্জ পৌরসভার ৩টি ওয়ার্ডে সংরক্ষিত আসনে কাউন্সিলর পদে নির্বাচন করার জন্য যারা পোস্টার, ফেস্টুন লাগানোসহ প্রচারণা করছেন আজ তাদের তথ্য তুলে ধরা হলো।
হবিগঞ্জ পৌরসভার সংরক্ষিত ১ নং ওয়ার্ডে (১, ২ ও ৩নং ওয়ার্ড) সম্ভাব্য কাউন্সিলর প্রার্থী হিসেবে ৪ জনের নাম শোনা যাচ্ছে। তারা হলেন- বর্তমান কাউন্সিলর পিয়ারা বেগমের মেয়ে মিসেস রুনা আক্তার, তাছলিমা আক্তার বিউটি, আইরিন আক্তার ও প্রিয়াংকা সরকার। সংরক্ষিত ২ নং ওয়ার্ডে (৪, ৫ ও ৬নং ওয়ার্ড) সম্ভাব্য কাউন্সিলর প্রার্থী হিসেবে রয়েছেন বর্তমান কাউন্সিলর বেগম খালেদা জুয়েল, সাবেক কাউন্সিলর সালমা আক্তার চৌধুরী পারুল ও সমাজকর্মী বিপ্লব রায় সুজনের স্ত্রী পূর্ণিমা রায়। সংরক্ষিত ৩ নং ওয়ার্ডে (৭, ৮ ও ৯নং ওয়ার্ড) বর্তমান কাউন্সিলর অর্পণা বালা পাল, সাবেক কাউন্সিলর সৈয়দা লাভলী সুলতানা, তরুণ সমাজকর্মী রোটার‌্যাক্টর শিরিন আক্তার সোনিয়া, সুরাইয়া আক্তার খানম রাখী, শেখ সোমা জাহান ফিরোজা, সৈয়দা জৈবুন্নেচ্ছা জবা ও শাহীনুর আক্তার।
সংরক্ষিত ১ নং ওয়ার্ডের সম্ভাব্য কাউন্সিলর প্রার্থী মিসেস রুনা আক্তার জানান, এ ওয়ার্ড থেকে আমার মা পিয়ারা বেগম ৩ বার কাউন্সিলর নির্বাচিত হয়েছেন। এর মধ্যে একবার পৌরসভার ভারপ্রাপ্ত মেয়রের দায়িত্বও পালন করেছেন। বর্তমানেও তিনি প্যানেল মেয়র-২ এর দায়িত্ব পালন করছেন। আমার মা এখন অসুস্থ। তিনি ভালোভাবে কথা বলতে পারছেন না। আমার মা চাচ্ছেন তার মত আমিও যেন এ ওয়ার্ডের জনগণের সেবা করি। মায়ের ইচ্ছা পূরণের জন্য আমি কাউন্সিলর প্রার্থী হয়েছি। আমার আনোয়ারপুর গ্রামবাসী আমাকে সমর্থন করেছেন। আমি সকলের দোয়া ও সহযোগিতা কামনা করছি।
একই ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী তাছলিমা আক্তার বিউটি জানান, উমেদনগরের সন্তান হিসেবে গ্রামবাসী আমাকে পূর্ণ সমর্থন করেছেন। আশা করি পুরো ওয়ার্ডবাসীর সমর্থন নিয়ে নির্বাচনে বিজয়ী হবো। একই ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী প্রিয়াংকা সরকার জানান, একজন নবীন প্রার্থী হিসেবে আমার নোয়াহাটি এলাকাবাসীর সমর্থন নিয়ে নির্বাচনে করবো। এখন এলাকার বাসায় বাসায় গিয়ে গণসংযোগ ও লিফলেট বিতরণ করে সকলের দোয়া আশির্বাদ ভোট কামনা করছি। সবার সহযোগিতা নিয়ে নির্বাচিত হয়ে ওয়ার্ডের উন্নয়ন হবে আমার প্রথম উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য।
সংরিক্ষত ২নং ওয়ার্ডের বর্তমান কাউন্সিলর বেগম খালেদা জুয়েল জানান, দীর্ঘদিন ধরে এ ওয়ার্ডে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি ওয়ার্ডবাসীর সেবা করে যাচ্ছি। ওয়ার্ডবাসীর সমর্থন নিয়ে আমি ইতোপূর্বে পৌরসভার ভারপ্রাপ্ত মেয়রের দায়িত্ব সততা ও নিষ্ঠার সাথে পালন করেছি। এবারও ওয়ার্ডবাসীর সমর্থন নিয়ে নির্বাচনে অংশ গ্রহন করবো। আশা করি সকলের দোয়া ও সমর্থন নিয়ে কাউন্সিলর নির্বাচিত হবো। একই ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী সালমা আক্তার চৌধুরী পারুল জানান, এর আগে আরেকটি নির্বাচনে আমি কাউন্সিলর নির্বাচিত হয়েছিলাম। বিগত নির্বাচনেও আমি প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছি। এরপর থেকেই নির্বাচন করবো বলে এলাকায় কাজ করে যাচ্ছি। আশা করি এবারও এলাকাবাসী আমাকে নির্বাচিত করবেন।
সংরিক্ষত ৩নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী বর্তমান কাউন্সিলর অর্পনা পাল জানান, ইতোপূর্বে এলাকাবাসীর সমর্থন নিয়ে কাউন্সিলর নির্বাচিত হয়েছি। এখনও জনগণের রায় নিয়ে নির্বাচিত হয়ে সেই দায়িত্ব পালন করছি। নির্বাচিত কাউন্সিলর হিসেবে নির্বাচনের জন্য আমার সবসময় প্রস্তুতি রয়েছে। আর কয়েকদিন পরই পারিবারিক সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রচারণায় নামবো। আশা করি উন্নয়নের ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখতে ওয়ার্ডবাসী আমাকে আবারও নির্বাচিত করবেন। একই ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর সৈয়দা লাভলী সুলতানা জানান, ইতিপূর্বে সংরক্ষিত ওয়ার্ডবাসী আমাকে নির্বাচিত করেছিলেন। বিগত নির্বাচনে আমি প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছি। এরপর থেকে ওয়ার্ডে বিভিন্ন সামাজিক কর্মকান্ড করে যাচ্ছি। ওয়ার্ডের বাসিন্দাদের সুখে-দুঃখে পাশে দাঁড়িয়েছি। এবারের নির্বাচনেও অংশ গ্রহন করার জন্য আমি প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছি এবং ব্যাপক সমর্থন পাচ্ছি। আশা করি এবার ওয়ার্ডবাসী আমাকেই নির্বাচিত করবেন। একই ওয়ার্ডের তরুণ কাউন্সিলর প্রার্থী শিরিন আক্তার সোনিয়া জানান, দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন সমাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠনের সাথে জড়িত থেকে সমাজ সেবামূলক কাজ করে যাচ্ছি। কাউন্সিলর নির্বাচিত হয়ে এলাকার উন্নয়ন করার পাশাপাশি শিক্ষার মান বৃদ্ধিকরণে কাজ করতে চাই। সকলকে সাথে নিয়ে এলাকাকে মাদকমুক্ত রাখতে চাই। তিনি বলেন- ইতিমধ্যে এলাকাকে মাদকমুক্ত রাখার জন্য অনেক সচেতনতামূলক কাজ করেছি। নির্বাচিত প্রতিনিধি হয়ে সামাজিক ও উন্নয়ন কর্মকান্ড আরো জোরদার করতে চাই। এজন্য মূলত আমি নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছি। আমার এলাকার জনগণ আমাকে সমর্থন করেছেন। আশা করি সকলের দোয়া ও আশির্বাদ নিয়ে আমি কাউন্সিলর হিসেবে নির্বাচিত হবো। একই ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী সুরাইয়া আক্তার খানম রাখী জানান, দীর্ঘদিন ধরে রাজনীতির সাথে জড়িত। ইতিপূর্বে হবিগঞ্জ সদর উপজেলা পরিষদের নির্বাচনে ভাইস চেয়ারম্যান পদে অংশগ্রহন করেছিলাম। জনগণ আমাকে বিপুল ভোট দিয়েছিলেন। এবার আমার নিজ এলাকা মোহনপুরবাসী কাউন্সিলর প্রার্থী হিসেবে আমাকে সমর্থন করেছেন। আমি আশাবাদী সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হলে এলাকাবাসী আমাকে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করবেন।