স্টাফ রিপোর্টার : সরকার, বিভিন্ন রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে মনগড়া, কাল্পনিক এবং মিথ্যা তথ্য দিয়ে সংবাদ প্রকাশ ও ফেসবুকে অপপ্রচার করায় দৈনিক আমার হবিগঞ্জ পত্রিকার অনুমোদন বাতিলের দাবি জানিয়েছে হবিগঞ্জ প্রেসক্লাব। এ ব্যাপারে তারা জেলা প্রশাসক বরাবর স্মারকলিপি দিয়েছেন। গতকাল শনিবার তারা এই স্মারকলিপি প্রদান করেন।
স্মারকলিপিতে তারা উল্লেখ করা হয় সংবাদপত্র এবং সাংবাদিকতার একটি ঐতিহ্যবাহী জনপদ হবিগঞ্জ জেলা। এখানে যেমন রয়েছে অনেকগুলো স্থানীয় পত্রিকা তেমনিভাবে জাতীয় পর্যায়েও এখানকার সাংবাদিকরা গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে নিয়োজিত রয়েছেন। এই সংবাদপত্র ও সাংবাদিকরা জেলার উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছেন। হবিগঞ্জ প্রেসক্লাবও একটি ঐতিহ্যবাহী প্রতিষ্ঠান হিসাবে সাংবাদিকদের কল্যাণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।
একজন ইংল্যান্ড প্রবাসী হওয়ার পরও কোন ধরনের সাংবাদিকতার অভিজ্ঞতা ছাড়াই প্রকৌশলী সুশান্ত দাশগুপ্ত ‘আমার হবিগঞ্জ’ নামে একটি সংবাদপত্র প্রকাশ করছেন। পত্রিকার সম্পাদনা শুরু করেই তিনি বর্তমান সরকার, বিভিন্ন রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে মনগড়া, কাল্পনিক এবং মিথ্যা তথ্য দিয়ে সংবাদ প্রকাশ করে আসছেন। তিনি শুধু সংবাদ প্রকাশ করেই ক্ষ্যান্ত হননি। প্রতিদিন সেগুলো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে উল্লেখিতদের সম্মানহানী করে চলেছেন। তিনি বানিয়াচং উপজেলার মাকালকান্দি গণহত্যার সাথে জড়িত কুখ্যাত রাজাকার লেবু উল্ল্যা বেপারীর নাতি রায়হান উদ্দিন সুমনকে বার্তা সম্পাদক নিয়োগ দিয়ে তার মাধ্যমেও সরকার বিরোধী এবং সম্মানী লোকজনের বিরুদ্ধে অপপ্রচারে লিপ্ত। সুশান্ত দাশগুপ্ত ও রায়হান উদ্দিন সুমন এবং তাদের সহযোগীরা বিভিন্ন সময়ে হবিগঞ্জের সাংবাদিকদের দুর্নীতিবাজ বলে অপপ্রচার চালাচ্ছিলেন। ফেসবুকে হবিগঞ্জ প্রেসক্লাব ও এর সাধারণ সম্পাদক সম্পর্কে কটুক্তি করে আসছেন। হবিগঞ্জের স্থানীয় পত্রিকাগুলোকে নিয়েও বিভিন্ন সময় কটাক্ষ করেন। তার এ অপপ্রচারকে ঘিরে জেলার সাংবাদিকদের মধ্যে বেশ কিছুদিন ধরে ক্ষোভ বিরাজ করছিল। একই সাথে প্রেসক্লাবের আজীবন সদস্য, দৈনিক দেশজমিনের সম্পাদক মন্ডলীর সভাপতি ও সাংবাদিকদের ঐক্যের প্রতীক এডভোকেট মোঃ আবু জাহির এমপি এর বিরুদ্ধে তার পত্রিকায় প্রতিনিয়ত অপপ্রচার চালানো হচ্ছে। এই পরিপ্রেক্ষিতে আইনী লড়াইয়ে নামেন প্রেসক্লাব সাধারণ সম্পাদক সায়েদুজ্জামান জাহির। তিনি সুশান্ত দাশগুপ্তের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা দায়ের করেন। মামলাটি দায়ের করার পর পুলিশের তৎপরতায় দ্রুততম সময়ে সুশান্ত দাশগুপ্তকে গ্রেফতার করায় আমরা আপনার প্রতি কৃতজ্ঞ। আমরা প্রত্যাশা করছি মামলার অন্যান্য সহযোগীদেরকেও দ্রুততম সময়ের মাঝে গ্রেফতার করার পাশাপাশি সুশান্ত দাশগুপ্তকে রিমান্ডে এনে তার পিছনে কারা জড়িত তাদেরকে বের করার জন্য। পাশাপাশি মামলার তদন্তের স্বার্থে সুশান্ত দাশগুপ্তের ব্যবহৃত বিভিন্ন ডিভাইস জব্দ করার জন্যও দাবী জানাই। পাশাপাশি পুলিশের বিশেষ শাখার মাধ্যমে তদন্ত করে তার সকল অপকর্ম বের করার জন্য জোর দাবী জানাই।
মামলাসহ সুশান্তর অপপ্রচারের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য ২১/০৫/২০২০ খ্রি. রোজ বৃহস্পতিবার রাতে হবিগঞ্জ প্রেসক্লাব মিলনায়তনে ক্লাব সভাপতি মোঃ ইসমাইল হোসেনের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক সায়েদুজ্জামান জাহিরের পরিচালনায় প্রেসক্লাবের জরুরী সাধারণ সভা অনুষ্টিত হয়। সামাজিক দুরত্ব নিশ্চিত করে অনুষ্ঠিত সভায় ক্লাবের ৩২ জন সদস্য বক্তব্য রাখেন।
সভায় আলোচনা ও সিদ্ধান্ত গৃহিত হয় যে, আমার হবিগঞ্জ পত্রিকার সাথে জড়িতদের কর্মকান্ড গণমাধ্যম নীতিমালা বিবর্জিত। সুশান্ত দাশ গুপ্ত তার কয়েক সহযোগীকে সাথে নিয়ে হবিগঞ্জের সকল সম্পাদক ও সাংবাদিকদের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে করোনা ভাইরাস পরিস্থিতিতে পত্রিকার প্রকাশ করে আসছিলেন। আর প্রতিদিনই বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক উস্কানীমূলক বিভিন্ন অসত্য তথ্য দিয়ে সংবাদ পরিবেশন করা হতো এগুলোতে। এনিয়ে জেলাবাসীর মাঝে বিরাজ করছে চাপা ক্ষোভ। শুধু তাই নয়, প্রেসক্লাবের আজীবন সদস্য, দৈনিক দেশজমিনের সম্পাদক মন্ডলীর সভাপতি ও সাংবাদিকদের ঐক্যের প্রতীক এডভোকেট মোঃ আবু জাহির এমপি এর সম্মানহানীসহ বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির মিশনেও নামেন সুশান্ত দাশ গুপ্ত। বিভিন্ন মামলার আসামী এবং ইংল্যান্ডের নাগরিকত্ব থাকার পরও কিভাবে সুশান্ত দাশ গুপ্ত আমার হবিগঞ্জ পত্রিকা প্রকাশের অনুমতি পেয়েছেন সে বিষয়টি খতিয়ে দেখার জন্য আপনার প্রতি দাবি জানিয়ে সিদ্ধান্ত গৃহিত হয়।
সুশান্ত দাশগুপ্ত শায়েস্তাগঞ্জ উপজেলার সুতাংয়ে মৃত সুখিয়া রবি দাশের নামে ইংল্যান্ড থেকে ডোনেশন সংগ্রহ করে লক্ষ লক্ষ টাকা আত্মসাত করেছেন। তিনি প্রেসক্লাবের বর্তমান সাধারণ সম্পাদক, সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও অন্যান্য সদস্যদেরকে দুর্নীতিবাজ বলে অপপ্রচার করছেন। তার এসব আচরনের তীব্র নিন্দা জানিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করা হয় উক্ত সভায়।
আমরা মনে করি সুশান্ত দাশগুপ্ত ও তার সহযোগীরা কোন অপশক্তির ছত্রছায়ায় থেকে গোপন মিশনের অংশ হিসাবে সরকারের ভাবমূর্তি ও সমাজের সম্প্রীতি বিনষ্ট করতে মাঠে নেমেছে। তার এই কর্মকান্ডে হবিগঞ্জের সাংবাদিক ও সংবাদপত্র শিল্প হুমকিতে পড়েছে। সে বিনামূল্যে পত্রিকা প্রকাশ এবং বিজ্ঞাপন না নিয়ে কোন উদ্দেশ্যে মাসে লক্ষ লক্ষ টাকা ভর্তুকি দিচ্ছে তা খতিয়ে দেখা প্রয়োজন। আমাদের জানামতে লন্ডনে তার কোন ব্যবসা বা আয়ের উৎস নেই। দেশেও তার কোন আয়ের উৎস বা আয়কর প্রদানের প্রমাণ নেই। তারপরও কোন উৎস থেকে এই টাকা সংগ্রহ করছে তা তদন্ত করলেই বেরিয়ে আসবে।
প্রেসক্লাব সাধারন সম্পাদকের ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় দৈনিক আমার হবিগঞ্জ পত্রিকার প্রকাশক ও সম্পাদক সুশান্ত দাশগুপ্ত ২১/০৫/২০২০ খ্রি. রোজ বৃহস্পতিবার সকালে গ্রেফতার হয়ে বর্তমানে কারাগারে রয়েছেন। প্রকাশক ও সম্পাদক সুশান্ত দাশগুপ্ত কারাগারে থাকা অবস্থায় বিধি লংঘন করে ২২/০৫/২০২০ খ্রি. তারিখেও তার সহযোগীরা পত্রিকাটি প্রকাশ করেছে।
স্মারকলিপি প্রদানকালে উপস্থিত ছিলেন হবিগঞ্জ প্রেসক্লাবের সভাপতি মোঃ ইসামাইল হোসেন, সাবেক সভাপতি মোহাম্মদ শাবান মিয়া, বীর মুক্তিযোদ্ধা গোলাম মোস্তফা রফিক, হারুনুর রশিদ চৌধুরী, ফজলুর রহমান, সাধারণ সম্পাদক সায়েদুজ্জামান জাহির, সাবেক সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট নির্মল ভট্টাচার্য্য রিংকু, চৌধুরী মোহাম্মদ ফরিয়াদ, অ্যাডভোকেট শাহ ফখরুজ্জামান, রাসেল চৌধুরী, চৌধুরী মোহাম্মদ মাসুদ আলী ফরহাদ, শাকীল চৌধুরী, প্রদীপ দাশ, মুজিবুর রহমান, মঈন উদ্দিন আহমেদ, ফয়সল চৌধুরী, বদরুল আলম প্রমুখ।