-এম এ মজিদ-
ক্যালিরফুনিয়া ইউনিভার্সিটির স্কুল অব মেডিসিনের জরুরী মনোরোগ বিদ্যা বিভাগের কনসালটেন্ট ডাক্তার জেনা লি বলেছেন- করোনায় প্রথমত শিশুরা মানসিকভাবে মারাত্বক ক্ষতির সম্মুখিন হচ্ছে। যে সময়টা তাদের মানসিক বিকাশের সময়। ঠিক এই সময়ে শিশুরা তাদের প্রতিদিনের বেড়ে উঠার সাথে যুদ্ধ করছে। স্কুল বন্ধ থাকায় যুদ্ধটা সরাসরিই করতে হচ্ছে তাদেরকে। অথচ শিশুরা যুদ্ধ সম্পর্কে মোটেই ওয়াকিবহাল নয়। শিশুদের প্রতিদিনের বেড়ে উঠাকে ডাক্তার জেনা লি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হিসাবে চিহ্নি করেছেন। স্কুল খোলা থাকলে একের পর এক কি কি কাজ করতে হবে শিশুদের তা জানা হয়ে যায়, তাছাড়া ছাত্র-শিক্ষক, শিক্ষক-শিক্ষক, ছাত্র-অভিভাবক, ছাত্র-ছাত্র, প্রতিবেশী, পরিবেশ, এমনকি গাড়ির ড্রাইভারের মাধ্যমেও শিশুরা কার সাথে কি ব্যবহার করতে হবে, সেলফ ডিসিপ্লিন, কোন কাজটি বেশি গুরুত্বপূর্ণ তা শিখে নেয়। ধীরে ধীরে তারা শিখে নেয় সেন্স অফ সেফটি এন্ড কন্ট্রোল। আপনার বাসায় যদি স্কুল গোয়িং কোনো শিশু থাকে তাহলে বুঝতে সহজ হবে যে, দুই মাসের ব্যবধানে আপনার শিশুর আচার আচরণ, মানসিক বিকাশ, খাবার দাবার, কথা বার্তায় তার মাঝে কতটুকু বিরুপ প্রভাব পড়েছে। নিশ্চিত আপনি বেশ কিছু প্রার্থক্য আবিষ্কার করতে পারবেন। তাবৎ দুনিয়া ব্যস্ত করোনায় বিশ্বের আর্থিক ক্ষতির হিসাব নিরুপনে। একবার কি ভেবে দেখা হচ্ছে- করোনায় আপনার স্নেহের সোনামনির কী ক্ষতি হচ্ছে? এ থেকে উত্তরনের উপায় কি তা নিয়েও বেশ আলোচনা হচ্ছে না। শিশুদের ইমুশনের সাথে আমরা কি খাপ খাইয়ে চলতে পারছি? আমরা কি শিশুদের সাথে ডাবল স্ট্যান্ডার্ড মেনটেইন করতে পারছি? না কি আমরা আমাদেরকে নিয়েই বেশি ব্যস্ত থাকছি। ডাক্তার জেনা লি মনে করেন- শিশুরা ইতোমধ্যে মানসিক রোগে আক্রান্ত হয়ে গেছে। হতাশা এবং উদ্বিগ্নতা তাদেরকে ছাড়ছে না। শিশুদের দেহগত কিছু বৈশিষ্টও আপনার নজরে আসতে পারে এই সময়ে। কোনো কোনো শিশু হয়তো কঠিন ঘুমের মধ্য দিয়ে সময় অতিবাহিত করছে, কোনো শিশু হয়তো বার বার খেতে চাচ্ছে, আবার কোনো শিশু খেতেই চাচ্ছে না। সবসময় হয়তো রাগান্বিত আচরণও শিশুর কাছ থেকে আপনি পেতে পারেন। এক মুহুর্তের জন্য টিভির রিমোট তার হাত থেকে নেয়া যাচ্ছে না, এমন শিশুর সংখ্যা হাজারে হাজারে, মোবাইলে কিংবা ট্যাবে, লেপটপে গেইম খেলা, মুভি দেখা, কার্টুন দেখা শিশুদের সংখ্যা লাখে লাখে। বুস্টন ইউনিভার্সিটির হেলথ ল, পলিসি এন্ড ম্যানেজমেন্ট বিভাগের প্রফেসর সারা কে লিপসন বলেছেন- যারা শিশুদের চেয়ে একটু বড়, কলেজে উঠছে বা উঠবে এমন কিশোরদের মানসিকভাবে বিকারগ্রস্থ হওয়ার আশংকা বেশি। ক্যাম্পাস বন্ধ থাকায় তারা মানসিকভাবে ভেঙ্গে পড়েছে, একাকিত্ব তাদেরকে কুড়ে কুড়ে খাচ্ছে। লিপসন বারবার বলেছেন- কলেজ পড়–য়া শিক্ষার্থীদের জন্য ঘরে আবদ্ধ থাকাটা খুব কঠিন সময়। তারা উদ্বিগ্নতার সাথে যুদ্ধ করছে। ভবিষ্যৎ রেজাল্ট নিয়ে তারা খুব চিন্তিত। আসলে এই শিশু কিশোরদের অজানা যুদ্ধে আমরা কিভাবে সহযোগিতা করতে পারি। ডাক্তার জেনা লি বলেছেন- এই যুদ্ধে মা বাবারাই ভাইটাল রুল প্রয়োগ করতে পারেন। কিভাবে? শিশু কিশোরদের কাছে মা বাবা মহা মানবদের জীবনী বর্ণনা করতে পারেন আকর্ষণীয়ভাবে। একেকদিন একেকজনের কাহিনী বর্ণনা করতে পারেন। স্বাভাবিকভাবেই শিশুদের কাছে তা গ্রহণ যোগ্য হবে না। এক্ষেত্রে শিশুরা যা পছন্দ করে যেমন, একটি কার্টুন কে তৈরী করল, তার ইতিহাসটা আপনি জেনে নিতে পারেন, তারপর তার প্রিয় কার্টুনটি কে বানালো, কিভাবে কার্টুন তৈরী করা হয় তাও আপনি বর্ণনা করতে পারেন। আপনি বাসায় শিশুদের জন্য মডেলিং করতে পারেন। শিশুকেও মডেল হতে বললেন। সাজিয়ে দিলেন। দুচারটা মডেলিং ভালভাবে দেখে নিলেন। শিশুরা সাধারণত বড়দেরকে দেখে দেখে শিখে। আপনি দিনের একটা সময় বাগান করতে পারেন। জায়গার সংকট হলে বাসার কোনা কানায় দু একটি গাছ রুপন করতে পারেন। এক দুটি গাছ আপনি তাকে রুপন করতে দেন। বলে দেন, ওই গাছটা তোমার, তুমি এর যতœ নিবে, পানি দেবে, দেখবেন পরদিন থেকে আপনাকেই সে নিয়ে যাচ্ছে গাছের কাছে। শিশুকে সাথে নিয়েই আপনি গোসল করুন। পানিতে একটু সময় খেলুন। একে অপরকে পানি ছিটান। আনন্দ করুন। নিজ নিজ ধর্মীয় কার্যাদি শিশুর সামনে করুন। ধর্ম সম্পর্কে দু চারটি কথা বলুন। রান্না প্রস্তুতের সময় শিশুকে কাছেই রাখুন। তাকে এটা ওটা আনতে বলুন। তাতে শিশু রাগ করবে না, মজা পাবে। তাকে উৎসাহ দিন। সব সময় পজিটিভ চিন্তা করুন। মাঝে মাঝে শিশুদের বন্ধু বান্ধবদের সাথে মোবাইল লাইভে কথা বলিয়ে দিন। একসাথে মুভি দেখুন, একসাথে কার্টুন দেখুন। শিশুর কাছে মাঝে মাঝে মুভি ও কার্টুন সম্পর্কে কিছু জিজ্ঞাসা করুন। দেখবেন, টিভি থেকে চোখ সরিয়ে সে আপনাকে সব বুঝিয়ে দিচ্ছে। টিভি থেকে চোখ সরানোয় তার চোখ কিছুটা সময় টিভির রশ্মি থেকে রেস্ট পেল। নিজ নিজ পরিবার পরিবেশ সুযোগ সুবিধা প্রয়োগ করে শিশুকে করোনা যুদ্ধে জয়ী করুন। মনে করুন- ডাবল মিশন আপনার সামনে। একদিকে নিজেকে বাচাতে হবে। অন্যদিকে শিশুর কোনো ক্ষতি হতে দেয়া যাবে না।
লেখকঃ আইনজীবী ও সংবাদকর্মী
হবিগঞ্জ ৫ মে ২০২০
০১৭১১-৭৮২২৩২
© স্বত্ব দৈনিক হবিগঞ্জের মুখ ২০১৯
ওয়েবসাইটটি তৈরী করেছে ThemesBazar.Com