“আমরা জানি যে মহামারী করোনা বাংলাদেশে সামাজিক সংক্রমণ পর্যায়ে উপনীত হয়েছে। এখন প্রতিদিনই ক্রমবর্ধমান হারে নতুন রোগী চিহ্নিত হচ্ছে ও হবে। সম্ভবতঃ কিছু রোগী সময়মত পরীক্ষার অভাবে রোগ নির্ণয়ের পূর্বেই স্বাভাবিক সর্দি কাশি বা নিউমোনিয়ার রোগী হিসেবে বিবেচিত হচ্ছেন ও মৃত্যু বরণ করছেন। অথচ বিশ^ স্বাস্থ্য সংস্থার “ব্যাপক পরীক্ষা” পরিচালনা করে করোনা রোগীদের আলাদা করে ফেলার একমাত্র ও মোক্ষম কৌশলটি প্রয়োগে আমরা এখনও সফল হতে পারিনি। এর ফলে মনে হয় প্রচুর রোগীর ধাক্কা এখন আমাদের সামাল দিতে হবে। অতএব, বর্তমান পর্যায়ে আমরা সরকার সমীপে নি¤œবর্ণিত দাবী জানাচ্ছি:
১. একনিষ্ঠ ও দ্রুত গতিতে দীর্ঘ লক ডাউন ও কারফিউ জারী করেই মানুষ বাঁচানোর কাজ চালিয়ে যেতে হবে। শহরের ছোট রাস্তায় আর গ্রামের হাট বাজারে মানুষের সমাগম দেখে মনে হয় অনেক সাধারণ মানুষ জেনে বা না জেনে তারা সরকারের নির্দেশ অমান্য করছেন। এ বিষয়ে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সহায়তায় কাজটি সম্পন্ন করার মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর অনমনীয় সিদ্ধান্ত অবশ্যই বাস্তবায়ন করতে হবে। অবস্থা দৃষ্টে মনে হয়, অবুঝ অসচেতন নাগরিকদের ঘরে থাকা নিশ্চিত করণে সেনাবাহিনী এবং পুলিশের সংখ্যা ও জনতার উপর তাদের চাপ বৃদ্ধি করতে হবে।
২. গণমাধ্যমের খবর দেখে মনে হয় কেন্দ্র থেকে গ্র্রাম পর্যন্ত সকল দরিদ্র মানুষের নিকট প্রয়োজনমত সরকারী ত্রাণ এখনও পৌঁছেনি। এ বিষয়ে সরকারী ব্যবস্থাপনায় আরো দক্ষতা ও দ্রুততা নিশ্চিত করতে হবে। একই সাথে স্থানীয় বন্য প্রাণীদের জন্যও খাদ্য সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে।
৩. সারাদেশের উপজেলা স¦াস্থ্য কমপ্লেক্সে পর্যায়ে করোনা রোগী চিহ্নিতকরণের জন্য পরিকল্পিতভাবে ও দ্রুত সকল মানুষের সংক্রমণ পরীক্ষার জন্য আরটি-পিসিআর টেস্ট কিট সরবরাহ ও পরিকল্পনা মাফিক ব্যাপক রোগী চিহ্নিত করণ কার্যক্রম পরিচালনা করতে হবে ও সুস্থ মানুষ থেকে করোনা বাহক নাগরিকদের অতি দ্রুতই আলাদা করতে হবে।
৪. চিকিৎসক ও অন্যান্য চিকিৎসা সেবা কর্মীদের মধ্যে যারা সরাসরি করোনা রোগীর চিকিৎসার সাথে সম্পৃক্ত হয়ে করোনায় আক্রান্ত হবেন তাদের চিকিৎসা ও আর্থিক সহায়তা নিশ্চিত করতে হবে। তাদের জন্য বিশেষ প্রণোদনামূলক ঝুঁকি ভাতা, স্বাস্থ্য ও জীবন বীমা নিশ্চিত করতে অবিলম্বে পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।
৫. পর্যাপ্ত সংখ্যক ও পূর্ণ মানসম্পন্ন সুরক্ষা সামগ্রী (পিপিই) সংগ্রহ করে তা নিরবিচ্ছিন্ন, সঠিক ও অবারিত প্রক্রিয়ায় চিকিৎসক, চিকিৎসা সেবা ও পরিচ্ছন্ন কর্মীদের জন্য নিশ্চিত করতে হবে। জরুরী বা মারাতœক নয় সেসব সাধারণ রোগীদের ছুটি দিয়ে তাদের জন্য কর্মরত সেবাকর্মীদের করোনা রোগী চিকিৎসায় যুক্ত করতে হবে।
৬. সকল মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, বিশেষায়িত হাসপাতাল, ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট সকল হাসপাতাল, জেলা হাসপাতালে সংকটাপন্ন রোগীর চিকিৎসার জন্য দ্রুততম সময়ের মধ্যে আইসিইউ এর ব্যবস্থা করতে হবে। আইসোলেশন কার্যক্রমের জন্য সকল ষ্টেডিয়াম, সরকারী/বেসরকারী সকল বৃহৎ হল বা অডিটরিয়ামে ফিল্ড হাসপাতাল নির্মান করতে হবে। ইতোমধ্যে নির্মিত সকল হাসপাতালের প্রয়োজনমত সক্ষমতা নিশ্চিত করতে হবে।
৭. সম্ভাব্য অজ¯্র অতি অসুস্থ রোগীর চিকিৎসা নিশ্চিত করার জন্য দেশের বিদ্যমান দেশী-বিদেশী বৃহদাকার ও আইসিইউযুক্ত সকল বেসরকারী হাসপাতালকে সরকারী সেবা নেটওয়ার্কে যুক্ত করতে হবে।
৮. করোনা চিকিৎসায় কর্মরত সকল ডাক্তার, নার্স ও অন্যান্য কর্মচারীদের পরিবহন ও থাকা খাওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। তাদের নিজ নিজ পরিবার যেন সংক্রমিত না হয় সেজন্য এই বিচ্ছিন্নকরণ জরুরী প্রয়োজনীয় বিষয়।