করোনা ভাইরাস আতঙ্ক
এসএম সুরুজ আলী ॥ করোনা ভাইরাসের অজুহাতে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের অতিরিক্ত মূল্য নেয়ার অপরাধের জেলার বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে ৩ লাখ ৫৬ হাজার টাকা জরিমানা করেছে ভ্রাম্যমান আদালত। গতকাল শুক্রবার ছুটির দিন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ কামরুল হাসানের নির্দেশে এসব জরিমানা করা হয়। সকালে সিনিয়র সহকারী কমিশনার লুসিকান্ত হাজং, এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট শাহ মোঃ আজিজ, এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট প্রতীক মন্ডল ও এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট শামসুদ্দিন মোঃ রেজার নেতৃত্বে ভ্রাম্যমান আদালত চৌধুরী বাজারে অভিযান পরিচালনা করে। এ সময় রকি স্টোরে পেঁয়াজ মজুদ রাখায় ও অতিরিক্ত দামে বিক্রি করার অপরাধে ভোক্তা অধিকার আইনের ৪০ ধারায় মামলা ও ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করে ভ্রাম্যমান আদালত। দুপুর ২টা থেকে ৩টা পর্যন্ত হবিগঞ্জ সদর উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভূমি) মাসফিকা হোসেন নেতৃত্বে উমেদনগরের শিল্পনগরী এলাকায় বিভিন্ন ধান চালের দোকান ও অটোরাইচ মিলে ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করা হয়। পাটের বস্তা ব্যবহার না করায় পণ্যে পাটজাত মোড়কের বাধ্যতামূলক ব্যবহার আইন ২০১০ এ ধারায় একটি প্রতিষ্ঠানকে ১০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয় এবং তার নেতৃত্বে চৌধুরী বাজারে পেঁয়াজ ও চালের মূল্য বেশী রাখায় দুই ব্যাবসায়ীকে ১৬ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। শহরের শায়েস্তানগরে ভ্রাম্যমান আদালতের অভিযান পরিচালনা করা হয়। এ সময় পণ্যের অতিরিক্ত দাম নেয়ায় ১টি প্রতিষ্ঠানকে ভোক্তা অধিকার আইনের ৩৮ ও ৪০ ধারায় মামলা ও ১০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।
আজমিরীগঞ্জ থেকে স্বপন বণিক জানান, গতকাল বেলা ২টার দিকে সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট মোঃ মতিউর রহমান খানের নেতৃত্বে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন ২০০৯ অনুসারে আজমিরীগঞ্জ বাজারে ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করা হয়। এ সময় অস্বাভাবিক মূল্যে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য বিক্রি, খাদ্য সামগ্রী মজুদ করণের মাধ্যমে অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টি, লাইসেন্স ব্যতিত গ্যাস সিলিন্ডার বিক্রয়, অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ ইত্যাদি অপরাধে ৮টি প্রতিষ্ঠানকে মোট ২ লাখ ৪৫ হাজার টাকা অর্থদন্ড করা হয় ও ন্যায্য মূল্যে দ্রব্য সামগ্রী বিক্রয়ের নির্দেশনা দেয়া হয়। আজমিরীগঞ্জ সদরের টান বাজারের অধীর রায়ের মুদির দোকানে দ্রব্যমূল্য বেশী রাখার দায়ে ২০ হাজার টাকা, বিমল মোদকের মিষ্টি দোকানে পচা-বাসী মিষ্টি রাখার দায়ে ২০ হাজার টাকা, নেপাল মোদকের চাউলের দোকানে অতিরিক্ত মূল্যে বিক্রির দায়ে ২০ হাজার টাকা, সফিক মিয়ার চাউলের আড়তে গ্যাস সিলিন্ডার মজুদ রাখার দায়ে ২০ হাজার টাকা, হাবিব স্টোরে গ্যাস সিলিন্ডার মজুদ রাখার দায়ে ১০ হাজার টাকা, বিকাশ মোদকের মুদি দোকানে অতিরিক্ত মূল্যে পণ্য বিক্রির দায়ে ৫০ হাজার টাকা, মোহন কুড়ির মুদি দোকানে পেঁয়াজ মজুদ রাখা ও অতিরিক্ত মূল্যে বিক্রির দায়ে ১ লাখ টাকা, সুনামগঞ্জের শাল্লা উপজেলার শ্রীহাইল গ্রামের শিহাব মিয়ার নিকট থেকে পেঁয়াজের অতিরিক্ত মূল্য রাখার দায়ে প্রজেশ কুড়িকে ৫ হাজার টাকা অর্থদন্ড ও ক্রেতার নিকট থেকে রাখা অতিরিক্ত টাকা ফেরত দেয়ার নির্দেশ প্রদান করেন এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট। ভ্রাম্যমান আদালতকে সহযোগিতা করেন আজমিরীগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ মোশারফ হোসেন তরফদারের নেতৃত্বে¡ পুলিশের একটি দল।
মাধবপুর থেকে স্টাফ রিপোর্টার জানান, মাধবপুর উপজেলার নোয়াপাড়া ও জগদীশপুর বাজারে বেশী দামে পণ্য বিক্রি করার অপরাধে ৫ ব্যবসা প্রতিষ্ঠানকে ২৫ হাজার টাকা জরিমানা করেছে ভ্রাম্যমান আদালত। শুক্রবার বিকালে উপজেলার সহকারি কমিশনার ভূমি আয়েশা আক্তার ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করেন। ভ্রাম্যমান আদালত জগদীশপুর বাজারে বেশী দামে পণ্য বিক্রি করার অপরাধে ২ দু’ব্যবসায়ীকে ১০ হাজার টাকা এবং নোয়াপাড়া বাজারে ৩ ব্যবসায়ীকে ১৫ হাজার টাকা জরিমানা করেন। সহকারি কমিশনার ভূমি আয়েশা আক্তার জানান, করোনা ভাইরাসের অজুহাতে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী দ্রব্যমূল্যের দাম বৃদ্ধির অপচেষ্টায় লিপ্ত। যদি কোন ব্যবসায়ী বেশী দামে পণ্য বিক্রি করে তাহলে তার বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।
হবিগঞ্জের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ কামরুল হাসান এসব তথ্য নিশ্চিত করে বলেন- দেশে খাদ্যশস্যের কোন সংকট নেই। কোন প্রকার গুজবকে পুজি করে অন্যায়ভাবে মূল্য বৃদ্ধি করলে আইনানুগ কঠিন শাস্তি প্রদান করা হবে। সকলকে সতর্ক ও সচেতন হওয়ার আহবান জানান তিনি।