পাঠকের কলাম...

ডা. মোহাম্মদ আবদুল ওয়াহাব
হুম তাই বলছিলাম। সময়ে এক ফোঁড় অসময়ে দশ ফোঁড়। হয়তবা আরো একটু আগেই আমাদের আরো সতর্ক হওয়ার প্রয়োজন ছিল। আমার কিছু হবে না, আমাদের কিছু হবে না, আসুন এ ভ্রান্ত ধারণা পরিহার করি। বৈশ্বিক মহামারি ‘করোনা’ মোকাবিলায় আমরা কিন্তু মোটেও প্রস্তুত অথবা উপযুক্ত নই। ১৭ই মার্চের ‘প্রথম আলো’তে দেখলাম সরকারের হাতে সতেরো কোটি মানুষের বিপরীতে করোনা নিরুপণের জন্য মাত্র ১৭৩২টা কিট আছে। অর্থাৎ প্রায় একলক্ষ জনবলের জন্য একটা কিট। তাও আবার একটা মাত্র অনুমোদিত কেন্দ্রে নমুনা পরীক্ষার সুযোগ আছে। ইত্যবসরে ভারত ৬২টা কেন্দ্রে পরীক্ষা শুরু করে দিয়েছে।
যা বলছিলাম, চাই চাপা আগুনের মত ঢেকে রাখতে চাইলে বিস্ফোরণ ঠেকানো কিন্তু মোটেও সম্ভব নয়।
অতএব কিছু পরামর্শ তুলে ধরা হলোঃ
১) সত্বর সরকারি ও বেসরকারিভাবে প্রচুর পরিমাণে Covid-19 Screening Test Kits আমদানির ব্যবস্থা গ্রহণ করা হোক। রোগী চিহ্নিতকরণ হলে নিয়ন্ত্রণ কিছুটা সহজ হবে।
২) হোম-কোয়ারেন্টিন বন্ধ করে হাসপাতালে কোয়ারেন্টিনের ব্যবস্থা করা হোক।
৩) সকল সরকারি বেসরকারি রেস্ট ও গেস্ট হাউজকে Covid-19 রোগীর জন্য হাসপাতালে রুপান্তরিত করার পদক্ষেপ নেয়া যেতে পারে।
৪) আন্তর্জাতিক সকল ফ্লাইট সম্পূর্ণভাবে বন্ধ রাখা হোক। নৌ ও স্থলবন্দরেও যথাযথ Screening এর ব্যবস্থা করা হোক।
৫) উপযুক্ত চিকিৎসা প্রদান ও প্রাপ্তির নিমিত্তে ডাক্তার, নার্স ও সম্পৃক্ত সকল মেডিকেল পার্সনদের জন্য Proper Protection Equipment এর ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হোক।
৬) সকল নাগরিকের জন্য বিনামূল্যে বা স্বল্পমূ্ল্েয মাস্কের ব্যবস্থা করা হোক।
৭) সকল ধরনের অপচয় বন্ধ করতঃ স্বচ্ছতা বজায় রেখে প্রয়োজনে সারচার্জের মত ইমার্জেন্সি ফান্ড সংগ্রহ করা যেতে পারে।
৮) এডহক ভিত্তিতে সাময়িকভাবে প্রচুর পরিমাণে চিকিৎসক, নার্স, প্রয়োজনীয় মেডিকেল-পার্সন সহ সকল প্রকার লজিস্টিকের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হোক।
৯) ছোট-বড় সকল মিটিং, মিছিল, ওয়াজ-মাহফিল, ওরস, কমিউনিটি সেন্টার সহ যেকোন সমাবেশ বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেয়া হোক।
১০) পর্যটনকেন্দ্র, কোর্ট-কাচারি, সচিবালয়, জেলখানা ও অন্যান্য কিশোর অপরাধ কেন্দ্রসমূহে সাময়িকভাবে লোকের ঘনত্ব ও সমাগম হ্রাস করার পরিকল্পনা গ্রহণ করা হোক।
১১) টিভি, বিলবোর্ড ও অন্যান্য প্রচার মাধ্যমে জনসচেতনতা তৈরির যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করা হোক।
উল্লেখ্য, চীন যেখানে প্রথম থেকেই গুরুত্ব প্রদান করে ত্বরিত নিয়ন্ত্রণে সক্ষম হয়েছে সেখানে ইটালি কিছুটা গড়িমসি করে আজ হিমশিম খাচ্ছে। হংকং এর পূর্ব প্রস্তুতি থাকায় আজ অনেকটাই স্বস্থিতে আছে। যেখানে উন্নত পশ্চিমাবিশ্ব আজ যারপরনাই উদ্বিগ্ন সেখানে আমাদের নিশ্চুপ বসে থাকা অথবা এতবড় এক ইমার্জেন্সিকে ধামাচাপা দেয়ার কোনই সুযোগ নেই। বিস্ফোরণ ঘটে গেলে শুধু জন-বিপর্যয় নয়, আমরা অচিরেই এক বড় ধরণের অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের সম্মুখীন হতে বাধ্য। তাই বলছিলাম, নানাবিধ পদক্ষেপ নেয়ার মত এখনো অনেক সুযোগ রয়েছে।
বল কিন্তু এখনো আমাদের কোর্টেই আছে।