সহায় সম্বল সব কিছু হারিয়ে পরিবারটি এখন নিঃস্ব

রায়হান উদ্দিন সুমন, বানিয়াচঙ্গ থেকে ॥ কুমিল্লার কসবায় রেল দুর্ঘটনায় আহত হওয়া বানিয়াচঙ্গের সোহেল ও তার পরিবারের চিকিৎসা এখন অর্থের অভাবে থমকে আছে। চিকিৎসা করাতে সহায় সম্বল সব কিছু হারিয়ে এখন নিঃস্ব অবস্থায় রয়েছে এই পরিবারটি। দুর্ঘটনায় সোহেলের একমাত্র মেয়ে আদিবা আক্তার সোহার মারা যায়। তার এই মৃত্যুতে সরকার ঘোষিত এক লাখ টাকা আজও হাতে আসেনি বলে জানিয়েছেন আহত সোহেল। তবে ব্রাক্ষণবাড়িয়া জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে আহত পরিবারকে ২৫ হাজার টাকা ও বানিয়াচঙ্গ উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ১০ হাজার প্রদান করা হয় তাদেরকে। ঘটনার পরপরই রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে নিহতের প্রত্যেক পরিবারকে ১ লাখ টাকা করে দেয়ার ঘোষণা প্রদান করেছিলেন। মন্ত্রীর এই ঘোষণা আজ পর্যন্ত বাস্তবায়ন হয়নি। রবিবার বিকেলে এ প্রতিবেদকের সাথে আলাপকালে দুর্ঘটনায় আহত সোহেল জানান, খুব কষ্ট করে আমাদের চলতে হচ্ছে। দুর্ঘটনার পর আমাদের চিকিৎসা পঙ্গু হাসপাতালে হলেও পরবর্তীতে ঢাকার সিএমএইচ-এ আমার চিকিৎসা হয়। আর আমার স্ত্রী, ছেলে, শাশুড়ির চিকিৎসা চলে পঙ্গু হাসপাতালেই। সিএমএইচ থেকে দীর্ঘদিন চিকিৎসা করিয়ে বাড়িতে আসলে পায়ে রড থাকার কারণে কয়েকদিন পরপরই আবার সিএমএইচ-এ যেতে হয়। কিন্ত এখন এই অবস্থায় হাসপাতালে যাওয়ার মতো কোনো টাকা পয়সা আমার কাছে নেই। এমন এক পরিস্থিতে আছি আহত ৪ জনের চিকিৎসা করানোর সামর্থ্য আমার আর নেই। অন্যদিকে আমার স্ত্রীর পায়েও অপারেশন করাতে হবে। তার আরো দুইটা অপারেশন দরকার। এসব চিকিৎসা করাতে এতো টাকা পয়সা কই পাই। আমার মেয়ের মৃত্যুর পর সরকারের ঘোষণাকৃত টাকাটাও আজ পর্যন্ত পেলাম না। অন্যদের দেয়া টাকা আর আত্মীয়স্বজনদের সাহায্য সহযোগিতায় চলছে চিকিৎসা। কিছুদিন প্রাইভেট ক্লিনিকেও চিকিৎসা করিয়েছি। কিন্তু এইভাবে আর কতো। রেল দুর্ঘটনায় আহত ছেলে নাফিসের হাত ও বুকের অবস্থা আগের মতোই রয়েছে। তার হাতে ও বুকে চিকিৎসা প্রয়োজন।
আহত নাজমা আক্তার জানান, রেল দুর্ঘটনায় চিরদিনের জন্য আমার বুকের ধন সোহা মনিকে হারালাম। কিন্তু এই ঘটনায় আমরা যারা আহত হয়েছি এখন অর্থের অভাবে চিকিৎসা করাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে আমাদের। তিনি কান্না জড়িত কন্ঠে বলেন, অন্তত সরকার ঘোষিত টাকাটা যদি হাতে পেতাম তাহলে কিছুটা হলেও শান্তি পেতাম। তবে শুরু থেকেই আমাদের পাশে থেকে দেশ-বিদেশের অনেক শুভাকাঙ্খি চিকিৎসার জন্য আর্থিক অনুদান দিয়েছেন। তাদের এই সহযোগীতা যদি না থাকতো তাহলে আমরা হয়তো বেঁচে-ই থাকতাম না।
বিষয়টি নিয়ে কথা হয় বানিয়াচঙ্গ উপজেলা নির্বাহী অফিসার মামুন খন্দকারের সাথে। তিনি এই প্রতিবেদককে জানান, মৃত্যুর পরপর আমরা নিহতের পরিবারের সব তথ্য ও কাগজপত্র জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে রেল মন্ত্রাণালয়ে পাঠিয়ে দিয়েছিলাম। কিন্তু তারা যে টাকাটা পায়নি সেটা আমি জানতাম না। এখন পর্যন্ত মন্ত্রণালয় থেকে আমাদের হাতে কোনো কিছু আসেনি।
প্রসঙ্গত, গত বছরের ১২ নভেম্বর দিবাগত রাত ৩টার দিকে ঢাক-চট্টগ্রাম রেলপথের ব্রাহ্মণবাড়িয়ার মন্দবাগ রেল ক্রসিংয়ে উদয়ন এক্সপ্রেস ও আন্তঃনগর তূর্ণা নিশীথার মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে ঘটনাস্থলেই ১০ জনের মৃত্যু হয়। আহত হয় অর্ধশতাধিক। পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয় আরো ৬ জনের। এ ঘটনায় নিহত হয় বানিয়াচঙ্গ তাম্বুলিটুলা মহল্লার সোহেল মিয়ার একমাত্র কন্যা আদিবা আক্তার সোহা। গুরুতর আহত হয় সোহেল, তার স্ত্রী নাজমা আক্তার, সোহেল মিয়ার ছেলে নাফিস ও শাশুড়ি রেনু বেগম।