বরফের রাজ্য সিকিম ভ্রমণ ৩

ডাঃ শেখ আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ

আনুমানিক সকাল ১০টা ৩০ মিনিটের দিকে আমরা পূর্ব সিকিমের প্রধান শহর গ্যাংটক থেকে ৫ ঘণ্টা দূরত্বের উত্তর সিকিমের ছোট শহর লাচুং এর পথে যাত্রা শুরু করলাম। জীপের সামনের সিটে বসে বুঝতে পারলাম এই যাত্রা পথ মোটেও কোনো সহজ পথ নয় কারণ যতই সামনের দিকে এগুচ্ছি ততই রাস্তা সরু হয়ে আসছে আর কিছু জায়গায় মাটির রাস্তা এই যাত্রাপথকে আরও ভীতিকর করে তুলেছে। কানে হেডফোন লাগিয়ে নিজের মনকে অন্যদিকে মনোনিবেশ করার ব্যর্থ চেষ্টা করছি। পেছনে ঘুরে দেখার চেষ্টা করলাম অন্য সবার কি অবস্থা। আমার স্ত্রী, আপন ভাবী এবং নিবিড় ভাই নিজেদের মধ্যে খোশগল্পে মশগুল!!!! আর আমার দুই পুত্র মনভার করে বসে আছে কারণ তাদের গাড়ির পেছনের সিট কখনও পছন্দ নয়।
গ্যাংটক থেকে লাচুং যাবার পথ অনেকটা দুর্গম হলেও আশেপাশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য অসাধারণ। যারা পাহাড় দেখতে পছন্দ করেন একবার এই সৌন্দর্য দেখলে সারাজীবন মনে রাখবেন এই কথা নিশ্চিতভাবে বলতেই পারি। লাচুং এর পথে বেশ কয়েকটি ছোট মাঝারি ঝর্ণা আছে। আমাদের দেশের মাধবকুন্ড, রাঙ্গামাটি এবং বান্দরবনের ঝর্ণার রুপ এর থেকে অনেক অনেক বেশি এই কথা আমি গর্ব করেই বলতে পারি।
“DRINK AND DRIVE, YOU WONT SURVIVE” এই সতর্কীকরণ সাইনবোর্ড গ্যাংটক থেকে লাচুং এর পথে কিছুক্ষণ পরপর দেখা যাচ্ছে ফলে অজানা শংকায় হেডফোনে নুসরাত ফাতেহ আলি খান এর বিখ্যাত গান আফরিন আফরিন গানটিও অনেকটা বেসুরো লাগছে। আবার মনোযোগ দিলাম শেরপা জাতির তাশি সাহেবের দিকে। বোঝার চেষ্টা করলাম কোনো অসংগতি পাই কিনা.. কিন্তু ওনার দক্ষ গাড়ি চালানো দেখে এমন কিছু মনে হচ্ছে না!!!
ইতোমধ্যে প্রায় ৩.৫ ঘণ্টার অধিক সময় অতিবাহিত হওয়ায় সবাই ছিলাম ক্ষুধার্ত এবং সেই সাথে শীত অনুভব করছি প্রবলভাবে। পেটের অবস্থা তাশি সাহেবকে বলায় উনি কিছুক্ষণ পর এসে থামলেন অপরুপ সৌন্দর্য্যস্থান বাংলাদেশের দুঃখ তিস্তা নদীর বাধ এলাকায়।
Lhamu Ges Gurudongmar লেক দুইটি উত্তর সিকিমে অবস্থিত। এর মধ্যে Gurudongmar লেকের অবস্থান সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ১৮ হাজার ১০০ ফিট উপরে যা উত্তর সিকিমের লাচেং এ অবস্থিত যেখানে কোনো এক অজানা কারণে বাংলাদেশিদের প্রবেশ নিষিদ্ধ। বলা হয়ে থাকে এই লেকটি ভারতের সবচেয়ে সুন্দর লেক। আর Tso Lhamu লেকের অবস্থান সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ১৯ হাজার ৮শ’ ফিট উপরে…তিস্তা নদীর উৎপত্তিস্থল হিমালয় পর্বতমালায় অবস্থিত এই Tso Lhamu লেক থেকেই।