লাখাই প্রতিনিধি ॥ লাখাই উপজেলার আমান উল্লাহপুর গ্রামে হত্যা মামলার আসামীদের বাড়িঘরে হামলা ভাংচুর ও লুটপাটের অভিযোগ উঠেছে। আসামীপক্ষের দাবি, তুচ্ছ বিষয় নিয়ে মফিজুল মিয়া নিহতের ঘটনায় বাড়ির বাহিরে অবস্থান করছেন তারা। এ সুযোগে বাদীপক্ষের লোকজন আসামীদের বেশ কয়েকটি বাড়ি ঘর ও আসবাবপত্র ভাংচুর করে লুটপাট চালিয়েছে।
এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, মফিজুল মিয়া নিহতের ঘটনায় মামলা দায়ের করা হলে গ্রেফতার এড়াতে আসামীরা বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে যায়। এ সুযোগে বাদীপক্ষের লোকজন ৭ ফেব্রুয়ারি সকাল ৭টায় আসামীদের বেশ কয়েকটি বাড়ি ঘর ও আসবাবপত্র ভাংচুর করে লুটপাট চালায়। আসামীপক্ষের দাবি, ভাংচুরকালে স্বর্ণালঙ্কার, নগদ টাকা, মোবাইল ফোন, ল্যাপটপ, টেলিভিশন, গোলার ধানসহ প্রায় ৩৭ লাখ টাকার মালামাল লুট করে নিয়ে গেছে। ভয়ে ৪ বাড়ির মহিলা, শিশু ও যুবতী মেয়েসহ তাদের গোষ্ঠীর অন্যান্য বাড়ির মহিলারা অন্য গ্রামে আত্মীয়ের বাড়িতে অবস্থান করছেন। অভিযোগ, ভাংচুরের সময় বাড়ির মহিলারা বাঁধা দিলে হামলাকারীরা তাদের সাথে অশালীন আচরণসহ শারীরিক নির্যাতন করে। এসময় নির্যাতনের শিকার মহিলারা সাইফুল ইসলাম নামে এক হামলাকারীর হাতে পায়ে ধরে অনুরোধ করেও রেহাই পাননি। এ ঘটনায় আকছির মিয়া বাদী হয়ে ১৩ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত আরো ৮/৯ জনকে আসামী করে ১৬ ফেব্রুয়ারি হবিগঞ্জ সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট কগঃ ০৭ আদালতে একটি মামলা দায়ের করেন।
সরেজমিন এলাকায় গেলে নির্যাতনের শিকার সাজেদা খাতুন নামে একজন বলেন, হামলাকারীরা আমার বাড়ির পশ্চিম ভিটের টিনশেড ঘরটি ভেঙ্গে প্রতিটি রুমের আসবাবপত্র, স্বর্ণালঙ্কার, নগদ টাকা, মোবাইল, গরু নিয়ে যায়। শুধু তাই নয় তারা রান্না ঘরের চুলা ভাংচুর করে এবং ঘরের উপরের টিন কেটে ফেলে। যাওয়ার সময় তারা পানির টিউবওয়েলটিও খুলে নিয়ে যায়। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই বাড়ির এক গৃহবধূ জানান, সাইফুল ইসলামের নেতৃত্বে ২০/২২ লোক হামলা করে।
পাশের বাড়ির হামিদা খাতুন ও শিউলী বেগম বলেন, হামলাকারীরা আমাদের ঘরে প্রবেশ করে ঘরের দরজা, জানালা ভেঙে আসবাবপত্র, বাথরুম ও রান্না ঘরের সকল জিনিষপত্র ভাংচুর করে স্বর্ণালঙ্কার, নগদ টাকা, গ্যাসের চুলা, টার্চ মোবাইল, সেলাই মেশিন, চাউল, ফ্যান ও গরু নিয়ে যায়।
আকছির মিয়া নামে অপর একজন জানান, সাইফুল ইসলামের হুকুমে তার সহযোগিরা আমার বাড়িতে হামলা করে। হামলাকারীরা আমার বাড়ির পশ্চিম ভিটের টিনশেড ঘরটি ভেঙ্গে প্রতিটি রুমের আসবাবপত্র, নগদ টাকাসহ মূল্যবান জিনিসপত্র নিয়ে যায়।
মুন্না, ফাতেমা ও সুইটি নামে ৩ শিক্ষার্থী জানায়, হামলাকারীরা তাদের পড়ার বই ও খাতাপত্র নিয়ে গেছে। আব্দুল হাকিম নামে একজন জানান, তার বাড়িতে হামলা চালিয়ে ঘরসহ আসবাবপত্র ভাংচুর করে মোবাইল, নগদ টাকা ও স্বর্ণালঙ্কার নিয়ে গেছে হামলাকারীরা। হামলার বিষয়ে লাখাই বটতলা বাজারে একাধিক ব্যবসায়ী ও স্থানীয় লোকের সাথে কথা হলে তারা জানান, ইতিপূর্বে আমাদের এলাকায় এরকম ঘর ভাংচুর ও লুটপাটের ঘটনা ঘটেনি।
প্রসঙ্গত, গত ৪ ফেব্রুয়ারি লাখাই উপজেলার আমান উল্লাহপুর গ্রামের হাঁসের খামারী মফিজুল মিয়ার সাথে চাচাতো ভাই বয়াতুল মিয়ার ধানের চারা নষ্ট করাকে কেন্দ্র করে কথা কাটাকাটি হয়। এক পর্যায়ে মফিজুল মিয়ার গলায় দা দিয়ে আঘাত করলে তার মৃত্যু হয়। ঘটনার পরদিন লাখাই থানায় নিহত মফিজুল মিয়ার মা নুরজাহান বেগম বাদী হয়ে ১২ জনের নাম উল্লেখ করে আরও ৭/৮ জনকে অজ্ঞাত আসামী করে হত্যা মামলা দায়ের করেন।