স্টাফ রিপোর্টার || মাধবপুর পৌরসভায় গুটিকয়েক কর্মকর্তা-কর্মচারি সিন্ডিকেটের মাধ্যমে ব্যাপক দুর্নীতি, ঘুষ বাণিজ্য সহ নানা অনিয়ম করে যাচ্ছেন। আর এতে নাগরিক সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন পৌরবাসী। পৌর নির্বাহী কর্মকর্তার যোগসাজশে উচ্চমান সহকারী ও হিসাব রক্ষণ কর্মকর্তার মাধ্যমে গড়ে উঠা এ সিন্ডিকেটের অনিয়ম দুর্নীতির বিষয়ে সরকারের উচ্চ পর্যায়ের বিভিন্ন দফতরে অভিযোগ দেয়া হলেও কোন পদক্ষেপ না নেয়ায় তারা এখন বেপরোয়া।
গত ১০ সেপ্টেম্বর মাধবপুর পৌর এলাকার সুমন ঘোষ স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব বরাবরে দায়েরকৃত এক অভিযোগে উল্লেখ করেন, মাধবপুর পৌর নির্বাহী কর্মকর্তা এম আমিনুল ইসলাম দীর্ঘ প্রায় ৮ বছর যাবৎ মাধবপুর পৌর সভায় কর্মরত আছেন। দীর্ঘদিন একই দপ্তরে কর্মরত থাকায় তিনি দুর্নীতি ও স্বজন প্রীতিতে জড়িয়ে পড়েছেন। অভিযোগ রয়েছে- পৌর এলাকার বিভিন্ন বাজার ইজারা প্রদান না করে নিজস্ব লোকজনদেরকে দিয়ে টোল আদায় করে নামমাত্র অর্থ পৌর কোষাগারে জমা দেন। সম্প্রতি মাধবপুর পৌরসভা পরিচালিত ফুলকলি পৌর কিন্ডারগার্টেন স্কুলে কোন নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি ছাড়াই গোপনে দু’জন শিক্ষক নিয়োগ করেন। এ বিষয়ে মাধবপুর পৌর এলাকার শান্তনু রায় জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব বরাবরে একটি অভিযোগ দায়ের করেন। অভিযোগে তিনি উল্লেখ করেন, কোন ধরনের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ বা পরীক্ষা গ্রহণ না করেই অতিগোপনে দু’জন শিক্ষক নিয়োগ দেয়া হয়েছে। তিনি উক্ত পদের একজন প্রার্থী হিসেবে এ নিয়োগ বাতিল করে স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় শিক্ষক নিয়োগের দাবী জানান। এছাড়া পৌর নির্বাহী কর্মকর্তার বিরুদ্ধে পৌরসভার নতুন গরুবাজার এলাকায় পৌরসভার নিজস্ব ভবনে বিনা ভাড়ায় প্রায় ৭/৮ বছর যাবৎ বসবাসের অভিযোগ রয়েছে। এছাড়া গরুবাজার এলাকায় বাউন্ডারী ওয়ালের দুই শতাধিক গ্রীল বিক্রি, পৌর পানি শোধনাগার নির্মাণের সময় উত্তোলিত মাটি বিক্রির অর্থ এবং গরু বাজারের পূর্ব পার্শ্বে ভবন মালিকদের কাছ থেকে বিভিন্ন সময় রাস্তার ক্ষতিপূরণ বাবদ আদায়কৃত অর্থ পৌর কোষাগারে জমা না দিয়ে আত্বসাৎ সহ পৌরসভার অব্যবহৃত মিকছার মেশিন, পুরাতন ফ্যান, ভ্যানগাড়ী ও বিভিন্ন মালামাল বিক্রি করে অর্থ কোষাগারে জমা না দেয়ার অভিযোগ রয়েছে। পৌর নির্বাহী কর্মকর্তা ও পৌর হিসাব রক্ষণ কর্মকর্তা হিরেন্দ্র চন্দ্র পালের যোগসাজশে পৌরসভার কর্মকর্তা-কর্মচারিদের প্রাপ্ত আনুতোষিক তহবিলের অর্থ এবং বিভিন্ন সময়ে সরকার প্রদত্ত বেতন ভাতাদি খাতের বরাদ্দকৃত অর্থ নিজের হিসেবে স্থানান্তর করেছেন মর্মে কর্মচারীদের পক্ষ থেকে অভিযোগ দেয়া হয়েছে। এছাড়া গত ১৩ আগস্ট ও ২২ জুন মাধবপুর পৌরসভার টিকাদান সুপারভাইজার পল্লবী বণিকের দায়েরকৃত এক অভিযোগের প্রেক্ষিতে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সহকারী কমিশনার পৃথিন্দ্র চাকমা ও সিনিয়র সহকারী কমিশনার রিপামনি দেবী পৌর হিসাব রক্ষণ কর্মকর্তা হিরেন্দ্র পালকে কারণ দর্শানো এবং তার বিরুদ্ধে বিধি মোতাববেক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেন। পৌর নির্বাহী কর্মকর্তা এম আমিনুল ইসলামের দুর্নীতির সহযোগী পৌরসভার উচ্চমান সহকারী রনি চন্দ্র বণিকের দুর্নীতি ও অনিয়মের বিরুদ্ধে সরেজমিন তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিল করার জন্য গত ৮ জুলাই জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সহকারী কমিশনার মোহাম্মদ ফরহাদ উদ্দীন অভি নির্দেশ ক্রমে অনুরোধ করেন। পৌরসভার পক্ষ থেকে নিয়ম বহির্ভূত ভাবে মাধবপুর উপজেলা কমপ্লেক্সের গেইট নির্মাণের দরপত্র আহ্বান, পৌরসভার অর্থায়নে শুধুমাত্র উপজেলা কমপ্লেক্স মসজিদে ঈদ জামায়াতের জন্য অর্থ বরাদ্দ এবং অনিয়মের মাধ্যমে পৌরসভার অর্থায়নে উপজেলা চত্বরে বাউন্ডারী ওয়ালের নিচে মাটি ভরাটেরও অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।
© স্বত্ব দৈনিক হবিগঞ্জের মুখ ২০১৯
ওয়েবসাইটটি তৈরী করেছে ThemesBazar.Com