চুনারুঘাট প্রতিনিধি || হবিগঞ্জের সাতছড়ি জাতীয় উদ্যানে কর্মরত রেঞ্জ কর্মকর্তা মো. মামুনুর রশিদের বিরুদ্ধে সাংবাদিকদের ওপর হামলার অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে। এ ঘটনায় তাকে সাময়িক বরখাস্ত করে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়। গতকাল বুধবার (১৭ সেপ্টেম্বর) সকালে এ তথ্য নিশ্চিত করেন সিলেটের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) মো. আবুল কালাম।
জানা যায়, গত ১১ সেপ্টেম্বর মন্ত্রণালয় থেকে জারি করা এক প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়, সাতছড়ি জাতীয় উদ্যানে গাছ চুরির সংবাদ সংগ্রহে গেলে সাংবাদিকদের ওপর হামলার ঘটনায় রেঞ্জ কর্মকর্তা মামুনুর রশিদের সম্পৃক্ততা তদন্তে প্রমাণিত হয়েছে। এছাড়া আরো কিছু গুরুতর অভিযোগের প্রেক্ষিতে ওই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে দ্রুত বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্যে বন অধিদপ্তরের প্রধান বন সংরক্ষককে (সিসিএফ) নির্দেশ দেওয়া হয়।
মন্ত্রণালয়ের উপসচিব তুষার কান্তি পাল স্বাক্ষরিত প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, সাংবাদিকদের সাথে কটু আচরণ, কিছু সাংবাদিককে হোটেলে খাওয়ানোর নামে অনিয়ম ও দায়িত্ব পালনে অবহেলার অভিযোগে রেঞ্জ কর্মকর্তা মামুনুর রশিদের বিরুদ্ধে সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা, ২০১৮ অনুযায়ী বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। একই সঙ্গে তাকে সাময়িক বরখাস্ত করারও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
এর আগে একই মন্ত্রণালয় থেকে সাতছডড়ি জাতীয় উদ্যানের সব কর্মকর্তা-কর্মচারিকে বাধ্যতামূলক বদলি করার নির্দেশও দেওয়া হয়।
প্রসঙ্গত, সম্প্রতি দৈনিক কালবেলার সাংবাদিক মুজাহিদ মসি ও বাংলা টাইমসের সাংবাদিক ত্রিপুরারী দেবনাথ টিপু সাতছড়ি জাতীয় উদ্যানে গাছ পাচারের অভিযোগে সংবাদ সংগ্রহ করতে গেলে ওই বন কর্মকর্তার নেতৃত্বে সাংবাদিকরা হামলার শিকার হন। পরে ঘটনাটি ধামাচাপা দিতে উল্টো তাদের বিরুদ্ধেই থানায় চাঁদাবাজির মামলা দায়ের করা হয়। গণমাধ্যমে ঘটনাটি ব্যাপক প্রচারিত হলে মন্ত্রণালয় তদন্ত কমিটি গঠন করে। তদন্তে মামুনুর রশিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হলে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করা হয়।
এর আগে সাতছড়ি সংরক্ষিত বনাঞ্চল থেকে সেগুন গাছ পাচারের দৃশ্য ধারণ করায় এক সাংবাদিকের ওপর হামলার অভিযোগে চার বন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে হবিগঞ্জের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে সাংবাদিক মুজাহিদ মসি একটি মামল দায়ের করেন। বিচারক মুহাম্মদ শাহেদুল আলম দীর্ঘ শুনানি শেষে মামলাটি আমলে নিয়ে পিবিআই হবিগঞ্জকে তদন্তের নির্দেশ দেন। মামলা সিআর নং-৭৪৫/২৫ হিসেবে নথিভুক্ত হয় এবং আগামী ১২ ডিসেম্বরের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশনা দেওয়া হয়।
সাংবাদিক মুজাহিদ মসি বলেন, ‘আমরা শুধু সত্য প্রকাশের জন্য ঘটনাস্থলে গিয়েছিলাম। কিন্তু ওই কর্মকর্তা ও তার সহকর্মীদের আচরণ আমাদের জন্য ভয়ঙ্কর ছিল। দোষীদের দৃশ্যমান কিছু শাস্তি হওয়ায় আমরা স্বস্তি অনুভব করছি।’
এদিকে অপর এক নির্দেশনায় বলা হয়েছে, প্রাকৃতিকভাবে সমৃদ্ধ রেমা-কালেঙ্গা অভয়ারণ্য ও সাতছড়ি জাতীয় উদ্যানে রয়েছে নানা প্রজাতির উদ্ভিদ ও প্রাণী। তবে এই বনাঞ্চল থেকে প্রায়শই গাছ কাটার খবর আসে।
উভয় বন ও বন্যপ্রাণীর সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার স্বার্থে দীর্ঘদিন কর্মরত কর্মকর্তাদের কর্মস্থল পরিবর্তন জরুরি। কালেঙ্গা রেঞ্জের ছনবাড়ি বিট, রশিদপুর ও রেমা বিট ও সাতছড়ি জাতীয় উদ্যানে দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তাদের বদল করে মন্ত্রণালয়কে অবহিত করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।