বিলের সৌন্দর্যের আকর্ষণে ভোর থেকেই ছুটে যান তরুণ তরুণীরা
আবুল কালাম আজাদ, চুনারুঘাট থেকে ॥ চারদিকে সবুজ সারি সারি চা গাছ। নীল আকাশে সাদা মেঘের ভেলা, মাঝখানে লাল শাপলার বিল। বিলের কালচে পানির ওপর সবুজের ফাঁকে থরে থরে ফুটে আছে লাল শাপলা। সব কিছু মিলিয়ে প্রকৃতিকে ভিন্ন এক রূপে সাজিয়ে তোলা হয়েছে যেন রংতুলির আঁচড়ে। দূর থেকে দেখলে মনে হয় পানির ওপরে লাল গালিচা বিছানো রয়েছে।
এক পলক দেখলেই চোখ জুড়িয়ে যায়। মুগ্ধতা ছড়ানো হবিগঞ্জের চুনারুঘাট উপজেলার দেউন্দি চা বাগানের এ শাপলার বিলে গত কয়েক বছর ধরেই প্রকৃতি প্রেমীদের আনাগোনা। তবে এবার এ বিলে যেন মানুষের মেলা। রাতে শাপলা ফুটে তাই ফুটন্ত ফুল দেখতে সকালে মানুষের ভিড় জমে বিলে। শুধু কি সকালে, গত এক সপ্তাহ ধরে বিকেলেও মানুষের ভিড় জমে উঠে এ বিলের পাড়ে।
প্রকৃতির এক সুন্দর লীলাভূমি চা বাগান। আর চা বাগানের ভেতরে যখন লাল শাপলা বিলের সন্ধান মিলে তাহলে আর কে আটকায় প্রকৃতি প্রেমীদের। সরজমিনে দেখা যায় বাগান কর্তৃপক্ষ বিলের চার পাশে বড় গাছ ও বাঁশ দিয়ে রাস্তায় বেড়া দিয়ে, চৌকিদার বসিয়ে আটকাতে পারছে না মানুষ ও যানবাহনের ভিড়। বিলের সৌন্দর্যের আকর্ষণে কাক ডাকা ভোর থেকেই ছুটে চলেছে তরুণ তরুণীরা।
চা বাগানের অভ্যন্তরে চা গাছের শুস্ক মৌসুমে পানি ধরে রাখার জন্য চা বাগানের জন্ম থেকেই তৈরী এসব বিলে সারা বছর পানি থাকে। সব চা বাগানেই এমন বিল রয়েছে। প্রায় ১ থেকে ২০ একর জায়গা জুড়ে থাকা এ বিলটিতেই একমাত্র লাল শাপলা দেখা যায়। গত সপ্তাহে বিলে ফুল ফুটেছে এমন প্রচার সোস্যাল মিডিয়ায় আসতেই প্রকৃতি প্রেমীরা হুমড়ি খেয়ে পড়ছেন বিলে। দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকেও আসছেন পর্যটকরা। ভোরে এবং বিকেলে আনন্দ ভাগাভাগি করছেন ভ্রমন পিপাসুরা। তবে এর মধ্যেই ভাল না লাগার বিষয় হলো এ বিলে যারাই আসছেন, তাদের অধিকাংশই ফুল ছিড়ে ছবি তুলছেন। মুলত ছবি তোলার জন্যই ফুল ছিড়ে নিচ্ছেন। এমনটি চা বাগানের শ্রমিকের ছেলে মেয়েরাও এ ফুল ছিড়ে এখন ভ্রমন পিপাসুদের কাছে বিক্রি করছেন। এরই মধ্যে জেলার একমাত্র ‘লাল শাপলা বিল’ নামে পরিচিত হয়ে উঠেছে এ বিল।। চা বাগানের ভেতরে গ্রামীণ প্রকৃতির মধ্যে শাপলার এই অবারিত রঙিন রূপ যে কাউকে মুগ্ধ করে।
সাধারণত অক্টোবর ও নভেম্বর মাসে এই বিলে লাল শাপলা ফুল ফুটে। এই সময়ে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে অনেক পর্যটক ফুটন্ত লাল শাপলা ফুল দেখতে আসেন। বৃহস্পতিবার সরেজমিনে বিলে গিয়ে স্থানীয় কয়েখ যুবকের সঙ্গে কথা হয়। তারা জানান, হবিগঞ্জ থেকে এসেছেন লাল শাপলা বিল দেখতে। দুরে হওয়ার কারণে সকালে না আসতে পেরে বিকেলে এসেছেন, কিন্তু ফুটন্ত ফুল দেখতে না পেলেও তারা খুশি, বিলটি দেখতে পেরেছেন। চুনারুঘাট শহর থেকে সকালে বিলে যাওয়া দুই যুবক আক্ষেপ করে জানান, এত সুন্দর শাপলা বিল, কিন্তু লোকজন ফুল ছিড়ে নিয়ে যাচ্ছে, শুধু ছবি তোলার জন্য। বাগানের চৌকিদার বাধাঁ দিয়েও কাউকে আটকাতে পারছেন না।
চুনারুঘাট পুবালী ব্যাংকের ম্যানেজার মোঃ মহিউদ্দিন ভুইয়া বলেন, খুব সুন্দর লাল শাপলা বিল, কিন্তু যে যেভাবে পারছে ফুল ছিড়ে নিয়ে ছবি তুলছে, এতে সৌন্দর্য নষ্ট হওয়ার পাশাপাশি প্রকৃতির অনিন্দ সুন্দর শাপলা ফুল বংসবিস্তারের ক্ষতি হচ্ছে। ফুল ছেড়ার কারণে বীজ হবে না। এতে বিলে আগামীতে কমে যাবে গাছ ও ফুল। তিনি সকলকে এ বিষয়ে সচেতন হওয়ার আহবান জানিয়েছেন।
© স্বত্ব দৈনিক হবিগঞ্জের মুখ ২০১৯
ওয়েবসাইটটি তৈরী করেছে ThemesBazar.Com