এখন যেভাবে পৌরসভার নির্দিষ্ট লোকেরা বাসাবাড়ি থেকে বর্জ্য নিয়ে যায়, তৎকালে সুইপাররা লেট্রিনের ময়লা নিয়ে যেতো
ডাঃ তপন দাশগুপ্তের পরিবারের বাসা উমেশ ভবন ছিল আভিজাত্যের প্রতীক
মঈন উদ্দিন আহমেদ ॥ হবিগঞ্জ শহর সম্পর্কে স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে শহরের পুরানমুন্সেফ এলাকার বাসিন্দা মোঃ শরীফ উল্লাহ আরো বলেন- তখনকার সময়ে বর্তমান মোহন সিনেমা হলের নাম ছিল ‘অঞ্জলী’। এর ম্যানেজার (খান সাহেব হিসেবে পরিচিত), পুরান মুন্সেফ এলাকার বাসিন্দা ওয়াহিদ খান, রাজনগরের মতিন কন্ট্রাক্টর, মোহনপুরের মাদাই কন্ট্রাক্টর, সুলতান মামদপুরের মহারাজ মিয়া এদের প্রত্যেকের ৫০ সি.সি. হোন্ডা ছিল। এগুলো যখন রাস্তায় চলাচল করতো তখন অনেকেই রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে থাকতো দেখার জন্য। তৎকালীন সময়ে পাকা দালান বলতে শহরের পুরাতন হাসপাতাল এলাকার ডাঃ তপন দাশ গুপ্তের পরিবারের উমেশ ভবন ছিল উল্লেখযোগ্য। এটি যেমন দেখতে সুন্দর ছিল তেমনি এটি ছিল আভিজাত্যেরও প্রতীক। এছাড়া আলম শেঠ বিল্ডিং, রাজনগরের মতিন কন্ট্রাক্টরের দোতলা বিল্ডিং ছিল উল্লেখযোগ্য। আর ব্যবসায়ীদের মধ্যে আলম শেঠ, কুদ্দুছ খান, পান্ডব পাল, শ্রীশ পাল, ঈশ^র পাল, মমতাজ মিয়া ছিলেন উল্লেখযোগ্য। তৎকালীন সময়ে ব্যবসায়ীদের কোন সংগঠন না থাকলেও মার্চেন্ট এসোসিয়েশন ছিল। আর এর সভাপতি ছিলেন ছবর উদ্দিন হাজী। তার বাসা ছিল ছবর মঞ্জিল (ব্যাক রোডের গানিংপার্ক এলাকায়)। পরে মার্চেন্ট এসোসিয়েশনের সভাপতি হন সর্বশেষ রিচি ইউপি’র নির্বাচিত চেয়ারম্যান মরহুম মোঃ আব্দুর রহিমের পিতা ওয়াহাব মিয়া।
তৎকালীন সময়ে শহরের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ছিল একটি দুর্বিসহ বিষয়। প্রায় প্রতিটি টয়লেট ছিল কাঁচা। টয়লেট থাকতো বাসাবাড়ি থেকে একটি নির্দিষ্ট দূরত্বে। যা সার্ভিস লেট্রিন হিসেবে পরিচিত ছিল। প্রতিটি টয়লেটের নিচে একটি টিন থাকতো। ওই টিনই ছিল এখনকার কমোড, ওই টিনে ময়লা জমা হতো। লেট্রিনের পেছন দিকে কিছুটা খোলা জায়গা থাকতো। সুইপাররা ভোর রাতে টয়লেট থেকে ওই টিন নিয়ে যেতো। টিনের ময়লা ড্রামে অপসারণ করে টিনটি পুনরায় লেট্রিনে সযতনে রেখে দিতো। পরে ওই ড্রাম মহিষ টানা গাড়িতে করে নির্দিষ্ট স্থানে ফেলা হতো। যখন ময়লার গাড়ি নিয়ে যাওয়া হতো তখন দুর্গন্ধে রাস্তায় চলাচল করা মুশকিল হয়ে উঠতো। ব্যাপারটা অনেকটা এরকম ছিল যে, এখন যেভাবে পৌরসভার নির্দিষ্ট লোকেরা মানুষের বাসাবাড়ি থেকে বর্জ্য নিয়ে যায়, তৎকালে সুইপাররা মানুষের বাসার লেট্রিনের ময়লা টিনে করে নিয়ে যেতো।