১৬ অক্টোবর কোজাগরী পূর্ণিমার মধ্য দিয়ে শেষ হবে দেবীপক্ষ
স্টাফ রিপোর্টার ॥ দেবী দুর্গার বিসর্জনের মধ্য দিয়ে শেষ হয়েছে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের অন্যতম ধর্মীয় উৎসব দুর্গাপূজা। আগামী বছরের অপেক্ষায় থেকে দুর্গতিনাশিনী দেবীকে দেবালয়ে বিদায় জানালেন ভুবনের বাসিন্দারা। ষষ্ঠী তিথিতে বেলতলায় দেবীর নিদ্রাভঙ্গের বন্দনায় যে উৎসবের সূচনা হয়েছিল, তার সাঙ্গ হল বিজয়া দশমীতে। এবার তিথির কারণে মহানবমী পূজার পরই শনিবার দশমীর বিহিত পূজা এবং দর্পণ বিসর্জন অনুষ্ঠিত হয়েছে। এ কারণে শনিবারই বিজয়া দশমীর পুষ্পাঞ্জলির মাধ্যমে দুর্গতিনাশিনীর কাছে অশুভ শক্তির বিনাশের প্রার্থনা শেষ করেছেন ভক্তরা। আর রোববার কেবল দেবী দুর্গার প্রতিমা আনুষ্ঠানিকভাবে বিসর্জন হয়েছে।
হবিগঞ্জ শহরসহ গোটা জেলায় খোয়াই নদীসহ বিভিন্ন স্থানে প্রতিমা বিসর্জন সম্পন্ন হয়েছে। হবিগঞ্জ শহরের চৌধুরী বাজারে খোয়াই নদীর ঘাটে প্রতিমা বিসর্জন দেওয়া হয়। রবিবার (১৩ অক্টোবর) সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় উৎসব শারদীয় দুর্গোৎসব শেষে ভক্তরা চোখের জলে এসব প্রতিমা বিসর্জন দেন। হবিগঞ্জ শহরে দুর্গাপূজা সেনাবাহিনী, র‌্যাব, পুলিশ ও আনসারের নিবিড় পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে সম্পন্ন হয়েছে। শুরু থেকে ম-পগুলোতে প্রশাসনের কঠোর উপস্থিতি ও কড়া নজরদারি ছিল। ম-গুলোতে দেখা যায় পুলিশ শেষ সময় পর্যন্ত অবস্থান করছে।
প্রচলিত বিশ্বাস অনুযায়ী, প্রতি শরতে শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে স্বর্গলোক কৈলাস ছেড়ে মর্ত্যে আসেন দেবী দুর্গা। নির্দিষ্ট তিথি পর্যন্ত বাবার বাড়িতে কাটিয়ে আবার ফিরে যান দেবালয়ের কৈলাসে স্বামীর বাড়িতে। দেবীর অবস্থানকালে এই পাঁচ দিন পৃথিবীতে ভক্তরা দেবীর বন্দনা করেন। দেবী দুর্গার প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে শারদীয় দুর্গোৎসবের সমাপ্তি হয়েছে। দেবীকে বিদায় জানাতে খোয়াই নদীর তীরে জড়ো হন হাজারো ভক্ত। শহর ঘুরে প্রতিমা বহনকারী গাড়িগুলো যখন এগিয়ে যায় তখন সড়কের দুপাশে দাঁড়িয়ে থেকে দেবীকে বিদায় জানান হাজার হাজার ভক্ত। প্রতিমা বিসর্জনের সময় অনেক ভক্ত অশ্রুসিক্ত থাকেন। আবার অনেকেই ক্ষণটিকে সুন্দর করে কাটাতে নেচে-গেয়ে উদযাপন করেন। বিসর্জনের আয়োজন দুর্গা পূজার স্থায়ী সাংস্কৃতিক ও আধ্যাত্মিক তাৎপর্য তুলে ধরে।
শাস্ত্র মতে, এবার দেবী দুর্গা কৈলাস থেকে সপরিবারে মর্ত্যলোকে এসেছেন দোলায় চড়ে। আর ফিরে যাচ্ছেন ঘোড়ায়।
বিজয়া দশমীতে পূজা উদযাপনের প্রধান আচারের অংশ হিসেবে এদিন নারীরা সিদুঁর খেলায় অংশ নেন। শহরের ম-প ও মন্দিরে দুর্গার পায়ে সিঁদুর নিবেদন করেন, যা ঐতিহ্যবাহী সিঁদুর খেলার অংশ। এই আচারটি দেবী দুর্গার শক্তির প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করে। তারপর হিন্দু নারীরা একে অপরের গায়ে সিঁদুর মাখিয়ে জীবনে সমৃদ্ধি কামনা করেন।
হবিগঞ্জের আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী সূত্র জানায়, পূজা সম্পন্ন হওয়ার পথে যাতে কোনো বিঘœ না ঘটে এ জন্য পুলিশ, সেনাবাহিনী ও আনসার দায়িত্ব পালন করেছে। পূজা সুন্দরভাবে সম্পন্ন হয়েছে। পূজা ম-পে পুলিশ-সেনাবাহিনী ও আনসারের নিরাপত্তায় আয়োজকরা খুশি।
বাঙালি হিন্দুদের মতে, দেবী দুর্গা প্রতিবাদ ও প্রতিরোধের দেবী। একই সাথে তিনি ‘মাতৃরূপেণ’, ‘শক্তিরূপেণ’। গত ২ অক্টোবর মহালয়ার দিন সূচনা হয়েছে দেবীপক্ষের, আগামী ১৬ অক্টোবর কোজাগরী পূর্ণিমার মধ্যে দিয়ে শেষ হবে দেবীপক্ষ।