যুগ অনেক অনেক পালটেছে। বহুকিছু বদলেছে। পোষাক-আশাক, কথা-বার্তা, চাল-চলন, মেলা-মেশা সবকিছু বদলেছে। যেমন মাথায় হিজাবের ব্যবহার বেড়েছে তেমনি বুকের উড়না উধাও হয়েছে… লিভ টু গেদার, রুম শেয়ার করে থাকা আজকাল বড় বড় শহরে মাছ ভাত… টিকটক, ফ্যাশন এসবে যারা ব্যস্ত থাকেন তাদের ছেলেবন্ধুর অভাব হয় না। বিয়ে করা সুন্নত আর তালাক আল্লাহর কাছে ঘৃন্য শব্দ

তাহমিনা বেগম গিনি

কদিন আগে ঢাকা গিয়েছিলাম চিকিৎসার জন্য। বরাবরই আমার অভ্যাস আশে পাশে সবকিছু দেখা এবং নীরবে কথা শোনা। তারপর নিজ মনে উপলব্দি করা। বলতে গেলে বাবাটা ছেলের বাবাই। সোফায় বসে আছি হঠাৎ একজন এসে ছেলেটিকে বললো- “জানিস রূপা আর রূপকের কাল ডিভোর্স হয়ে গিয়েছে।” দুজনকেই দেখলাম খুব অবাক হতে। ছেলেটি চলে যাওয়ার পর আমি ঘরের ছেলেকে প্রশ্ন করলাম কি হয়েছে বাবা। সে খুব রেগে বললো “জানেন চাচী মেয়েদের এখন ডিভোর্সের সংখ্যা কত? প্রতিদিন ৮০ ভাগ মেয়েই ডিভোর্স দেয়। মেয়েরাই এখন এগিয়ে।” আমি যে এ ব্যাপারে জানি না তা নয় এবং আমার নিজের কাছেও এই জিনিসটি খুব খারাপ লাগে। আমি তো সত্তরোর্ধ মহিলা। ছোট বেলা থেকে দেখে এসেছি, শুনেছি ডিভোর্সি মহিলাদের খুব খারাপ বলা হয়। যে বংশে এমন একজন মেয়ে থাকে সে বংশের একটা কলংক হয়ে যায়। অন্য মেয়েদের বিয়ে হতে অসুবিধা হয়। যুগ অনেক অনেক পালটেছে। বহুকিছু বদলেছে। পোষাক-আশাক, কথা-বার্তা, চাল-চলন, মেলা-মেশা সবকিছু বদলেছে। যেমন মাথায় হিজাবের ব্যবহার বেড়েছে তেমনি বুকের উড়না উধাও হয়েছে। মেয়েদের পাজামা উঠতে উঠতে পা এর ঘন্টিরও ৩/৪ আঙ্গুল উপরে উঠেছে। ছেলেদের থ্রি-কোয়ার্টার প্যান্ট এখন হাফ প্যান্ট হয়েছে। পোশাক নিয়ে আমার কোনো বিতর্ক নেই, কারণ পরিবারের সম্মতি আছে বলেইতো আমাদের ছেলে মেয়েরা এসব পড়ছে। কত দিবস কত রঙিন স্বপ্ন নিয়ে আসে। মোবাইলে একজন নয় বেশ কয়েকজন বন্ধু থাকে উভয় লিঙ্গেরই। কত রকম মেলামেশা, তারপর আত্মহত্যারও খবর পাই কাগজের পাতায়। অথচ তারা সবাই স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রী। উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে বিয়ে করে শিক্ষিত ছেলেকে। কখনো বেতন পায় প্রায় সমান কখনো কিছু কম। আসল কারণটাই হলো এখানে। আমরা সবাই চাই মেয়েরা আর্থিকভাবে স্বচ্ছল হোক। তার মানে এই নাতো সামান্য ব্যাপারে ডিভোর্স হতে হবে। কারণ নারী তখন ভাবে আমিওতো বেতন পাই। অন্যের কথা কেন শুনবো? যারা এই মানসিকতায় চাকরী করে বা শিক্ষিত হয় তাদেরকে আমি শিক্ষিত বলবোনা এবং এই কারণেই নারীদের ডিভোর্সের সংখ্যা বেড়ে গিয়েছে। লিভ টু গেদার, রুম শেয়ার করে থাকা আজকাল বড় বড় শহরে মাছ ভাত। এখন আমার মনে হয় এই জন্য কি আমরা মেয়েদের শিক্ষিত করি? চরম অশান্তিতে ডিভোর্স সবাই মেনে নেয় কিন্তু খুব সামান্য ব্যাপারে কথায় কথায় “তোমাকে ছেড়ে দিবো” কেমন লাগে শুনতে? আমি নিজেও একজন নারী এবং সর্ব্বোচ্চ শিক্ষিত। ৫০ বছরের বিবাহিত জীবনে শুধুই কি হেসেছি? অনেক কান্নাও করেছি কিন্তু ছেড়ে যাবার কথা কখনো ভাবিনি। তারপর আছে সন্তান। সবচেয়ে দুদর্শাগ্রস্থ হয় সন্তানেরা। জিজ্ঞাসা করে দেখুন সন্তানদের, তারা দুজনের কাছেই থাকতে চায়। খুব ভাবনার বিষয় সমাজের এই অবস্থা। প্রতিটি ধর্মগ্রন্থে মেয়েদের সম্পর্কে বলা আছে। আসলে আমরা গেজেটের যুগে ধর্মগ্রন্থ থেকে অনেক দূরে সরে এসেছি। তাইতো সমাজে আজকাল কত অঘটন ঘটছে। আমাদের নেত্রীস্থানীয় নারীরা মেয়েদের জন্য অনেক আন্দোলন করেছেন, কিন্তু কেউ ধর্মকে বাদ দিয়ে কিছু করেননি। বেগম রোকেয়া বলেছিলেন “তোমাদের মেয়েদের লেখাপড়া শিখাইয়া ছাড়িয়া দাও। তাহাদের ভাত কাপড় তাহারা জোগাড় করিয়া লইবে।” খুব সুন্দর কথা কিন্তু কেউ কি কখনো বেগম রোকেয়ার বেপর্দা ছবি দেখেছেন?
কথায় আছে- “সংসার সুখি হয় রমনীর গুণে, গুণবান পতি যদি থাকে তার সনে।” অতএব জীবনের প্রারম্ভে দেখে নিন, খুঁজে নিন যোগ্য ব্যক্তিকে। টিকটক, ফ্যাশন এসবে যারা ব্যস্ত থাকেন তাদের ছেলেবন্ধুর অভাব হয় না। বিয়ের কোনো প্রয়োজন নেই। বিয়ে করা সুন্নত আর তালাক আল্লাহর কাছে ঘৃন্য শব্দ। আজকাল অনেক অনুষ্ঠানে অনেক পুরুষরা বলেন, ম্যাডাম নারী নির্যাতনের কথা বলেন পুরুষ নির্যাতনের কথাতো বলেন না। আসলে আমরা কোন নির্যাতন চাই না। আসুন এমন সমাজ গড়ি নারী পুরুষের সমন্বিত চেষ্টায় একটি সুন্দর সমাজ, সুখী পরিবার প্রাণবন্ত পরিবেশে শিশুদের গড়ে তুলি। নারী তুমি তোমার সন্তানের কথা ভাবো। অনেকে ঝঁৎমবয গড়ঃযবৎ বলে গর্ব করেন। এখানে গর্বের কিছু নেই। কত জন সৎ চরিত্রবান পুরুষকে আমরা খুঁজে পাবো জানিনা কিন্তু সৎ একলা নারী বহু দৃষ্টিতে ধর্ষিত হন। এটাই আমাদের সমাজের অবস্থা। দিন দিন আরো নিম্নগামী হচ্ছে। কারো মনকষ্টের জন্য আমি এই লেখা লিখিনি। আমিও নারী খুব খারাপ লেগেছিল ছেলেটির কথা শুনে তাই লিখে ফেললাম। জানিনা এমন যারা করেন তাদের মনে কখনো এমন হয় কি-না- আমার প্রিয় কবি নজরুল বলেছেন-
“তুমি শূন্য, আমি শূন্য শূন্য চারিধার
মধ্যে কাঁদে বারিধার রিক্ত হাহাকার”