স্টাফ রিপোর্টার ॥ বিএনপির রাজনীতিতে আলহাজ্ব জি কে গউছের ৪০ বছর পূর্ণ হয়েছে। এই দীর্ঘ পথচলা মুটেও তার জন্য মসৃণ ছিল না। অনেক প্রতিকুল পরিস্থিতি ও ঘাত-প্রতিঘাত অতিক্রম করতে হয়েছে। ২০টি রাজনৈতিক মামলায় আসামী হয়ে ১৪৮৮ দিন কারাভোগ করেছেন। এখনও তিনি কারাগারে রয়েছেন। কারাগারে তাকে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে। থামিয়ে দিতে দলের ভিতরে বাহিরে অনেক ষড়যন্ত্র হয়েছে। তবুও রাজপথে জি কে গউছকে থামানো যায়নি, থেমে থাকেননি। কখনো রাজপথ, কখনো কারাগার, এরমধ্যেই জি কে গউছের বিচরণ।
রাজপথে জি কে গউছ : ১৯৮৪ সালে তিনি এসএসসি পাশ করে ভর্তি হন হবিগঞ্জ বৃন্দাবন সরকারী কলেজে। একই কলেজ থেকে তিনি বিএ পাশ করেন। কলেজে ভর্তি হওয়ার পরপরই তার উপর জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল কলেজ শাখার সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব অর্পিত হয়। পড়াশোনার পাশাপাশি তখন জি কে গউছের মধ্যে ফুটে উঠে নেতৃত্বের প্রতিভা। ১৯৮৭ সালে তিনি জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল হবিগঞ্জ জেলা শাখার সভাপতি নির্বাচিত হন। টানা ৫ বছর তিনি ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৯৪ সালে তিনি হবিগঞ্জ পৌর যুবদলের সভাপতির দায়িত্ব গ্রহণ করেন। ১৯৯৫ সালে জেলা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক এবং ১৯৯৬ সালে যুবদলের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য নির্বাচিত হন। বলিষ্ট নেতৃত্বের মাধ্যমে তিনি হবিগঞ্জে যুবদলকে সু-সংগঠিত করেন। এরই ফলশ্রুতিতে তিনি হবিগঞ্জ জেলা যুবদলের সভাপতি নির্বাচিত হন। ২০০৩ সালে তিনি যুবদলের কেন্দ্রীয় সহ-সমবায় বিষয়ক সম্পাদক নির্বাচিত হন। ২০০৪ সালে বিএনপি’র তৎকালিন সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব তারেক রহমানের উপস্থিতিতে ঢাকাস্থ বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে হবিগঞ্জ জেলার অধীনস্থ বিএনপির সকল থানা ও পৌর কমিটির সভাপতি/সাধারণ সম্পাদকের গোপন ভোটে জি কে গউছ হবিগঞ্জ জেলা বিএনপি’র সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। ২০১১ সালে তিনি ২য় বারের মত হবিগঞ্জ জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মনোনীত হন। পরে তিনি বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য নির্বাচিত হন। ২০১৬ সালে তিনি বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সমবায় বিষয়ক সম্পাদক মনোনীত হন। ২০১৯ সালে তিনি হবিগঞ্জ জেলা বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক নির্বাচিত হন। দলের পক্ষ থেকে যখনই এসব দায়িত্ব অর্পিত হয়েছে তিনি বিভিন্ন ঘাত প্রতিঘাতের মধ্য দিয়ে অত্যন্ত সফলতার সাথে এসব দায়িত্ব পালন করেছেন, করে আসছেন। এই রাজনীতির পাশাপাশি তিনি দৈনিক আজকের হবিগঞ্জ নামে একটি পত্রিকার সম্পাদক ও প্রকাশকের দায়িত্ব পালন করছেন।
১৪৮৮ দিন কারাভোগ : জি কে গউছ বিভিন্ন সময়ে রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার হয়ে ২০টি মামলায় আসামী হয়েছেন। এসব মামলায় তিনি ২০২৩ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত ১৪৮৮ দিন কারাভোগ করেছেন। ১/১১ এর সময় কোনো মামলা ছাড়াই আলহাজ্ব জি কে গউছকে গ্রেফতার করে সেনাবাহিনী। পরবর্তিতে সম্পূর্ণ মিথ্যা অভিযোগে তার বিরুদ্ধে ৪টি মামলা দেয়া হয়। তৎকালিন একটি প্রভাবশালী মহলের ষড়যন্ত্রের শিকার হয়ে ৫শ ৯১ দিন কারাভোগের পর তিনি কারামুক্ত হন। এই মামলাগুলো আদালতে মিথ্যা প্রমাণিত হওয়ায় সবকটি মামলা থেকে তিনি বেকসুর খালাস পেয়েছেন। ২০১৪ সালে সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এএমএস কিবরিয়া হত্যাকান্ডের ১২ বছর পর ৪র্থ সম্পূরক চার্জশীটে হত্যা ও বিস্ফোরক আইনে দায়েরকৃত ২টি মামলায় জি কে গউছকে আসামী শ্রেণীভুক্ত করা হয়। অথচ ঘটনার সময় তিনি পবিত্র হজ্বব্রত পালনে তার পিতার সাথে পবিত্র মক্কা শরীফে অবস্থান করছিলেন। তিনি এই বছরের ২৮ ডিসেম্বর আদালতে আত্মসমর্পণ করে কারাগারে যান। এই ২টি মামলায় কারাগারে থাকা অবস্থায় সুনামগঞ্জে সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের জনসভায় বোমা হামলার ঘটনার ১২ বছর পর হত্যা ও বিস্ফোরক আইনে দায়েরকৃত ২টি মামলায় জি কে গউছকে ২০১৫ সালে শ্যোন এরেস্ট দেখানো হয়। এই ৪টি মামলায় টানা ৭শ ৩৯দিন কারাভোগের পর ২০১৭ সালের ৪ জানুয়ারী তিনি জামিনে মুক্তি পান। এসব মামলায় কারাগারে থাকা অবস্থায় ২০১৫ সালের ১৮ জুলাই হবিগঞ্জ কারাঅভ্যান্তরে পবিত্র ঈদুল ফিতরের নামাজ শেষে নিজ রুমে যাওয়ার সময় আলহাজ্ব জি কে গউছকে প্রাণে হত্যার উদ্দেশ্যে তার পিটে ছুরিকাঘাত করে শায়েস্তাগঞ্জের একাধিক হত্যা মামলার কুখ্যাত আসামী ইলিয়াছ নামে এক যুবলীগ নেতা। এতে তিনি অল্পের জন্য প্রাণে বেঁচে যান। যার ক্ষত তিনি এখনও বয়ে বেড়াচ্ছেন। ২০১৮ সালে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে হবিগঞ্জ-৩ আসনে ধানের শীষ মার্কা নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন আলহাজ্ব জি কে গউছ। এই নির্বাচনে ভোট চুরির অভিযোগে জি কে গউছকে প্রধান আসামী করে ৪টি মামলা দেয়া হয়। এই মামলায় তিনি ১৬ দিন কারাভোগ করেন। ইতিমধ্যেই সবকটি মামলা আদালতে মিথ্যা প্রমাণিত হওয়ায় তিনি বেকসুর খালাস পেয়েছেন। ২০২১ সালের ২২ ডিসেম্বর বিএনপির চেয়ারপার্সন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি ও উন্নত চিকিৎসার দাবীতে সমাবেশের আয়োজন করে হবিগঞ্জ জেলা বিএনপি। এই সমাবেশে প্রায় ১২শ রাউন্ড গুলি নিক্ষেপ করে সমাবেশটি পন্ড করে দেয় পুলিশ। এ ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে আলহাজ্ব জি কে গউছকে প্রধান আসামী করে বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের ২ হাজার নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে ২টি মামলা দায়ের করে। এই মামলায় তিনি ১৮ দিন কারাভোগ করেন। একই ঘটনায় জেলা পরিষদ রেষ্ট হাউজ ভাংচুরের অভিযোগে বিএনপির ৩/৪ শতাধিক নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে আরও একটি মামলা দায়ের করা হয়। এই মামলায় জি কে গউছকে শ্যোন এরেস্ট দেখানো হয়। পরে তিনি আদালত থেকে জামিন লাভ করেন। ২০২২ সালের ১৯ নভেম্বর বিএনপির সিলেট বিভাগীয় গণসমাবেশ সফল করার লক্ষে লাখাই উপজেলা বিএনপির এক প্রস্তুতি সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন আলহাজ্ব জি কে গউছ। এই সভায় পুলিশ হামলা করে ব্যাপক লাঠিচার্জ, গুলিবর্ষণ ও চেয়ার ভাংচুর করে। এতে জি কে গউছ সহ অনেক নেতাকর্মী গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হন। এ ঘটনায় পুলিশ জি কে গউছকে প্রধান আসামী করে বিএনপির ২৪৫ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করে। এই মামলায় তিনি আদালত থেকে জামিন লাভ করেন। ২০২৩ সালের ১৯ আগষ্ট হবিগঞ্জ জেলা বিএনপির পদযাত্রা কর্মসূচীতে পুলিশ ব্যাপক লাঠিচার্জ, টিয়ারশেল নিক্ষেপ ও গুলি বর্ষণ করে। এ সময় পুলিশের সাথে বিএনপি নেতাকর্মীদের সংঘর্ষ হয়। এ ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে জি কে গউছকে প্রধান আসামী করে বিএনপির ১২শ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে ২টি মিথ্যা মামলা দায়ের করে। এই মামলায় আগাম জামিন নিয়ে হাইকোর্ট থেকে বাসায় ফিরার পথে ২৯ আগষ্ট জি কে গউছকে উঠিয়ে নিয়ে যায় ঢাকার ডিবি পুলিশ। পরদিন ৩০ আগষ্ট তাকে ঢাকা সিএমএম কোর্টে হাজির করা হয় এবং জি কে গউছকে হবিগঞ্জ কারাগারে ছুরিকাঘাতের দীর্ঘ ৮ বছর পর হবিগঞ্জ সদর থানা পুলিশের দায়েরকৃত একটি মামলায় শ্যোন এরেস্ট দেখানো হয়। এই মামলায় জি কে গউছকে ২ দিনের রিমান্ডে নেয় ঢাকার ডিবি পুলিশ। এই মামলায় তিনি গত ৩ ডিসেম্বর হাইকোর্টে জামিন লাভ করেছেন। এদিকে রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার হয়ে জি কে গউছ বার বার ক্ষত-বিক্ষত হলেও এখন বাদ যাচ্ছে না তার পরিবারও। রাজনীতিতে তার স্ত্রী, দুই সন্তান এবং দুই ভাইয়ের সম্পৃক্ততা না থাকলেও পুলিশ ও আওয়ামীলীগের দায়েরকৃত বিভিন্ন মিথ্যা মামলায় তাদেরকে আসামী করা হচ্ছে।
জনপ্রতিনিধি নির্বাচনে জি কে গউছ : ২০০৪ সালে আলহাজ্ব জি কে গউছ হবিগঞ্জ পৌরসভার চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। জীবনের প্রথম এই নির্বাচনে অংশ নিয়েই তিনি জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে হবিগঞ্জ পৌরসভার চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। নির্বাচিত হওয়ার পর মাত্র ২ বছর ক্ষমতায় ছিল তার রাজনৈতিক দল বিএনপি। এই দুই বছরে হবিগঞ্জ পৌর এলাকায় যে উন্নয়ন হয়েছিল তা যে পূর্বের ২৫ বছরেও হয়নি সে কথা স্বীকার করেন তার চরম বিরোধীতাকারী লোকেরাও। ২০১১ সালের ১৮ জানুয়ারী ২য় বারের মত হবিগঞ্জ পৌরসভার মেয়র নির্বাচিত হন আলহাজ্ব জি কে গউছ। শত প্রতিকুলতার মধ্যেও বিপুল ভোটে তিনি মেয়র নির্বাচিত হয়ে জনগনের সেবায় নিজেকে উৎসর্গ করেন। দীর্ঘ দিনের অবহেলিত এবং পায়জামা শহর হিসেবে খ্যাত হবিগঞ্জ পৌরসভাকে একটি মডেল পৌরসভায় রূপান্তর করতে তিনি দিন রাত কাজ করেন। ব্যাপক উন্নয়ন কর্মকান্ডের মাধ্যমে তিনি হবিগঞ্জ শহরের চেহারা পাল্টিয়ে দেন। ২০১৫ সালের ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হবিগঞ্জ পৌরসভা নির্বাচনে সিলেটে কারাগার থেকে অংশ গ্রহন করেন বিএনপির এই সংগ্রামী নেতা। এই নির্বাচনে অনেকটা অভিভাবকহীন অবস্থায় প্রতিদ্বন্ধিতা করেন তিনি। কিন্তু জনগনের ভালবাসার কাছে সকল রক্তচক্ষু ধুলিস্যাৎ হয়ে যায়। নির্বাচিত হন টানা ৩য় বারের মত মেয়র। তিনি হবিগঞ্জ পৌরসভার সর্বশেষ চেয়ারম্যান এবং প্রথম মেয়র। তিনি মিউনিসিপ্যাল এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ ম্যাব এর কেন্দ্রীয় কমিটির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিবের দায়িত্ব পালন করেছেন। ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে হবিগঞ্জ-৩ আসন থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন আলহাজ্ব জি কে গউছ। এই নির্বাচনে অংশ নিতে দলীয় হাইকমান্ডের সিদ্ধান্তে পদত্যাগ করেন টানা ৩ বারের নির্বাচিত হবিগঞ্জ পৌরসভার মেয়রের পদ থেকে। এই নির্বাচনে রাষ্ট্রযন্ত্রের কাছে তিনি পরাজিত হলেও হবিগঞ্জ সদর, লাখাই ও শায়েস্তাগঞ্জের মানুষের হৃদয়ে তিনি ঠাই করে নিয়েছেন। মানুষের ভালবাসায় তিনি সিক্ত হচ্ছেন প্রতিনিয়ত।
বিদেশ সফরে জি কে গউছ : ২০০৪ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত হবিগঞ্জ পৌরসভায় মেয়রের দায়িত্ব পালনকালে তিনি সরকারিভাবে ইতালী, ফ্রান্স, গ্রীস, সুইজারল্যান্ড, পর্তুগাল, ভিয়েতনাম, থাইল্যান্ড, তুরস্ক, বাহরাইন, ওমান, সিঙ্গাপুর, ইন্দোনেশিয়া ও ফিলিপাইন সফর করেন। এসব দেশ সফরকালে তিনি স্থানীয় সরকারের সাথে কেন্দ্রীয় সরকারের সম্পর্ক, তাদের উন্নয়মূলক কর্মকান্ড, শিক্ষাক্ষেত্রে অগ্রগতি, যোগাযোগ, স্বাস্থ্য, চিকিৎসা, বাসস্থান সহ নানাবিদ বিষয়ে অভিজ্ঞতা অর্জন করেন। এই অভিজ্ঞতার অংশ হিসেবেই তিনি হবিগঞ্জ পৌরসভায় নাগরিক সেবার মান বৃদ্ধির জন্য বাংলাদেশের পৌরসভা সমুহের মধ্যে হবিগঞ্জ পৌরসভায় ওয়ানস্টপ সার্ভিস চালু করেন। এর ফলশ্রুতিতে হবিগঞ্জ পৌরবাসী ভোগ করছেন উন্নত নাগরিক সুবিধা।
সামাজিক অঙ্গনে জি কে গউছ : রাজনীতির পাশাপাশি বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনেরও দায়িত্ব পালন করেছেন আলহাজ্ব জি কে গউছ। তিনি হবিগঞ্জ জেলা ক্রীড়া সংস্থার সহ সভাপতি, জেলা রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির সাধারণ সম্পাদক, শায়েস্তানগর গাউছিয়া জামে মসজিদের সভাপতি ও সন্ধানী সাংস্কৃতিক সংসদের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন। এসব সংগঠনের মাধ্যমে তিনি সামাজিক উন্নয়নে কাজ করেছেন। যুব সমাজকে দেখিয়েছেন আলোর পথ। দাঁড়িয়েছেন আর্তপীড়িত মানুষের পাশে।
হবিগঞ্জের উন্নয়নে জি কে গউছ : বিএনপি’র বর্ষিয়ান রাজনীতিবিদ ৫ বারের সফল অর্থমন্ত্রী মরহুম এম সাইফুর রহমানের সাথে ছিল আলহাজ্ব জি কে গউছের অত্যন্ত ঘনিষ্ট সম্পর্ক। ফলে রাজনীতির পাশাপাশি হবিগঞ্জ জেলার উন্নয়নে তিনি মনোনিবেশ করেন। তিনি হবিগঞ্জ পৌরসভার চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ার পূর্বেই হবিগঞ্জ সদর হাসপাতাল সহ হবিগঞ্জে ব্যাপক উন্নয়নমূলক কর্মকান্ড বাস্তবায়ন করেন। শহরের প্রধান সড়কে রোড ডিভাইডার করা ছিল কঠিনতর একটি কাজ। বগলা বাজার ও চৌধুরী বাজার এলাকায় রাস্তা প্রশস্তকরণ ছিল আরও বেশি কঠিন কাজ। যে এলাকার প্রতি ইঞ্চি জায়গার মূল্য লাখ টাকারও বেশি, তারপরও আলহাজ্ব জি কে গউছের অনুরোধে সেখানকার ব্যবসায়ীরা নিজেদের দোকান ভিটা ভেঙ্গে দিয়েছেন রাস্তা প্রশস্তকরনের জন্য। যারা আলহাজ্ব জি কে গউছকে নির্বাচিত করতে প্রকাশ্যে বলিষ্ট ভূমিকা রেখেছেন তাদের দোকান ভাঙ্গা হয়েছে সবার আগে। তাতে আলহাজ্ব জি কে গউছের নিরপেক্ষতা, স্বচ্ছতা এবং ভালো কোনো কিছু করার জন্য সদিচ্ছাই যথেষ্ট, তারই প্রতিফলন ঘটে। চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ার পর দলমত ও ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে সকল সম্প্রদায়ের উন্নয়ন ছিল তার চোখে পড়ার মতো। ভোটাররাও এর প্রতিদান দিয়েছেন। যেখানে বিএনপি সমর্থিত প্রার্থীরা কোনো ভোট আশাও করেন না, ঠিক সেখানে জি কে গউছ ভোট পেয়েছেন আওয়ামীলীগ প্রার্থীর চেয়ে দ্বিগুন। জি কে গউছের প্রচেষ্টায় খোয়াই নদীর মাছুলিয়ায় এম সাইফুর রহমান ব্রীজ, শহরের কামড়াপুর থেকে নছরতপুর পর্যন্ত রেলটেকের উপর বাইপাস সড়ক নির্মাণ, নতুন বাস টার্মিনাল নির্মাণ, শহরের সৌন্দর্য্য বর্ধনে রোড ডিভাইডার নির্মাণ, জেলা পরিষদের সামনে পানির পোয়াড়া/মুক্তিযুদ্ধা চত্তর নির্মাণ, খোয়াই নদীর উপর জেনারেল এম এ রব ব্রীজ, শাহ এএমএস কিবরিয়া ব্রীজ, এম সাইফুর রহমান টাইন হল, বেবীস্ট্যান্ড এলাকায় পানির ২য় ট্রিটম্যান্ট প্লান স্থাপন, শহরের উত্তরে এবং দক্ষিণে প্রতিমা বিসর্জনের জন্য খোয়াই নদীতে ঘাটলা নির্মাণ, শহরে অসংখ্য ড্রেন ও রাস্তা নির্মাণ উল্লেখযোগ্য। পৌরসভায় দায়িত্ব পালনে জি কে গউছ কোন ধর্মীয় গন্ডির মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকেননি। তিনি সকল ধর্মের সেবায় নিজেকে নিয়োজিত করেন।
তিনি পৌরসভার চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ার পর থেকেই নিজের সম্মানী ভাতার টাকা কন্যাদায়গ্রস্ত পরিবারের সাহায্যার্থে দান করেছেন। তিনি পৌরসভার তহবিল থেকে ব্যক্তিগত খরচের জন্য কোন অর্থ নেননি। তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময় মিথ্যা অভিযোগে মামলা দেয়া হলেও হবিগঞ্জ পৌরসভার একটি টাকা আত্মসাৎ বা দুর্নীতি হয়েছে এমন অভিযোগে কেউ তার বিরুদ্ধে কোনো মামলা দিতে পারেনি। তিনিই একমাত্র পৌরসভার মেয়র, দায়িত্ব নেয়ার পর প্রতি বছর পৌরসভার পক্ষ থেকে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সংবর্ধনা প্রদান, পবিত্র হজ্ব ও ওমরা বিষয়ক প্রশিক্ষণ প্রদান, কৃতি ছাত্র ছাত্রী ও তাদের অভিভাবকদের সংবর্ধনা প্রদান, বৈশাখী মেলা, বই মেলা, কর মেলা, পিঠা উৎসব, সুন্নতে খৎনা ও গণবিয়ের আয়োজন করেন। হবিগঞ্জ পৌর এলাকার সকল মসজিদের খতিব, ইমাম ও মোয়াজ্জিনদেরকে প্রতি ঈদে সম্মানী প্রদান করেছেন। তিনি প্রতি বছর পৌরসভার পক্ষ থেকে দুর্গাপূজায় প্রতিটি মন্ডপে নগদ অর্থ সহায়তা প্রদান করেন। আলহাজ্ব জি কে গউছ অত্যন্ত সাহসিকতার সাথে প্রতি বছর সরাসরি প্রশ্নোত্তর বিষয়ক পৌরবাসীর মুখোমুখি অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছেন। এসব ব্যতিক্রমধর্মী অনুষ্ঠানের মাধ্যমে তিনি স্থানীয় সরকার বিভাগে আলোড়ন সৃষ্টি করেন। ফলশ্রুতিতে তিনি ২ বার বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক গোল্ড মেডেল অর্জন করেন। তৎকালীন স্থানীয় সরকার মন্ত্রী আব্দুল মান্নান ভুইয়া, অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত ও এডিবি’র সদর দপ্তর ফিলিপাইন থেকে আলহাজ্ব জি কে গউছ এই গোল্ড মেডেল গ্রহন করেন।
© স্বত্ব দৈনিক হবিগঞ্জের মুখ ২০১৯
ওয়েবসাইটটি তৈরী করেছে ThemesBazar.Com