ব্রীজের নামকরণ করা হয়েছে ‘এমপি আবু জাহির ব্রীজ’
স্টাফ রিপোর্টার ॥ হবিগঞ্জ সদর উপজেলার ভাদৈ এলাকায় খোয়াই নদীর উপর সোয়া ৮ কোটি টাকা ব্যয়ে ব্রীজ নির্মাণের মধ্য দিয়ে লাখো মানুষের দুর্ভোগ লাঘব করলেন সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট মোঃ আবু জাহির। শুক্রবার বিকেলে এই ব্রীজের উদ্বোধন করেন তিনি। এ সময় এলাকার সকল পর্যায়ের মানুষের উদ্বেলিত অংশগ্রহণে উৎসবে রূপ দেয় উদ্বোধনী অনুষ্ঠান।
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) সদর উপজেলা প্রকৌশলী মোঃ এমদাদুল হক বলেন, “ভাদৈ এলাকায় ব্রীজের অভাবে কয়েকটি ইউনিয়নের লোকজন জেলা সদর থেকে বিচ্ছিন্ন ছিলেন। ‘সংসদ সদস্য আবু জাহির মহোদয়’ ঐকান্তিক প্রচেষ্টা চালিয়ে এলজিইডির মাধ্যমে ৮ কোটি ২৫ লাখ টাকায় ১৩৪ মিটার দৈর্ঘ্য এবং ৭.৩ মিটার প্রস্ত এই ব্রীজ নির্মাণ করিয়েছেন। ফলে লাখো মানুষের দুর্ভোগ লাঘব হল।”
এর আগে কয়েকটি ইউনিয়নের নারী-পুরুষ একটি ডিঙি নৌকায় বেঁধে রাখা রশি টেনে সেকালে পন্থায় নদী পাড়ি দিয়ে শহরে আসতেন। ফিরে যেতেন একইভাবে। দীর্ঘ সময়ের নদী পারাপারে দুর্ভোগ পোহাতো রোগীদের। গর্ভবর্তী নারীদের জন্য খোয়াই নদী ছিল আতঙ্কের নাম। দুর্ভোগের শিকলে বন্দি ছিলেন তারা।
শুক্রবার ব্রীজের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে দেখা যায়, সকল শ্রেণি পেশা ও বয়সের মানুষ উপস্থিত। স্থানীয়রা ছোট ছোট কয়েকটি সড়কের পাশে স্থাপন করেছেন গেট। ব্রীজজুড়ে মরিচা বাতি টানানো। নতুন কাপড় পড়ে শিশু-কিশোরেরা এসেছে ফলক উন্মোচনের সেই মহেন্দ্রক্ষণ উপভোগ করতে। বলতে গেলে- ব্রীজের উদ্বোধন নয়; যেন এক মুক্তির উৎসব দেখা গেল পূর্ব ও পশ্চিম ভাদৈ এলাকায়।
কলেজ শিক্ষক পলাশ দাশ প্রথমবার পায়ে হেঁটে খোয়াই নদী পার হচ্ছিলেন। তিনি বলেন, “চারটি ইউনিয়নের দুর্ভোক্রান্ত লোকদের কাছে খোয়াই নদীর উপর নির্মাণ করা এই ব্রীজ পরম পাওয়া। যা করে দিয়েছেন হবিগঞ্জ রতœ অ্যাডভোকেট মোঃ আবু জাহির। প্রজন্মের পর প্রজন্ম মানুষের হৃদয়ে স্বর্ণাক্ষরে তাঁর নাম লিখা থাকবে। তিনি আরও বলেন, “এলাকাবাসীর দাবির পরিপ্রেক্ষিতে ব্রীজটির নাম দেওয়া হয়েছে “এমপি আবু জাহির ব্রীজ”। যাতে মানুষ আজীবন তাঁর নাম মনে রাখে।”
গোপায়া ইউপি’র সাবেক চেয়ারম্যান মোঃ আক্তার হোসেন জানান, এমপি আবু জাহির সদর উপজেলার গোপায়া, পইল, তেঘরিয়া ও লস্করপুর ইউনিয়বাসীর দীর্ঘদিনের স্বপ্ন পূরণ করেছেন। এই রাস্তা দিয়ে এখন বাহুবল উপজেলার লোকজনও চলাফেরা করবে।”
এদিকে, উদ্বোধনী ফলক উন্মোচন শেষে খোয়াই নদীর পাড়ে এলাকাবাসীর আয়োজনে এক আলোচনা সভায় যোগ দেন এমপি আবু জাহির। এ সময় তিনি বলেন, “এই ব্রীজ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আমি শুধু আপনাদের দাবি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সামনে তুলে ধরে ব্রীজ নির্মাণের অনুরোধ জানিয়েছি। তিনি আমাদের ব্রীজ দিয়েছেন।” সংসদ সদস্য আরও বলেন, “প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আমরা হবিগঞ্জে কি কি উন্নয়ন করেছি তা আপনাদের চোখের সামনে। নতুন করে বলার প্রয়োজন মনে করি না। এই ধারা অব্যাহত রাখতে হলে কি করতে হবে? প্রশ্ন রাখেন এমপি আবু জাহির।
এ সময় সভায় উপস্থিত লোকজন ‘শেখ হাসিনা’ এবং ‘নৌকা’ শ্লোগান দিতে থাকেন। শ্লোগানে মুখড়িত হয় আশপাশের এলাকা।
এমপি আবু জাহির আরও বলেন, ‘আমি প্রতিশ্রুতি দেওয়ার পর থেকেই ব্রীজটি নির্মাণের জন্য কাজ করে গিয়েছি। তবে করোনা ভাইরাস পরিস্থিতির কারণে কিছুটা বিলম্ব হয়েছে।’ তিনি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ ১৫ আগস্ট শহীদ হওয়া সকলের আত্মার মাগফিরাত এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দীর্ঘায়ু কামনায় সকলের নিকট দোয়া কামনা করেন।
আলহাজ্ব মোঃ সিরাজ মিয়া চৌধুরীর সভাপতিত্বে সভায় বিশেষ অতিথি ছিলেন শায়েস্তাগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুর রশিদ তালুকদার ইকবাল, সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এমএ মোতালেব ও সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রহমান।
এলাকার আরও অনেকে অনুষ্ঠানে বক্তব্য দিয়েছেন। বক্তারা বলেন, অনেক জনপ্রতিনিধি এসেছেন আবার চলেও গিয়েছেন। কথা দিয়েও তাঁরা খোয়াই নদী পারাপারের এই দুর্ভোগ দূর করতে ব্যর্থ হয়েছেন। এমপি আবু জাহির আমাদের কথা দিয়ে কথা রেখেছেন। আমরা চিরকাল তাঁর পাশে থাকব।
বক্তব্য রাখেন, জেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক একেএম মঈন উদ্দিন চৌধুরী সুমন, হবিগঞ্জ জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক মোঃ বদরুল আলম, জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি সাইদুর রহমান, পইল ইউপি চেয়ারম্যান সৈয়দ মঈনুল হক আরিফ, আওয়ামী লীগ নেতা নুরুজ্জামান চৌধুরী, আব্দুল মোছাব্বির তালুকদার, মোহাম্মদ আলী চিশতি, সাবেক চেয়ারম্যান আক্তার হোসেন প্রমুখ। এছাড়াও বিভিন্ন পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ এবং নানা শ্রেণি পেশার মানুষ উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে এমপি আবু জাহির পূর্ব ভাদৈ ছয়ঘরিয়া জামে মসজিদ নির্মাণ কাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন এমপি আবু জাহির। সেখানে মসজিদ কমিটির সভাপতি মোহাম্মদ আলী চিশতি ও সাধারণ সম্পাদক মোঃ শাহাবুদ্দিনসহ অন্যান্যরা উপস্থিত ছিলেন।