চুনারুঘাটের ইকরতলীতে ৭৪টি ঘর ও দলিল হস্তান্তর অনুষ্ঠানে ভিডিও কনফারেন্সে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা
প্রতিমন্ত্রী মাহবুব আলী বললেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে পঁচাত্তরের পর বার বার চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হয়েছে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট মাহবুব আলী এমপি বলেছেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে পঁচাত্তরের পর বার বার চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হয়েছে। কোভিড পরিস্থিতিতে সারা বিশ্ব যখন স্থবির হয়ে পড়ে তখন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী চ্যালেঞ্জ নিয়ে গার্মেন্টস খুলে দেয়ায় দেশের অর্থনীতির চাকা সামনের দিকে এগিয়েছে। দেশের রিজার্ভ বেড়ে হয়েছে রেকর্ড পরিমাণ। প্রধানমন্ত্রী চ্যালেঞ্জ নিয়ে নিজস্ব অর্থে বাস্তবায়ন করেছেন পদ্মা সেতু। তার এই দূরদর্শিতার জন্যই আজ আমরা মধ্যম আয়ের দেশ হতে পেরেছি। ২০৪১ সালে আমরা উন্নত দেশে পরিণত হব। ইতোমধ্যে আমরা খাদ্য ও বিদ্যুতে স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়েছি। তথ্য প্রযুক্তিতে দেশ এগিয়ে গেছে। ভিক্ষা বৃত্তি কমে গেছে। চ্যালেঞ্জ নিয়ে এবার প্রধানমন্ত্রী আশ্রয়হীনদেরকে বিনামূল্যে ভূমিসহ ঘর বানিয়ে দিয়ে যে উদাহরণ সৃষ্টি করেছেন তাও নজিরবিহীন।
শনিবার সকালে হবিগঞ্জের চুনারুঘাট উপজেলার ইকরতলী গ্রামে মুজিববর্ষ উপলক্ষে ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারকে জমি ও ঘর প্রদান কর্মসূচির উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের প্রাক্কালে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন।
পরে প্রধানমনন্ত্রী শেখ হাসিনা সকাল সাড়ে ১০টায় ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ইকরতলী আশ্রয়ন প্রকল্পে সরাসরি যুক্ত হয়ে ৭৪টি ঘরের দলিল হস্তান্তর করেন। এসময় তিনি বলেন, জাতির পিতার স্বপ্ন পূরণ করতে পেরে আজ আমি গর্বিত, ঘর ও জমি প্রদান করতে পারা নিজের সবচেয়ে বড় আনন্দের বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আজকে আমার অত্যন্ত আনন্দের দিন। গৃহহীন পরিবারকে গৃহ দিতে পারছি, এটি আমার সবচেয়ে আনন্দের। আমার বাবা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মানুষের কথাই ভাবতেন। আমাদের পরিবারের লোকদের চেয়ে তিনি গরীব অসহায় মানুষদের নিয়ে বেশি ভাবতেন এবং কাজ করেছেন। এই গৃহ প্রদান কার্যক্রম তারই শুরু করা।’
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সত্যজিত রায় দাশের সঞ্চালনায় লাইভে যুক্ত ছিলেন বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট মাহবুব আলী, সিলেটের বিভাগীয় কমিশনার মশিউর রহমান এনডিসি, হবিগঞ্জের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ কামরুল হাসান, পুলিশ সুপার মোহাম্মদ উল্ল্যা, জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সদস্য ডাঃ মুশফিক হুসেন চৌধুরী, আওয়ামী লীগের জাতীয় পরিষদ সদস্য শহীদ উদ্দিন চৌধুরী, চুনারুঘাট উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আব্দুল কাদির লস্কর, সাবেক উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মোঃ আবু তাহের, উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট আকবর হোসেন জিতুসহ বিভাগীয় কর্মকর্তা, জনপ্রতিনিধি, দলীয় নেতাকর্মী, সাংবাদিক ও উপকারভোগীরা। উপকারভোগীদের মধ্যে নাজমুল হুদা এবং প্রকল্প বাস্তবায়নে সরাসরি যুক্ত সহকারি কমিশনার মিল্টন পাল বক্তব্য রাখেন।
একজন উপকার ভোগীর কথা শুনতে চাইলে ইকরতলীতে ঘর পাওয়া নুরুল হুদা (৭০) বলেন, জীবন কাটিয়ে দিয়েছি বনে, পরের জমিতে। জীবনের শেষ বয়সে এসে ঘর পেয়ে শুকরিয়া আদায় করে বলেন, এবার হয়তো প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া ঘরে মরতে পারবো।
অনুষ্ঠানে আসা ঘর পাওয়া আছিয়া খাতুন (৬৫) বলেন, তিনি বসবাস করতেন কালেঙ্গা বস্তিতে। ছিল না নিজের ঘর, বাড়ি। থাকতেন অন্যের বাড়িতে। দুই ছেলে আছে। মানুষের ঘরে কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করছেন। এবার পেলেন নিজের ঘর। এবার ছেলে মেয়ে নিয়ে এ ঘরেই তিনি মরতে চান। তিনি বলেন, “এখন থাইক্কা আর ঝড়-বৃষ্টিতে ভিজন লাগতো না, আমরার কষ্ট দূর করছইন পরধানমন্ত্রী (প্রধানমন্ত্রী) তাইনের লাইগ্যা দোয়া করি আল্লাহ যেন, হায়াত বাড়িয়ে দেয়” নুরুল হুদা আর আছিয়ার মতো ৭৪ জন গৃহহীন সেখানে নিজের জমি আর ঘর পান। আরও ৬টি ঘর সেখানে তৈরি হচ্ছে।
শনিবার হবিগঞ্জের চুনারুঘাট উপজেলার ৭৪টি সহ জেলার ৩২৫টি ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারকে জমি ও ঘর এবং দলিল হস্তান্তর করা হয়েছে।
মুজিববর্ষ উপলক্ষে আশ্রয়ন প্রকল্প-২ এর আওতায় জেলায় ৭৮৭ জন মানুষকে পুনর্বাসন প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে পাকাঘর উপহার দেয়া হচ্ছে। প্রথম পর্যায়ে ঘর পেলো ৩২৫ পরিবার। আগামী মাসে বাকী পরিবারগুলো গৃহ পাবে।