আহত ম্যানেজার ইলিয়াসের কক্ষে মেয়েদের চুলের ক্লিপ, ওড়না ও পাউডার পেয়েছে পুলিশ। এ থেকে স্থানীয়দের ধারণা নারীঘটিত কারণে তার উপর হামলা হয়ে থাকতে পারে ॥ বানিয়াচং সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শেখ মোহাম্মদ সেলিম বললেন, প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে- যে বা যারা এটি ঘটিয়েছে এর পেছনে ব্যক্তিগত আক্রোশ রয়েছে

স্বপন বণিক, আজমিরীগঞ্জ থেকে ॥ হবিগঞ্জের আজমিরীগঞ্জের কাকাইলছেওয়ে গভীর রাতে ব্র্যাক অফিসে হামলা চালিয়েছে একদল মুখোশধারী দুর্বৃত্ত। এ সময় দুর্বৃত্তদের ধারালো অস্ত্রের আঘাতে ব্রাঞ্চ ম্যানেজার ইলিয়াস আহমেদ (৪৫) গুরুতর আহত হন। গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে উদ্ধার প্রথমে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক উন্নত চিকিৎসার জন্য হবিগঞ্জ আধুনিক সদর হাসপাতালে প্রেরণ করেন। এরপর হবিগঞ্জ থেকে সকাল বেলা উন্নত চিকিৎসার জন্য ইলিয়াস আহমেদকে তার এক সহকর্মী ঢাকায় নিয়ে যান। আহত ইলিয়াস আহমেদ পটুয়াখালী জেলার মৃত আব্দুল বারিক মিয়ার পুত্র। বিষয়টি নিয়ে এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। গতকাল শুক্রবার ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন বানিয়াচং সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শেখ মোহাম্মদ সেলিম।
সূত্র জানায়, ইলিয়াস আহমেদ প্রায় ১ বছর পূর্বে বানিয়াচং ব্রাঞ্চ থেকে আজমিরীগঞ্জ উপজেলার কাকাইলছেও ব্রাঞ্চে ব্রাঞ্চ ম্যানেজার হিসেবে যোগদান করেন। এরপর থেকে তিনি অফিস বিল্ডিংয়ের একটি কক্ষে বসবাস করতেন। বৃহস্পতিবার (৭ জানুয়ারি) রাত প্রায় ২টা ৩০মিনিটের দিকে ৩/৪ জনের মুখোশধারী একদল দুর্বৃত্ত তার রুমে প্রবেশ করে রামদা দিয়ে কুপিয়ে তাকে ক্ষতবিক্ষত করে পালিয়ে যায়। এসময় দুর্বৃত্তদের দায়ের কুপ থেকে বেঁচে যান ব্র্যাক অফিস বিল্ডিংয়ের মালিকের এক আত্মীয়। এরপর ভোরবেলা ইলিয়াস আহমেদকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাওয়া হয়।
এ ঘটনার বিষয়ে স্থানীয়দের সাথে আলাপকালে জানা যায় রাতে এমন দুঃসাহসিক ঘটনা ঘটলেও বিল্ডিংয়ের আশপাশের কেউই কোনো ধরনের শোর চিৎকার শুনতে পাননি।
এ বিষয়ে ব্র্যাকের আজমিরীগঞ্জ উপজেলা সমন্বয়কারী বিলকিস জাহান জানান, রাত প্রায় তিনটার দিকে খবর পেয়ে আমি কাকাইলছেও ব্রাঞ্চে যাই এবং সেখানে ইলিয়াস আহমেদকে রক্তাক্ত অবস্থায় দেখতে পাই।
আমরা তখন পুরো অফিসে কোনো ধরনের ভাংচুর বা ডাকাতির কোনো চিহ্ন দেখতে পাইনি। শুধু ব্রাঞ্চ ম্যানেজার ইলিয়াস আহমেদ রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে রয়েছিলেন। পরে তাকে আমরা হাসপাতালে প্রেরণ করি। বিষয়টি নিয়ে আমরা আতঙ্কের মধ্যে রয়েছি।
এ বিষয়ে বানিয়াচং সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শেখ মোহাম্মদ সেলিম বলেন, প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে- যে বা যারা এটি ঘটিয়েছে এর পেছনে ব্যক্তিগত কারো আক্রোশ রয়েছে। এবং সে বা তারা ইলিয়াসের পূর্ব পরিচিত। রাতে অফিসের গেটে কোনো তালা ছিলো না, এমনকি যে রুমে ঘটনাটি ঘটেছে সেখানেও কোনো রকমের ধস্তাধস্তির চিহ্ন নেই, অফিসের কোনো জিনিস বা টাকার ভল্টেও কেউ হাত দেয়নি। ভিকটিম চিকিৎসার জন্য ঢাকায় রয়েছেন। আমরা ভিকটিমের সাথে কথা বলার জন্য চেষ্টা করছি এবং আমাদের এক সাব ইন্সপেক্টরকে ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। ভিকটিমের সাথে কথা বলার পর আসলে বিষয়টি বুঝা যাবে। আমাদের তদন্ত অব্যাহত রয়েছে।
অপর একটি সূত্র জানায়, আজমিরীগঞ্জ থানা পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। পরিদর্শনকালে আহত ইলিয়াসের কক্ষে মেয়েদের চুলের ক্লিপ, ওড়না ও পাউডার পেয়েছে পুলিশ। এ থেকে স্থানীয়দের ধারণা নারীঘটিত কারণে তার উপর হামলার ঘটনা ঘটে থাকতে পারে। গতকাল দিনভর লোকমুখে আলোচনা ছিল দুর্বৃত্তদের হামলায় আহত হওয়ার পরও ইলিয়াস কেন চিৎকার করলেন না।