প্রতিপক্ষের বাধার মুখে ৭০ একর জমির বোরো চাষ অনিশ্চিত
স্টাফ রিপোর্টার ॥ বানিয়াচঙ্গের সুজাতপুর ইউনিয়নের গাজীপুর গ্রামে সংঘর্ষে ২ জন নিহতের ঘটনায় পুরুষশূন্য বাড়িতে অব্যাহত ভাংচুর ও লুটপাট চালিয়ে যাচ্ছে প্রতিপক্ষ। শুধু লুটপাটই নয়, বোরো ধানের জমি চাষ করতে বাধা দিচ্ছে তারা। এতে প্রতিপক্ষের অন্তত ৭০ একর জমি বোরো চাষ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।
সূত্র জানায়, হাওরে বোরো জমিতে ধান রোপনকে কেন্দ্র করে আলাই মিয়া ও সফিক মিয়ার লোকজনের মধ্যে বিরোধ চলে আসছিল। এর জের ধরে গত ২০ ডিসেম্বর উভয়পক্ষের লোকজন সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। সংঘর্ষে ঘটনাস্থলে সফিক মিয়ার পক্ষের নুরুল হক মারা যান। এরপর প্রতিপক্ষের বাড়িঘরে হামলা চালিয়ে ভাংচুর ও লুটপাট শুরু করে সফিকের পক্ষের লোকজন। এ সময় তারা আলাই মিয়ার পক্ষের ইদ্রিছ মিয়া ওরফে কাচা মিয়াকে টেটাসহ দেশীয় অস্ত্র দিয়ে আঘাত করলে ইদ্রিছ মিয়া গুরুতর আহত হন। পরে তিনি মারা যান। সংঘর্ষের পরদিন হবিগঞ্জ সদর আধুনিক হাসপাতালের মর্গে নুরুল হক ও ইদ্রিছ মিয়ার লাশের ময়না তদন্ত শেষে দাফন সম্পন্ন করা হয়। এ ঘটনায় বানিয়াচং থানা পুলিশ নূরুল হক হত্যা মামলা নিলেও ইদ্রিছ মিয়া হত্যার মামলা নেয়নি। এ অবস্থায় গ্রেফতার এড়াতে ইদ্রিছ মিয়ার পক্ষের লোকজন গ্রাম ছেড়ে পালিয়ে যায়। এ সুযোগে সফিক মিয়ার পক্ষের লোকজন প্রতিপক্ষের বাড়িতে আবারও ভাংচুর ও লুটপাট করে ধান, চাল, গরু, ছাগলসহ আসবাবপত্র নিয়ে যায়। ইদানিং তারা প্রতিপক্ষের বোরো জমি চাষে বাধা দিচ্ছে। এতে প্রায় ৭০ একর জমিতে বোরো চাষ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।
নিহত ইদ্রিছ মিয়ার পক্ষের তফুরা বেগম জানান, নূরুল হক স্ট্রোকে দীর্ঘদিন ধরে আক্রান্ত ছিলেন। দু’পক্ষের সংঘর্ষের দৃশ্য দেখে তিনি স্ট্রোক করে মারা গেছেন। তিনি স্ট্রোক করে মারা যাওয়ার পরই তার পক্ষের লোকজন প্রচার করে তাকে হত্যা করা হয়েছে। এরপর আমাদের পক্ষের পুরুষেরা বাড়ি ছেড়ে চলে যায়। এ সময় আমাদের পক্ষের বাড়িতে থাকা ইদ্রিছ মিয়া ওরফে কাচা মিয়াকে ৬০/৭০জনে ঘেরাও দিয়ে টেটাবিদ্ধ করে হত্যা করে। শুধু হত্যা করে ক্ষ্যান্ত হয়নি, তারা আমাদের পক্ষের ২০/২৫টি বাড়িঘর ভাংচুর ও লুটপাট করেছে। আমার দেবরের দোকান ভাংচুর ও দোকানের ক্যাশে থাকা নগদ ৩ লাখ টাকা নিয়ে গেছে। তারা দোকানের ফ্রিজসহ সকল মালামাল লুট করে নিয়েছে। আমার ঘরের ধান, চালসহ সকল মালামাল নিয়ে গেছে। শুধু মালামাল নিয়েই যায়নি আমাদের রান্নার চুলাও ভেঙ্গে দিয়েছে।
কলেজ ছাত্রী শিপন আক্তার জানান, সফিক মিয়ার বাহিনীর লোকজন আমার ফুফা ইদ্রিছ মিয়া ওরফে কাচা মিয়াকে ঘেরাও করে টেটা দিয়ে ঘা মেরে হত্যা করে। একই সাথে আমাদের বাড়িঘর ভাংচুর করেছে। ঘরের ভিতরে থাকা ফার্নিচারও ভাংচুর করে। সফিক বাহিনী আমাদের গরু, ছাগল, ধান, চাল লুট করে নিয়ে গেছে। আমার ফুপাকে টেটা দিয়ে আঘাত করে হত্যা করা হলেও পুলিশ আমাদের মামলা নেয়নি। আমাদের প্রতিপক্ষ নূরুল হক স্ট্রোক করে মারা গেছে। এই মৃত্যুতে পুলিশ হত্যা মামলা নিয়েছে। এই হত্যা মামলা নেয়ার পর পরই আমাদের উপর বর্বর নির্যাতন শুরু হয়। বাড়িতে মহিলারাও থাকতে পারছেন না। সফিক বাহিনী মহিলাদের নির্যাতন করছে। ইজ্জতের ভয়ে অনেকেই এলাকা ছেড়ে চলে গেছেন। শুধু সফিক মিয়া নারীদের নির্যাতন করাচ্ছেন। এছাড়া তারা আনফর মিয়া, রফুল মিয়া, মালেকা বেগম, মকসুদ মিয়া, মশ্বব আলী, আশ্বব আলী, নজরুল মিয়ার, বাড়িঘর ভাংচুর ও লুটপাট করেছে। শিপন আক্তার ইদ্রিছ মিয়ার খুনীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়ার পাশাপাশি ভাংচুর ও লুটপাটে জড়িতদের আইনের আওতায় এনে বিচারের দাবি জানান।
এদিকে নিহত ইদ্রিছের পরিবার হবিগঞ্জের অতিরিক্ত চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ২৯জনকে আসামী করে হত্যা মামলা দায়ের করেন। আদালত মামলাটি এফআইআর ভুক্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার জন্য বানিয়াচং থানা পুলিশকে নির্দেশ দেন। এ ব্যাপারে বানিয়াচং থানার ওসি এমরান হোসেন জানান, ২টি মামলা তদন্ত করা হচ্ছে এবং অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে সেখানে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।