জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ কামরুল হাসানের উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন হবিগঞ্জ জেলা মৎস্যজীবী লীগ সভাপতি
স্টাফ রিপোর্টার ॥ হবিগঞ্জে পেশি শক্তি দিয়ে আর জলমহাল দখল করে রাখা যাবে না। হবিগঞ্জের জলমহাল ব্যবস্থাপনায় আমূল পরিবর্তন আনা হচ্ছে। এখন কেউ পেশি শক্তি ব্যবহার করে নামমাত্র রাজস্ব দিয়ে জলমহাল ভোগ দখল করতে পারবে না। হবিগঞ্জের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ কামরুল হাসানের এমন উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন হবিগঞ্জ জেলা মৎস্যজীবী লীগ সভাপতি ও জেলা জলমহাল ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য মোঃ আব্দুর রহমান। তিনি বলেন, সরকারের উন্নয়ন খাতে যে সকল জলমহাল রয়েছে তার অধিকাংশেরই কিছু কিছু অংশ কেউ কেউ পেশি শক্তি খাটিয়ে অবৈধ দখল আবার কেউবা ডোবা রকম সৃষ্টি করে অবৈধ দখল করে রেখেছে। এতে সরকার কোটি কোটি টাকা রাজস্ব আয় থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। যদিও জলমহাল লীজ গ্রহীতা বা ইজারাদারদের অফিসিয়ালী জলমহালের দখল বুঝিয়ে দেয়া হয়, কিন্তু মাঠ পর্যায়ে জরিপ করে সীমানা নির্ধারণ বা চিহ্নিত করে দখল বুঝিয়ে দেয়া হয় না। ফলে কাগজে কলমে জলমহালের যে আয়তন উল্লেখ থাকে বাস্তবে ওই পরিমাপ থাকে না। ফলে সরকারের পাশাপাশি জলমহাল লীজ গ্রহীতারাও ক্ষতিগ্রস্ত হন। তিনি জলমহাল সরজমিন পরিদর্শন করে সীমানা চিহ্নিত করার পর লীজ গ্রহীতা ইজারাদারকে জলমহাল সমজে দেয়ার অনুরোধ জানান।
তিনি উন্নয়ন প্রকল্পের জলমহাল সম্পর্কে বলেন, সরকারের উন্নয়ন প্রকল্পের অন্তর্ভূক্ত যে সকল জলমহাল রয়েছে তা দিন দিন ভরাট হলেও লিজ গ্রহীতা জলমহাল খনন করে তার নাব্যতা ফিরিয়ে আনার কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করে না। তাই স্বভাবতই ভরাট হওয়া অংশ অন্যের দখলে চলে যায়। এজন্য তিনি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নজরদারীকে দায়ী করেন। তিনি বলেন, যারা উন্নয়ন প্রকল্পের অন্তর্ভূক্ত জলমহাল লিজ নিয়ে জলমহালের উন্নয়ন করে না, শুধুমাত্র নিজেদের উন্নয়ন নিয়ে ব্যস্ত থাকে তাদেরকে নজরদারীতে আনা উচিত। জলমহালের কোন ক্ষতি হলে লীজ গ্রহীতাকে তা সংশোধনের জন্য চাপ প্রয়োগ করা উচিত। কারণ জলমহাল ইজারা নেয়ার সময় তিনি জলমহাল খননসহ সকল প্রকার সংস্কার কাজ সম্পন্ন করবেন মর্মে অঙ্গীকার করে মহাল লিজ নিয়েছেন। যদি এ রকম উদ্যোগ নেয়া হয় তাহলে জলমহালের পাশাপাশি সরকার তথা দেশ উপকৃত হবে। আর উন্নয়ন খাতের অন্তর্ভূক্ত জলমহালসমূহে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নজরদারি থাকলে অবশ্যই তা সুফল বয়ে আনবে। উদাহরণ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বানিয়াচংয়ের চাপবিল গ্রুপ জলমহালটির লীজ গ্রহীতা বানিয়াচংয়ের আমিরখানি গ্রামের বাসিন্দা, চাঁদতারা মৎস্যজীবী সমবায় সমিতির সভাপতি ইমান আলী। লীজ গ্রহণ সংক্রান্ত কাগজপত্র সম্পাদনের সময় তাকে জলমহালের পরিমাণ সমজে দেয়া হয়েছে ১৩১ একর। কিন্তু বাস্তবে ওই জলমহালের আয়তন প্রায় ৯০ একর। মৌরা জলমহালটি চাপবিল গ্রুপের অন্তর্ভূক্ত। এর ২৮০ দাগের কাকুড়া মৌজার প্রায় ১৮ একর ২ শতক জায়গা আমিরপুরের একটি প্রভাবশালী চক্র ডোবা খনন করে অবৈধ দখল করে রেখেছে। দোপানিয়া জলমহালের ১১২৮ দাগের ১১ একর ৮৬ শতক জায়গা ইজারাদারের দখলে নেই। মহালের ওই জায়গা প্রভাবশালী অবৈধ দখলদারদের কবলে চলে গেছে। এতে জলমহাল লীজ গ্রহীতার পাশাপাশি সরকার রাজস্ব আয় থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। শুধু তাই নয়, হবিগঞ্জ সদর উপজেলার ৩নং তেঘরিয়া ইউনিয়নের কাকনীপাড়া জলমহালটির লীজ গ্রহীতা বানিয়াচং উপজেলার পুকড়া ইউনিয়নের রামগঞ্জ গ্রামের বাসিন্দা জনতা মৎস্যজীবী সমবায় সমিতির সভাপতি জসিম উদ্দিন। কাগজে কলমে ওই জলমহালের আয়তন ৪৯ একর। কিন্তু বাস্তবে ৮/১০ একর জায়গা লীজ গ্রহীতা ভোগ দখল করছেন। মহালের বাকী অংশ সৈয়দাবাদ ও সীমেরগাঁও গ্রামের কতিপর লোক অবৈধ দখল করে ভোগদখল করে আসছেন। এই জলমহালটির বার্ষিক খাজনা প্রায় ৭ লাখ টাকা পরিশোধ করা হয়। আর চাপবিল গ্রুপ জলমহালের অন্তর্ভূক্ত দোপানিয়া জলমহালের বার্ষিক খাজনা পরিশোধ করা হয় প্রায় ৪ লাখ ১৯ হাজার ২২৬ টাকা। ওই জলমহালগুলোর অবৈধ দখলদার মুক্ত করা গেলে তা থেকে দ্বিগুণেরও বেশি খাজনা আদায় হবে বলে তিনি মনে করেন। তিনি সরকারের বৃহৎ স্বার্থে জলমহালে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নজরদারি বৃদ্ধিসহ অবৈধ দখলমুক্ত করার দাবি জানান।