হবিগঞ্জ-শায়েস্তাগঞ্জ সড়কের কলিমনগরে পিকআপ ভ্যান সিএনজি অটোরিকশা ও টমটমের ত্রিমূখি সংঘর্ষ
স্টাফ রিপোর্টার ॥ হবিগঞ্জ-শায়েস্তাগঞ্জ সড়কের কলিমনগরে পিকআপ ভ্যান-সিএনজি অটোরিকশা ও টমটম ইজিবাইকের ত্রিমূখি সংঘর্ষে চিকিৎসক ও প্রধান শিক্ষক নিহত হয়েছেন। দুর্ঘটনায় আহত হয়েছেন স্বামী-স্ত্রীসহ আরও ৫ জন। গতকাল শুক্রবার সকাল ৯টার দিকে ওই সড়কের কলিমনগরের বাইপাস সড়কের কালভার্টের নিকট এ দুর্ঘটনা ঘটে। এ সময় বেশ কিছু সময় ওই সড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ ছিল। খবর পেয়ে শায়েস্তাগঞ্জ থানার ওসি অজয় চন্দ্র দেব ও ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা ঘটনাস্থলে পৌঁছে হতাহতদেরকে উদ্ধার করে হবিগঞ্জ সদর হাসপাতালে প্রেরণ করেন।
নিহতরা হলেন হবিগঞ্জ সদর আধুনিক হাসপাতালের মেডিকেল অফিসার ডাঃ দীপংকর পোদ্দার (৪০) ও ময়মনসিংহের গফরগাঁও উপজেলার শ্রীপান গ্রামের সফির উদ্দিনের ছেলে স্থানীয় প্রাইমারী স্কুলের প্রধান শিক্ষক জুলহাস উদ্দিন (৫৫)। আহতরা হলেন- নিহত প্রধান শিক্ষকের ভাতিজা আবু কাওছার (২৫), হবিগঞ্জ শহরের কোরেশনগর এলাকার নজরুল ইসলাম (৪০) ও তার স্ত্রী মমতাজ বেগম (৩০)। নিহত চিকিৎসক ডাঃ দীপংকর মাধবপুর উপজেলার ছাতিয়াইন গ্রামের চন্দন চন্দ্র পোদ্দারের ছেলে। তিনি ছিলেন মেডিসিন ও শিশুরোগ চিকিৎসক। নিহত প্রধান শিক্ষক জুলহাস উদ্দিন বানিয়াচং থানায় কর্মরত পুলিশ কনস্টেবল পুত্রের কাছে বেড়াতে এসেছিলেন। পুত্রের কাছ থেকে বাড়ি ফিরে যাবার পথে তিনি দুর্ঘটনার শিকার হন।
সূত্র জানায়, হবিগঞ্জ থেকে একটি যাত্রীবাহী সিএনজি অটোরিকশা শায়েস্তাগঞ্জের নতুন ব্রীজ এলাকার উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেয়। ওই অটোরিকশার যাত্রী ছিলেন সদর হাসপাতালের চিকিৎসক দীপংকর, বানিয়াচং থানার পুলিশ সদস্য হানিফ মিয়ার বাবা প্রধান শিক্ষক জুলহাস উদ্দিন, নজরুল ইসলাম ও মমতাজ বেগম। সিএনজিটি উল্লেখিত স্থানে পৌঁছলে বিপরীত দিক থেকে আসা একটি পান বোঝাই পিকআপ ভ্যানের সংঘর্ষ হয়। এ সময় একই দিক থেকে আসা একটি টমটমের সাথেও উভয় গাড়ির ধাক্কা লাগে। এতে পিকআপ-টমটম ও সিএনজি দুমড়ে মুচড়ে গিয়ে পাশের ধানের জমিতে পড়ে। এতে ঘটনাস্থলেই প্রধান শিক্ষক জুলহাস ও ডাঃ দীপংকর মারা যান। দুর্ঘটনার সাথে সাথে কিছু লোক যাত্রীবাহী সিএনজিতে লুটপাট চালিয়েছে বলে আহতরা জানান।
খবর পেয়ে পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা ঘটনাস্থলে পৌঁছে নিহত ও আহতদের উদ্ধার করে হবিগঞ্জ সদর আধুনিক হাসপাতালে প্রেরণ করে।
হবিগঞ্জের ডেপুটি সিভিল সার্জন ডা. মোঃ মুখলিছুর রহমান উজ্জল জানান, ডা. দীপংকর ৩৯তম বিসিএসএর একজন কর্মকর্তা। তার স্ত্রী সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজে কোর্সে আছেন। তাদের ৬ মাসের এক সন্তানও রয়েছে। গত বৃহস্পতিবার রাতে হবিগঞ্জ আধুনিক জেলা সদর হাসপাতালে নাইট ডিউটি করে গতকাল শুক্রবার সকালে তিনি স্ত্রী ও সন্তানের কাছে যাওয়ার জন্য শায়েস্তাগঞ্জ নতুনব্রীজ যাচ্ছিলেন। সেখান থেকে তাঁর সিলেটের গাড়িতে উঠার কথা ছিল। মর্মান্তিক দুর্ঘটনা স্ত্রী আর অবুঝ সন্তানের কাছে যাওয়ার আগেই তাকে কেড়ে নিয়েছে না ফেরার দেশে। তার এই মৃত্যুতে স্বাস্থ্য বিভাগে নেমে এসেছে শোকের ছায়া। গতকাল বিকালে ময়নাতদন্ত শেষে মরদেহ দুটি পরিবারের জিম্মায় দেওয়া হয়। দুর্ঘটনার খবর পেয়ে বিকাল ৩টার দিকে হবিগঞ্জের পুলিশ সুপার সদর হাসপাতাল পরিদর্শন করেন এবং আহতদের খোঁজখবর নেন।
যাত্রীদের অভিযোগ, হবিগঞ্জ-শায়েস্তাগঞ্জ সড়কে চলাচলকারী যানবাহনগুলো প্রায়ই বেপরোয়া গতিতে একটি আরেকটিকে পাল্লা দিয়ে চলে। এছাড়া অনেক যানবাহন চালক অদক্ষ এবং প্রশিক্ষণ না থাকায় এরকম দুর্ঘটনা ঘটে থাকে। দুর্ঘটনার পর থেকেই চালকরা পলাতক রয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।