সড়ক দুর্ঘটনা কেড়ে নিয়েছে তার মানুষের পাশে থাকার স্বপ্ন

আবুল কালাম আজাদ, চুনারুঘাট থেকে ॥ “আসসালামু আলাইকুম, আশা করি আল্লাহর রহমতে আপনারা সবাই ভাল আছেন। আমি বিগত ত্রিশ বছর যাবত প্রবাসে ছিলাম। তাই আমি আপনাদের সুখে দু:খে থাকতে পারি নাই। এখন যদি আপনারা আমাকে সুযোগ দেন, আমি বাকি জীবনটা আপনাদের পাশে থাকতে চাই। ইনশাআল্লাহ আমি এক মাস বা দেড় মাসের মধ্যে বাড়িতে আসতেছি, আমার জন্য দোয়া করবেন। আমি যদি ভুল ত্রুটি করে থাকি আমাকে সবাই ক্ষমা করবেন” গত ৫ নভেম্বর ফেসবুকে এমন স্ট্যাটাস দেওয়ার ঠিক এক মাসের মাথায় ২৮ নভেম্বর তিনি দুবাই সারজা শহরে সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেলেন এবং দেড় মাসের মধ্যে তিনি গতকাল মঙ্গলবার দেশে ফিরলেন, তবে জীবিত নয়, লাশ হয়ে। মঙ্গলবার ভোররাতে দুবাই থেকে দেশে এসে পৌছে তাঁর লাশ।
হবিগঞ্জের চুনারুঘাট উপজেলার কালিশিরি গ্রামের বাসিন্দা প্রবাসী আব্দুল গফুর। তার ইচ্ছা ছিল দেশে এসে ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য হিসেবে নির্বাচন করবেন। বিগত ৭ মাস করোনার সময়ে তিনি প্রবাস থেকেও লক্ষ লক্ষ টাকা অসহায় ও দরিদ্র মানুষের মাঝে বিলিয়ে দিয়েছেন। করোনার সময় দেশে এসে গ্রামের ঘরে ঘরে খাবার পৌছে দিয়েছেন। গ্রামের শত শত মানুষকে দিয়েছেন নলকুপসহ বিভিন্ন সুবিধা।
গতকাল মঙ্গলবার বিকেল ৩টায় গফুরের লাশ নিজ বাড়িতে এসে পৌছলে কান্নার রোল পড়ে। শুধু আত্মীয় স্বজন নয়, পাড়াপ্রতিবেশিসহ অনেকেই তার জন্য কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান আবেদ হাসনাত চৌধুরীসহ নেতৃবৃন্দ এসে পরিবারকে শান্তনা দেন।
প্রতিবেশিরা জানান, আব্দুল গফুর প্রায় ৩০ বছর আগে জীবিকার জন্য দুবাই যান। প্রতি বছরই তিনি দেশে আসতেন এবং আত্মীয় স্বজন ছাড়াও গ্রামের অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়াতেন। তিনি জীবনের শেষ সময়ে এসে মানুষের সেবা করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু মৃত্যু তাকে আর মানুষের পাশে থাকতে দেয়নি।
বাদ মাগরিব কালিশিরি গ্রামের মাদ্রাসা প্রাঙ্গণে জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়। এতে স্থানীয় চেয়ারম্যান, গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ শত শত মুসল্লী অংশ নেন।