আবুল কালাম আজাদ, চুনারুঘাট থেকে ॥ প্রতিষ্ঠার পর থেকেই হবিগঞ্জের চুনারুঘাট উপজেলার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে কোনো স্থায়ী শহীদ মিনার ছিল না। ফলে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসসহ বিভিন্ন জাতীয় দিবসে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে পারত না স্কুলের শিক্ষার্থীরা। এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কোনোটিতে কলাগাছ কিংবা বাশ কাঠ দিয়ে অস্থায়ীভাবে শহীদ মিনার বানিয়ে দিবস পালন করা হতো। আবার কোনো কোনো প্রতিষ্ঠানে পতাকা উত্তোলন করে দিবস পালন করা হতো। তবে এবারের ১৬ ডিসেম্বর মহান বিজয় দিবস থেকে তাদের আর অস্থায়ী শহীদ মিনার তৈরি করতে হবে না। এবার স্থায়ীভাবে নির্মিত স্মৃতির মিনারে শহীদদের প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা জানাবে শিক্ষার্থীরা। তাদের এই সুযোগ করে দিয়েছে উপজেলা উপজেলা শিক্ষা বিভাগ। এডিবির ক্ষুদ্র মেরামত ও সামাজিক সহযোগিতার অর্থায়নে প্রতিষ্ঠানগুলোতে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের আদলে তৈরি করে দেওয়া হয়েছে শহীদ মিনার।
উপজেলার ১০টি ইউনিয়ন ও পৌরসভায় ১৭১টি সরকার প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। এরমধ্যে ৪টি বিদ্যালয়ে স্থানীয় ভাবে শহীদ মিনার নির্মান আগেই করা হয়। বাকী বিদ্যালয়গুলো প্রতিষ্ঠার পর থেকেই কোন শহীদ মিনার ছিল না। এনিয়ে ২০১৯ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি দৈনিক যুগান্তর পত্রিকায় চলতি বছর ২১ শে ফেব্রুয়ারি রিপোর্ট প্রকাশিত হয়। এর পরই উপজেলা শিক্ষ বিভাগ উদ্যোগ নেয় মুজিববর্ষে শহীদ মিনার নির্মাণের। উপজেলা পরিষদের সিদ্ধান্ত মোতাবেক ২০১৯-২০ অর্থ বছরে ক্ষুদ্র মেরামত এবং স্থানীয় সহযোগিতার টাকায় সকল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শহীদ মিনার তৈরির সিদ্ধান্ত নেয়। এনিয়ে চলতি বছর ১৮ ফেব্রুয়ারি দৈনিক যুগান্তরে প্রথম পাতায় ‘চুনারুঘাটের ১৫৩ প্রাথমিক বিদ্যালয়ে হচ্ছে শহীদ মিনার” শিরোনামে সংবাদ প্রকাশিত হয়। সম্প্রতি বরাদ্দ আসলে দ্রুত উপজেলার ১৬৭টি (পরবর্তীতে বাড়ানো হয়) প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের আদলে টাইলসসহ নির্মাণ করা হয় শহীদ মিনার। প্রত্যেকটি শহীদ মিনার নির্মাণে ব্যয় হয়েছে ৯০ হাজার থেকে ১ লাখ টাকা। এ শহীদ নির্মাণ হওয়ায় শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা খুশি। এখন থেকে কোন ২১ ফেব্রুয়ারি, স্বাধীনতা ও বিজয় দিবসসহ যে কোন দিবসে তাদের আর অস্থায়ী শহীদ মিনার নির্মাণ করতে হবে না। আগামী ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবস থেকেই এসব শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা জানানোর মধ্য দিয়ে শুরু হবে বিদ্যালয়গুলোর নতুন পথচলা। এবার শিক্ষার্থীরা তাদের নিজ বিদ্যালয়ের শহীদ মিনারে ফুল দিয়ে শহীদদের প্রতি প্রথম শ্রদ্ধা জানাতে পারবে।
এবিষয়ে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মোহাম্মদ মাসুদ রানা বলেন, বিভিন্ন জাতীয় দিবসে বীর শহীদদের প্রতি কোমলমতি শিশুরা যাতে শ্রদ্ধা জানাতে পারে এবং দিবসগুলোর তাৎপর্য উপলব্ধি করতে পারে সে জন্য শহীদ মিনার নির্মাণের উদ্যোগ নিই।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সত্যজিত রায় দাশ বলেন, প্রতিষ্ঠানগুলোতে আগে শহীদ মিনার ছিল না। উপজেলা শিক্ষা বিভাগের ক্ষুদ্র মেরামত ও স্থানীয়ভাবে অর্থ সংগ্রহের মাধ্যমে শহীদ মিনার তৈরি করে দেওয়া হয়েছে। খুব সুন্দর কাজ হয়েছে। বিদ্যালয় চত্বরে শহীদ মিনার নির্মাণ হওয়ায় এখন থেকে স্কুলের শিক্ষার্থীরা জাতীয় দিবসগুলোর তাৎপর্য ও শহীদদের সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করতে পারবে।