নিতেশ দেব, লাখাই থেকে ॥ মহান মুক্তিযুদ্ধে দেশের জন্য জীবন বাজি রেখে যুদ্ধে ঝাপিয়ে পড়েছিলেন আব্দুর রশীদ। মুক্তিযুদ্ধে জয়ী হলেও জীবন যুদ্ধ আর চালিয়ে যেতে পারছেন না তিনি। নিজের বসবাসের একটা বাড়ির খুবই প্রয়োজন বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রশীদের। একাত্তরে যেমন গৃহহীন অবস্থায় পাড়ি জমিয়েছিলেন মুক্তিযুদ্ধে, এখন আর গৃহহীন অবস্থায় জীবনযুদ্ধ চালিয়ে যেতে পারছেন না স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে।
জন্ম তার হবিগঞ্জের লাখাই উপজেলার ধর্মপুর গ্রামে। তার পিতা মৃত আলাউদ্দিন। তবে মুক্তিযুদ্ধের পরে সপরিবারে বিভিন্ন স্থানে বসবাস করেন। প্রায় ২০ বছর ধরে তিনি ওই গ্রামের বাড়িতে আশ্রয় নিয়ে ছোট একটি ঝুপড়ি ঘরের মাঝে বসবাস করে আসছেন।
মেজর জেনারেল কে এম শফিউল্লাহ ও মেজর নুরুজ্জামানের অধীনে মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি ভারতের হেজা মারায় প্রশিক্ষণ নেন। পরবর্তীতে মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রশীদ বিভিন্ন এলাকায় পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে গেরিলা যুদ্ধে অংশ গ্রহন করেন। মহান মুক্তিযুদ্ধ শেষে যুদ্ধকালীন মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার ইলিয়াস কামালের নেতৃত্বে হবিগঞ্জ পোদ্দার বাড়িতে ক্যাপ্টেন এজাজ এর নিকট তিনি অস্ত্র জমা দেন।
সরকার মুক্তিযোদ্ধাদের ভাতা দিচ্ছেন। দুঃস্থদের দিচ্ছেন ঘর। কিন্তু আব্দুর রশীদের ভাতা জুটলেও জুটছেনা বাড়ি। স্বাধীনতার আগের সময়ের মতো আজো তিনি পরাশ্রয়েই আছেন।
কথা হয় আব্দুর রশীদের সাথে। তিনি জানান ১৯৮৮ সালে বন্যার পর ক্ষতিগ্রস্ত মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রশীদ তার পৈতৃক ভিটা বিক্রি করে আসহায় অবস্থায় পরিবার পরিজন নিয়ে চলে যান শ্বশুরবাড়ি হবিগঞ্জের শায়েস্তাগঞ্জ উপজেলার পুরাইকলা গ্রামে। পরবর্তীতে তিনি সংসার চালানোর জন্য সান মেশিন কাধে নিয়ে গ্রামে গ্রামে ঘুরে দুই-একশ টাকা যা উপার্জন হতো তা দিয়ে কোন মতে সংসার চালাতেন। বয়সের ভারে নুয়ে পড়া বৃদ্ধ মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রশীদ এখন আর তা পারছেন না। ৭ সন্তানের জনক তিনি। সংসারে আছেন স্ত্রী আর ৩ ছেলে ও ৪ মেয়ে।
দুঃখ ভারাক্রান্ত কন্ঠে বললেন, আজো আমি ঘরবাড়িহীন একজন মানুষ। দেশের জন্য যুদ্ধ করেছি জীবন বাজি রেখে। কিন্তু নিজের জীবন যুদ্ধ চালাতে পারছি না।
আব্দুর রশীদ জানালেন, মেয়েদের বিয়ে দেওয়ার জন্য ব্যাংক থেকে টাকা ঋণ নেন। এর জন্য ব্যাংক কর্তৃপক্ষ তার সরকারি ভাতা থেকে কেটে রেখে দেয় অর্ধেকের মত ভাতার টাকা। সরকারী ভাতা পাচ্ছেন তবে অসুস্থতার কারণে তা অপ্রতুল। সিংহভাগ টাকাই চলে যায় ওষুধ জোগাড় করতে।
সরকার মুক্তিযোদ্ধাদের জমি দিয়ে ঘরবাড়ি তৈরি করে দিচ্ছেন। তবে আমার মত একজন আসহায় মুক্তিযোদ্ধা আজও পেলাম না একটি সরকারি ঘর। আমার আর কিছু চাওয়ার নেই। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সুযোগ্য কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে আমার একটাই চাওয়া, আমি ও আমার ছেলে মেয়েদের জন্য যেনো মাথা গোঁজার জায়গা হয়েছে বলে দেখে যেতে পারি।
এ ব্যাপারে লাখাই উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা আফজালুর রহমানের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, প্রাথমিক যাচাই-বাছাই কমিটিতে মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রশীদের নাম নেই। তবে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করে দেখা যাবে দেওয়া যায় কি না। তবে এখন যদি সম্ভব না হয় পরবর্তীতে তাকে ঘরের ব্যবস্থা করে দেওয়া হবে বলে জানান তিনি।