মতবিনিময় সভায় মেয়র মিজানুর রহমান মিজান
কল্যাণরাষ্ট্র বিনির্মাণে সামাজিক সংগঠনের রয়েছে বিরাট ভূমিকা ॥ অধ্যাপক ড. জহিরুল হক শাকিল

স্টাফ রিপোর্টার ॥ গতকাল সোমবার সকালে হবিগঞ্জ পৌর টাউন হলে হবিগঞ্জ শহরের ৭৭ টি সামাজিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দের সাথে মতবিনিময় করেছেন হবিগঞ্জ পৌরসভার মেয়র মিজানুর রহমান মিজান। আমিনুল ইসলামের পরিচালনায় অনুষ্ঠিত সভায় ধারণা বক্তব্য রাখেন ওসমান গণি রুমি। মতবিনিময় সভায় অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. জহিরুল হক শাকিল, বৃন্দাবন সরকারি কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ অধ্যাপক দেওয়ান জামাল উদ্দিন চৌধুরী, বাড্স কেজি এন্ড হাইস্কুলের অধ্যক্ষ আলহাজ্ব নূর উদ্দিন জাহাঙ্গীর, হবিগঞ্জ বাপার সাধারণ সম্পাদক তোফাজ্জল সোহেল, পৌর কাউন্সিলর আব্দুল আওয়াল মজনু।
শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. জহিরুল হক শাকিল বলেন, হবিগঞ্জ পৌরসভা আগামী বছর ১৪০ বছরে পদার্পন করবে। একসময়ের মহুকুমা বা সাবডিভিশন সদরের পৌরসভা থেকে এটি এখন জেলা সদরের পৌরসভা। একসময় হবিগঞ্জের সাথে এর সকল উপজেলার যোগাযোগ ছিল না। বিগত এক যুগে অবকাঠামোগত দিক থেকে ব্যাপক উন্নতি সাধন হওয়ায় আজ কেবল সকল উপজেলার সাথে পৌরসভার সরাসরি যোগাযোগই স্থাপিত হয়নি বরং পার্শ্ববর্তী কয়েকটি জেলারও হার্ট হচ্ছে হবিগঞ্জ পৌরসভা। বৃন্দাবন কলেজে অনার্স, মাস্টার্স ও প্রিলিমিনারি মাস্টার্স কোর্স চালু হওয়ায় এখানে ২০ হাজার ছাত্র-ছাত্রী লেখাপড়া করছে। বসবাস করছে। সরকারী মেডিক্যাল কলেজ স্থাপিত হওয়ায় ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পদক্ষেপ নেয়ায় হবিগঞ্জ পৌরসভার উপর দিন দিন চাপ বাড়বেই। সেজন্য পৌর কর্তৃপক্ষের সক্ষমতা বাড়াতে হবে। বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন বাপার আজীবন সদস্য অধ্যাপক ড. জহিরুল হক শাকিল আরো বলেন, সামাজিক সংগঠনসমূহ তাদের পরিধিতে কার্যক্রম পরিচালনা করে একটি সমাজে ও রাষ্ট্রে ব্যাপক ভূমিকা রাখতে পারে। পাশ্চাত্য দেশসমূহে সরকারের অনেক কর্মসূচি ও প্রকল্প বাস্তবায়নে সামাজিক সংগঠনকে দায়িত্ব দেয়া হয়। তাদের অনুকূলে অর্থ বরাদ্দ দেয়া হয়। একটি কল্যাণরাষ্ট্র বিনির্মাণে সামাজিক সংগঠনের রয়েছে বিরাট ভূমিকা। ড. জহিরুল হক শাকিল সামাজিক সংগঠনসমূহের সাথে মতবিনিময় সভা আয়োজন করায় পৌর মেয়রের ভূয়সি প্রশংসা করে বলেন, পরিস্কার পরিচ্ছন্ন ও সবুজায়িত তথা ক্লিন সিটি গ্রিণ সিটির ধারনা বাস্তবায়নে এসকল সামাজিক সংগঠন পৌরসভার সাথে কাজ করতে পারে। তিনি শহরের সামাজিক সংগঠনসমূহের জন্য বিশেষ বরাদ্দ ও নিয়মিত পৃষ্ঠপোষকতার জন্য পৌর মেয়রের প্রতি দাবি জানান।
পৌর মেয়র মিজানুর রহমান বলেন, গত একবছরে পৌরসভার ব্যাপক উন্নয়ন সাধিত করেছি। জলাবদ্ধতা সমস্যার সমাধানে পুরাতন খোয়াই নদীর আংশিক খনন ও অনেক ড্রেন উদ্ধার করেছি। ডাম্পিং স্টেশন নির্মাণের জন্য তৎপরতা চালাচ্ছি। তিনি সামাজিক সংগঠনসমূহকে পৌরসভাকে ক্লিন ও গ্রীণ হিসেবে গড়ে তোলার কাজে সহায়তার জন্য আহবান জানিয়ে বলেন, শহরের সামাজিক সংগঠনসমূহকে পৌরসভা থেকে পৃষ্ঠপোষকতা করা হবে। হবিগঞ্জকে দেশের মধ্যে একটি মডেল পৌরসভা হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে সামাজিক সংগঠনসমূহের সহযোগিতা প্রয়োজন।
পৌর মেয়র সকলকে নিয়ে আগামী শনিবার সকাল ৮টায় পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম শুরু করার ঘোষণা দেন। সভায় বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ বক্তব্য রাখেন ও অনেকে লিখিতভাবে তাদের প্রস্তাবনা পৌর মেয়রের কাছে তুলে ধরেন।
সামাজিক সংগঠন সমূহের পক্ষে বক্তব্য রাখেন হবিগঞ্জ ইনফোর চেয়ারম্যান ও দ্বীপশিখা ফাউন্ডেশনের সভাপতি সাইফুদ্দিন জাবেদ, আপনজন সভাপতি অ্যাডভোকেট কামরুল হাসান চৌধুরী, তাসনুভা শামিম ফাউন্ডেশনের সভাপতি মহসিন চৌধুরী, সাংবাদিক শাহ জালাল উদ্দিন জুয়েল, ব্যাংকার্স এসোসিয়েশনের শাহ জয়নাল আবেদিন রাসেল, হেল্পিং হ্যান্ড হবিগঞ্জের তানভীর মোর্শেদ মুন্না, দর্পণ হবিগঞ্জের সভাপতি সুভাষ আচার্য্য, বিডি ক্লিন হবিগঞ্জ টিমের মোজাহিদুল হক রেজু প্রমুখ। বক্তব্যে সামাজিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ অচিরেই পরিচ্ছন্নতা অভিযান, ডাম্পিং স্টেশন নির্মাণ, জনসচেতনতা সৃষ্টি সহ শিশুদের জন্য হবিগঞ্জ পৌর এলাকায় শিশুপার্ক স্থাপন করার পরামর্শ দেন। এসময় উপস্থিত ছিলেন হবিগঞ্জের সামাজিক সংগঠন, লাল সবুজ, বিডি ক্লিন, তাসনুভা শামীম ফাউন্ডেশন, ব্যাংকার এসোসিয়েশন, হ্যন্ড ফর হেল্প, ইউনিটি অব হবিগঞ্জ, দ্বীপশিখা ফাউন্ডেশন, উদ্ভাবনী বিজ্ঞান ক্লাব, তারণ্য সোসাইটি, বন্ধুজন, জাগ্রত তরুণ সংগঠন সহ ৭৫টি সামাজিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ।
পৌর মেয়র প্রতিটি সামাজিক সংগঠনগুলোর প্রতি ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন এবং তাদের সাথে এক হয়ে শহরের উন্নয়ন, মানুষের সেবার আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে কাজ করার আগ্রহ প্রকাশ করেন। এছাড়া আগামী শনিবার সকাল ৮টায় পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রমের ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখতে সকলকে উপস্থিত থাকতে অনুরোধ করেন।