পৌরবাসীর প্রতি মেয়র মিজানের খোলা চিঠি

প্রিয় হবিগঞ্জ পৌরবাসী
শ্রদ্ধা, সালাম/ আদাব ও শুভেচ্ছা নিবেন। আজ হবিগঞ্জ পৌরসভা মেয়র পদে উপ-নির্বাচনের এক বছর পূর্তি হয়েছে। গত ২০১৯ সালের ২৪ জুন আপনাদের মহামূল্যবান ভোটে আমি মেয়র পদে নির্বাচিত হই। আপনারা সেদিন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনা কর্তৃক প্রদত্ত গণমানুষের আশা ও ভরসার প্রতিক নৌকা প্রতীকে বিপুল ভোট প্রদান করেন। নির্বাচিত হওয়ার পর আমি ১৪ জুলাই ২০১৯ তারিখে হবিগঞ্জ পৌরসভার দায়িত্ব গ্রহণ করি। দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকেই আমি আপনাদের সকল সমস্যা সমাধান করার আপ্রাণ চেষ্ঠা চালিয়ে যাচ্ছি। আপনারা জানেন, আমাদের প্রাণের শহর হবিগঞ্জের প্রধান সমস্যা জলাবদ্ধতা। জলাবদ্ধতার পাশাপাশি সড়কের বেহাল দশা, অপর্যাপ্ত সড়ক বাতি ও অপরিকল্পিত নগরায়নের ফলে এই শহর আমাদের ভোগান্তির শহরে পরিণত হয়েছে। প্রিয় পৌরবাসী, আমি দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকেই আপনাদেরকে জলাবদ্ধতা মুক্ত শহর উপহার দেওয়ার চেষ্ঠা চালিয়ে যাচ্ছি। ইতিমধ্যে, জলাবদ্ধতা নিরসনে আমি আমার পৌর পরিষদ ও পৌর কর্মকর্তা- কর্মচারীদের নিয়ে দিনে ও রাতে শহরের প্রায় গুরুত্বপূর্ণ সকল ড্রেন ও খাল খনন করেছি। ড্রেনে ময়লা আবর্জনা ও অপচনশীল প্লাস্টিক সামগ্রী রোধ করতে স্থাপন করেছি ২০০ ডাস্টবিন। নিয়মিত ডাস্টবিন পরিস্কার ও ড্রেনের ময়লা আবর্জনা অপসারণের জন্য অচল ২ টি ড্রাম ট্রাক নতুন করে চালু করেছি। রাস্তায় ধুলাবালি অপসারণ ও পরিচ্ছন্নতার জন্য একাধিক ঝাড়ু বাহিনীর দ্বারা রাস্তা ঝাড়ু দেওয়া চালু করেছি। জলাবদ্ধতা নিরসনে জেলা প্রশাসক মহোদয়ের সহযোগীতায় সড়ক ও জনপথ বিভাগের মাধ্যমে মুক্তিযোদ্ধা চত্ত্বর ও কোর্ট মসজিদের সামনে দুইটি আরসিসি বক্স কালভার্ট নির্মাণাধীন আছে। এই দুটি কালভার্টের দ্বারা পৌরসভার অধিকাংশ এলাকা উপকৃত হবে। বৃষ্টির দিনে হবিগঞ্জ শহরের ব্যবসায়ীবৃন্দের ব্যবসা পরিচালনা করতে ভোগান্তির শিকার হন, মেইন রোডে পরিকল্পিত ড্রেন না থাকা ও বহুদিন ধরে অযত্নে অবহেলায় সরু ড্রেন থাকলেও পানি নিষ্কাশনে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হত। আমি ইতিমধ্যে এসব ড্রেন তলদেশ পর্যন্ত পরিস্কার করতে সক্ষম হয়েছি। যার ফলে এবছর অতি বর্ষণেও পানি জমে থাকে না। ইতিমধ্যে কোর্ট মসজিদের হতে চৌধুরী বাজার পর্যন্ত মেইন রোডে আরসিসি ড্রেন নির্মাণ কাজ শুরু করেছি ,যা এখনো চলমান। তাছাড়া একাধিক কালভার্ট ভেঙ্গে আধিনিকায়ন ও সম্পূর্ণ পরিস্কার পরিচ্ছন্ন করায় শহরের পাড়া মহল্লায়ও এখন জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয় না। ইতিমধ্যে বাইপাস সড়কের সাথে কামড়াপুর হতে নতুন স্টেডিয়াম পর্যন্ত ১০ ফুট প্রসস্থ একটি মাস্টার ড্রেন নির্মাণের জন্য টেন্ডার কার্যক্রম সম্পন্ন করেছি, এবারের বর্ষা মৌসুম শেষেই এই ড্রেনের নির্মাণ কাজ শুরু হবে। পুরাতন খোয়াই নদী পরিস্কার করা ও গুরুত্বপূর্ণ অংশে খনন কাজ চলমান। সড়ক বাতির ক্ষেত্রে নিম্নমানে বাতির পরিবর্তে উন্নতমানের বাতি লাগানো হচ্ছে। সম্ভাব্য সকল স্থানে নতুন বাতি স্থাপনের কাজ চলমান। সড়ক বাতি স্থাপন ও মেরামত কাজকে আরও গতিশীল করতে আরও একটি টেকনেশিয়ান গ্রুপ গঠন করা হচ্ছে। ভাঙ্গাচুরা সড়কের কারণে কলেজ রোডে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের যাতায়াত ছিল কষ্টকর। আমি দায়িত্ব নেওয়ার পর তড়িৎ গতিতে সড়ক সংস্কার করেছি। এই সড়কের বেবি স্ট্যান্ড হতে পুরাতন পৌরসভা মুখ ও পিটিআই সম্মুখের সড়ক পানির কারণে কার্পেটিং টেকসই না হওয়ায় রিকাস্টের মাধ্যমে আরসিসি ঢালাই করার প্রক্রিয়া চলছে। পৌরসভার অর্জিত রাজস্ব হতে কর্মকর্তা কর্মচারীদের বেতন ভাতা পরিশোধ করেও গত কিছুদিন পূর্বে প্রায় ২ কোটি টাকায় বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ সড়ক ও ড্রেন নির্মাণ কাজ চলছে। এছাড়াও ইউজিআইআইপি-৩ প্রকল্পের প্রতিটি কাজ দ্রুত গতিতে সম্পন্ন করা হচ্ছে।
প্রিয় পৌরবাসী, বর্তমান বিশ্বে ছড়িয়ে পড়া মহামারী করোনা ভাইরাস কোভিড-১৯ এর প্রাদূর্ভাবে জনজীবন বিপর্যস্ত। ইতিমধ্যে হবিগঞ্জেও ভাইরাসটি প্রকোপ আকার ধারণ করেছে। এই মহামারীর কারণে আমাদের উন্নয়ন কর্মকান্ড বাধার সম্মুখীন। তারপরও আমি সম্ভাব্য সকল উন্নয়ন কর্মাকান্ড ও পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছি। করোনার প্রাদুর্ভাব মোকাবেলায় পৌর এলাকায় পৌরসভার পক্ষ থেকে প্রায় ৪ হাজার মাস্ক সহ হেন্ড স্যানেটাইজার বিতরণ বিতরণ করা হয়েছে৷ মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিল হতে প্রাপ্ত খাদ্য সামগ্রী পৌছে দিয়েছি প্রায় ১০ হাজার মানুষের কাছে। নিজে আক্রান্ত হওয়ার ঝুকি আছে জেনেও আমি প্রতিদিন করোনা আক্রান্তদের বাড়ি বাড়ি যাচ্ছি, তাদের খোজ খবর নেওয়ার পাশাপাশি হোম কোয়ারেন্টাইন নিশ্চিত করছি। দরিদ্রদের জন্য নিয়ে যাচ্ছি খাদ্য সামগ্রী ও ফলমূল। ইতিপূর্বে ২ মেশিনে মশক নিধন কার্যক্রম হলেও সারাদেশে যখন ডেঙ্গুর উপদ্রব ঠিক তখন থেকেই ৪টি মেশিনের মাধ্যমে মশক নিধন কার্যক্রম অব্যাহত আছে।
প্রিয় পৌরবাসী, বিগত উপ-নির্বাচনে আমাকে বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন দেওয়ার জন্য বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের সভানেত্রী, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধান মন্ত্রী জননেত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনা আপার প্রতি গভীর শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি হবিগঞ্জ পৌরসভার প্রত্যেক নাগরিকের প্রতি। ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি হবিগঞ্জ পৌরসভার সকল এলাকার সর্দার, মুরুব্বী, যুব সমাজ ও আমার সকল কর্মী – সমর্থকদের প্রতি । ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ ও সকল অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতৃবৃন্দের প্রতি। দেশে কিংবা বিদেশে থেকে যারা আমার প্রতি সমর্থন ও প্রচার প্রচারণা চালিয়েছেন তাদের প্রতিও আমার কৃতজ্ঞতা। ধন্যবাদ ও ভালবাসা আমার প্রিয় ছোট ভাইদের প্রতি যারা নির্বাচনের আগে ও পরে সব সময় আমার পাশে থেকে অক্লান্ত শ্রম ও মেধা দিয়ে আমাকে এগিয়ে নিয়ে এসেছে। জানি এই ঋণ শোধ হবার নয়, তবুও আপনাদের পাশে থেকে আপনাদের সেবায় কাটিয়ে দিতে চাই সারা জীবন। আপনাদের ভালবাসা ও সমর্থন আমার সারা জীবনের কাম্য।
প্রিয় পৌরবাসী, সারাদেশে সকল পৌরসভায় মেয়রবৃন্দ যেখানে ৫ বছরের জন্য দায়িত্ব গ্রহণ করেন সেখানে আমি উপনির্বাচনে মাত্র দেড় বছরের জন্য দায়িত্ব নিয়েছি। এই অল্প সময়ে দীর্ঘদিনের পিছিয়ে থাকা হবিগঞ্জ পৌরসভার সব কাজ সম্পন্ন করা সম্ভব নয়। আমি আপনাদের সহযোগিতা ও ভালবাসায় সকল সমস্যা সমাধান করতে চাই। কারও মুখের বুলি না শুনে, কর্মের মাধ্যমে মূল্যায়ন করবেন আপনারা। বর্তমান আওয়ামীলীগ সরকার আমলে হবিগঞ্জ পৌরসভার উন্নয়ন যাত্রা অব্যাহত রাখতে আপনারা সকলেই দলমত নির্বিশেষে আমাকে আবারও সুযোগ দিবেন এমনটাই প্রত্যাশা।

আপনারা সবাই ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন। নিরাপদে থাকুন পরিবার পরিজন নিয়ে। আপনাদের সকলের প্রতি আবারও কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ।
জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু।
– মোঃ মিজানুর রহমান
মেয়র, হবিগঞ্জ পৌরসভা।