নবীগঞ্জ প্রতিনিধি ॥ হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামীলীগ সভাপতি ও গজনাইপুর ইউনিয়নের (বরখাস্তকৃত) চেয়ারম্যান ইমদাদুর রহমান মুকুল। তার কীর্তি নিয়ে সরব উপজেলার জনপদ। সকল কর্মে সিদ্ধ হস্ত তিনি। মূর্তিমান ত্রাস হিসেবেও রয়েছে তার পরিচিতি। দুর্নীতির দৃশ্যমান অভিযোগে চেয়ারম্যান পদ থেকে ৭ জুলাই মুকুলকে বরখাস্ত করে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। বিগত চার বছর ধরে ২২৯ জন হত দরিদ্র লোকের খাদ্য বান্ধব কর্মসূচীর (১০টাকা) কেজির চাল আত্মসাত করেন তিনি। উচ্চ পর্যায়ের তদন্তে অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় বরখাস্ত হন। এমন ঘটনায় সারাদেশে তাৎক্ষণিক কঠোর নীতি গ্রহণ করে কেন্দ্রীয় আওয়ামীলীগ। কিন্তু নবীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি ইমদাদুর রহমান মুকুলের ব্যাপারে কোন সিদ্বান্ত গ্রহন না করলে বিরল ইতিহাস তৈরী হচ্ছে বলে মনে করেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অনেক রাজনীতিবিদরা। তিনি আওয়ামী লীগের সভাপতির পদে বহাল থেকে হুংকার দিচ্ছেন সদ্য বরখাস্ত ইউপি চেয়ারম্যান মুকুল। সিরিজ দুর্নীতির বাহিরে স্কুল, কলেজে ব্যক্তিগত সিন্ডিকেট, হাটবাজার ইজারা বাণিজ্য,পাহাড়-টিলা খাটাসহ দিনারপুরের পাহাড়ি অ লকে অপরাধের রামরাজ্যত্বে পরিণত করার বিস্তর অভিযোগ নিয়ে সরব উপজেলার জনপদ। চেয়াম্যানের দাপট ও দুর্নীতিতে অতিষ্ঠ গজনাইপুর ইউনিয়ন পরিষদের সদস্যরাও শেষ মুহূর্তে প্রতিবাদে সরব হন। সংরক্ষিত নারী সদস্যরা মুকুল আতঙ্কে তটস্থ ছিলেন।
উপজেলা আওয়ামী লীগ ও বিভিন্ন সূত্রে জানাযায়, নবীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি ও গজনাইপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ইমদাদুর রহমান মুকুলের বিরুদ্ধে দৃশ্যমান দুর্নীতির অভিযোগ ছাড়াও মাসিক ভিজিডির চাল আত্মসাতের অভিযোগ নিয়ে তদন্ত চলছে। গরীবের চাল আত্মসাতের অনিয়ম দুর্নীতির দায়ে সরকার ইউপি চেয়ারম্যান মুকুলকে বরখাস্ত করলেও তার দলীয় পদ নিয়ে নিরব হবিগঞ্জ জেলা আওয়ামীলীগ। পেছনে রয়েছে আওয়ামীলীগের দাপুটে দুই নেতার আশীর্বাদ। তাই ভয়ে তটস্থ প্রশাসন ও পরিচ্ছন্ন রাজনৈতিক বলয়। নিস্তব্ধ নিরবতায় রয়েছেন আওয়ামীলীগ নেতারা। কারন কর্তা ব্যক্তির আশীর্বাদে তুষ্ট তিনি। তদন্তে সুপারিশের ভিত্তিতে এখনো সরকারি টাকা উদ্ধারে কোন মামলা হয়নি তার বিরুদ্ধে। মুকুল কা-ে অজানা আতংক বিরাজ করছে সর্বত্র। তবে বি ত-লাঞ্ছিত মানুষ প্রতিবাদে সরব। দুর্নীতির বিরুদ্ধে সরকারের জিরো টলারেন্স নীতি থাকলেও বহাল তবিয়তে ইমদাদুর রহমান মুকুল। প্রধানমন্ত্রীর খাদ্য বান্ধব কর্মসূচীর (১০) টাকা কেজির চাল ও হতদরিদ্রদের বরাদ্দকৃত মাসিক ভিজিডির চাল আত্মসাতের অভিযোগ নিয়ে জনতার মুখোমুখি চেয়ারম্যান মুকুল। একাধিক তদন্তে দৃশ্যমান দুর্নীতির অভিযোগ প্রমানিত হয়। বরখাস্ত হলেও বিধি মোতাবেক দেওয়ানী ও ফৌজধারী অপরাধে এখন পর্যন্ত কোন ব্যবস্থা নেয়নি প্রশাসন। এনিয়ে হতাশ ক্ষতিগ্রস্ত লোকজন। এছাড়াও বরখাস্তকৃত চেয়ারম্যান আওয়ামীলীগ সভাপতির পদে বহাল থাকায় সমালোচনা শুরু হয়েছে সমন্ত উপজেলা জুড়ে। দৃশ্যমান দুর্নীতি প্রমানিত হওয়ায় তাকে বরখাস্ত করে মন্ত্রণালয়। ৭ জুলাই খাদ্য বান্ধব কর্মসূচীতে কমিটির সভাপতি হিসেবে তালিকায় ১১৮৫ জন উপকারভোগীর মধ্যে ২২৯টি নাম অর্ন্তভুক্তিতে অসঙ্গতি, নিয়ম বর্হিভূতভাবে ডিলারকে দিয়ে তালিকা প্রস্তুত করা, মৃত ব্যক্তিকে ও একই ব্যক্তির নাম একাধিকবার অন্তর্ভুক্ত এবং বরাদ্দকৃত চাল সঠিক ব্যক্তির মাঝে বিতরণ না করার অভিযোগে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের উপসচিব ইফতেখার আহমদ চৌধুরী কর্তৃক স্বাক্ষরিতপত্রে চেয়ারম্যান মুকুল বরখাস্ত হন। তবে আইনি পদক্ষেপ নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। দুর্নীতির দায়ে সরকার কর্তৃক বরখাস্ত হলেও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি পদে বহাল তবিয়তে আছেন ইমদাদুর রহমান মুকুল।
যদিও ইতোপূর্বে গত (১৪ এপ্রিল) মঙ্গলবার করোনা পরিস্থিতিতে ১০ টাকা কেজির সরকারি চাল বিক্রিতে ওজনে কম দেয়ায় হবিগঞ্জের বানিয়াচং উপজেলার কাগাপাশা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সভাপতি নজরুল ইসলাম খানকে আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ্কার করা হয়।
গত (৯ মে) শনিবার শায়েস্তাগঞ্জে চাল বিতরণে অনিয়মের দায়ে জেলা আওয়ামী লীগের নির্দেশে নূরপুর ইউপি চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক উপ প্রচার সম্পাদক প্রভাবশালী আ’লীগ নেতা মুখলিছ মিয়াকে দল থেকে বহিষ্কার করে আওয়ামী লীগ। কিন্তু ইমদাদুর রহমান মুকুল কে নিয়ে রহস্যজনক ভূমিকায় হবিগঞ্জ জেলা আওয়ামীলীগ। যদিও নবীগঞ্জের জনসাধারণ মানুষ চেয়ে আছে হবিগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সিদ্ধান্তের দিকে।
মুকুল কীর্তি নিয়ে রহস্যজনক নিরবতায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আওয়ামীলীগ ও সহযোগী সংগঠনের অনেক নেতা কর্মী।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক উপজেলা আওয়ামী লীগের একাধিক নেতার সাথে আলাপকালে তারা জানান, জেলা আওয়ামী লীগের কোনো নির্দেশনা না থাকায় আ’লীগ সভাপতির অনিয়ম-দুর্নীতি অতঃপর সরকার কর্তৃক বরখাস্তের কর্মকা- নিয়ে সভা আহবান করা যাচ্ছে না। যদিও দুর্নীতিবাজ লোকদের দলীয় পদ থেকে বহিষ্কারের দাবীও গণমাধ্যমকর্মীদের কাছে তোলেন কোনো কোনো নেতা।
এ ব্যাপারে হবিগঞ্জ জেলা আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক নবীগঞ্জ উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান এডভোকেট আলমগীর চৌধুরী বলেন, দুর্নীতির বিরুদ্ধে সরকারের জিরো ট্রলারেন্স। এখানে দুর্নীতি করে কেউ পার পাবেনা, সে যেই হোক।
উল্লেখ্য,গজনাইপুর ইউনিয়নে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির ১০ টাকা কেজি দরের চাল প্রাপ্তির উপকারভোগী রয়েছেন ১ হাজার ১৮৫ জন তার মধ্যে ২২৯টি নামে গরমিল পাওয়া যায় তদন্তে।