মুজিববর্ষ ২০২০
অপু চৌধুরী
বঙ্গবন্ধু আর বাংলাদেশ জমজ শব্দ। ছাপান্ন হাজার বর্গ মাইলের মতো বিশাল বুক তাঁর। নীল আকাশের মতোই উদার। ১৭ মার্চ জাতির পিতার শুভ জন্ম দিন। বিভিন্ন কবির শত কবিতার পঙতিতে উঠে আসা সেই ধন্য পুরুষ স্বাধীন বাংলাদেশের মহান স্থপতি। হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর ১০০ তম জন্ম বার্ষিকী (১৯২০-২০২০)। ইতিমধ্যে এই বছরটিকে ‘মুজিব বর্ষ’ হিসাবে রাষ্ট্রীয়ভাবে ঘোষণা করা হয়েছে। পুরোটা বছর জুড়েই বাংলাদেশ ও সারা বিশ্ব বঙ্গবন্ধুকে স্মরণ করবে বিনম্র শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায়।
তিনি এদেশের মাটি আর মানুষকে এমন গভীর ভালোবাসার বন্ধনে বেঁধেছিল যে বন্ধন কোনদিন ছিন্ন হবার নয়। বঙ্গবন্ধু আজীবন অন্যায়, অত্যাচার, শোষণ-বঞ্চনার বিরুদ্ধে দারিদ্র, নিপীড়িত, বঞ্চিত মানুষের অধিকার আদায়ে মুক্তির সংগ্রামে অনন্য ভূমিকা রেখেছিলেন যা বিশ্বের ইতিহাসে খুবই বিরল। বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করে ঘাতকরা বাংলাদেশকেই হত্যা করতে চেয়েছিল। কিন্তু এত সহজেই কি মুছা যায় আমাদের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নাম।
বঙ্গবন্ধুর নিজের লেখা ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ এখনও আমি পাঠ করছি অসমাপ্ত রয়ে গেছে। যতটুকু পাঠ করলাম আমি হবাক হচ্ছি বিষ্মিত হচ্ছি। এই আত্মজীবনীর ঘটনা কাজ ও তথ্যের মধ্য দিয়ে যে অলিখিত ছবি ফুটে উঠেছে আমাদের মানসপটে। সেটাই কিন্তু এই মহান মানুষ ও মানবের প্রকৃত আত্ম প্রকৃতি। তাই আমি বলব বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের লেখা এই গ্রন্থটি বাঙালি ও বাংলার সংগ্রাম মুখর ইতিহাসে একটি অসাধরণ দলিল। যা আমাদের অমূল্য সম্পদ হয়ে উঠেছে। তাঁর জীবনের প্রতিটি কালপর্বের মাধ্যমে কতোটা সততা, নিষ্ঠা, ত্যাগ, মেধা, শ্রম ও মননের আগ্রহে মুগ্ধতার দিকে এগিয়ে গেছে। সরলতা নির্ভেজাল সত্য প্রকাশের অসংকোচ সাহস আর বলিষ্ট বিশ্বাসের মহত্বে এটি গ্রন্থটি পড়লেই স্পষ্ট হয়ে উঠবে। তাই তো এই আত্মজীবনী বাংলা সাহিত্য ও রাজনীতির পাঠের প্রেক্ষপটে অনন্য সাধারণ, অমূল্য রচনা বলেও বিবেচিত হবে।
শেখ মুজিব রাজনীতিতে এত জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিলেন যে বাংলার আপমর জনসাধারণ পিতা-পুত্র, মা-কন্যা সবার কাছেই ছিলেন প্রিয় মুজিব ভাই। বাংলাদেশের রাজনৈতিক নেতা কর্মীদের কাছেও তিনি হয়ে উঠেন আশা-ভরসার বট বৃক্ষ। তিঁনি ছিলেন সকলের সুখ-দুঃখের চির সাথী। বঙ্গবন্ধুর ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ পড়লে আরও জানা যায় সেই রহস্যের চাবিকাঠি…। ১৯৭১ সালের ৭ই মার্চ ঐতিহাসিক রেসকোর্স ময়দানে লাখো লাখো মানুষের জনসভায় তিনি স্বগর্বে ঘোষণা দেন এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম আমাদের স্বাধীনতার সংগ্রাম। তাঁর নাম ও বাণী ছিল আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রামের মূল চালিকা শক্তি। বাঙালি জাতি তাঁর আহ্বানে এক সাগর রক্তের বিনিময়ে, ২ লাখ নারীর সভ্রম এবং ৩০ লাখ শহীদের রক্তের বিনিময়ে ছিনিয়ে আনল স্বাধীনতার রক্তিম সূর্য। তাই তৃতীয় বিশ্বের মুক্তিকামী মানুষের কাছে বঙ্গবন্ধুর সংগ্রাম ও আদর্শ হয়ে দাঁড়লো বিপ্লবের প্রেরণার উৎস। তিনি বাংলা ভাষাকে বিশ্বে বিশেষ মর্যাদায় ভূষিত করেন। কবিতার ভাষায়, যে আছে মাটির কাছাকাছি সে কবির বাণীর লাগি কান পেতে আছি। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব এই বাংলাদেশের মাটি ও মানুষের কবি ছিলেন। লন্ডনের বিখ্যাত পত্রিকা ‘টাইমস্’ বঙ্গবন্ধুকে আখ্যা দিয়েছিল পোয়েট অব পলিটিক্স। আর এই পোয়েটের ভাষা ছিল রাজনীতি। বঙ্গবন্ধু সাধারণ মানুষের চেয়ে অতি বড় মাপের মহৎ মানুষ ছিলেন। তাঁর আদর্শ গুণাবলী সমুদ্রের বুকের মতো বিশাল হৃদয়। বাংলাদেশের জন্য তাঁর যে অবদান তা আজীবন বাঙালি জাতি শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করবে।
বঙ্গবন্ধুর শততম জন্ম দিবসে লক্ষ কোটি বাঙালির সঙ্গে আমিও তাঁর মৃত্যুঞ্জয়ী স্মৃতির প্রতিক গভীর শ্রদ্ধা ও অতল ভালোবাসা নিবেদন করছি।

লেখক- কবি ও সাংস্কৃতিক সংগঠক
দপ্তর সম্পাদক বঙ্গবন্ধু পরিষদ
হবিগঞ্জ জেলা শাখা।
মুঠোফোন : ০১৭১৬-১৬৬৭২৯