পাঠকের চিঠি
মোঃ জহিরুল ইসলাম লিটন পাঠান
মাধবপুর উপজেলার অবহেলিত একটি রেলওয়ে স্টেশনের নাম তেলিয়াপাড়া। এই তেলিয়াপাড়া থেকেই ১৯৭১ সালে সংগঠিত প্রতিরোধ যুদ্ধ শুরু হয়। শুধুমাত্র রেলপথ ও সড়কপথ নিকটবর্তী হওয়ায় নিরাপত্তার স্বার্থে স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম সরকারের শপথ গ্রহণ তেলিয়াপাড়ায় না হয়ে মেহেরপুরের (মুজিবনগর) বৈদ্যনাথতলায় আ¤্রকাননে হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে ৯ মাসের পুরোটা সময় জুড়ে তেলিয়াপাড়ায় হয়েছে মুক্তিযুদ্ধ। স্বাধীনতা যুদ্ধে বাংলাদেশের সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলোর একটি এই তেলিয়াপাড়া। কিন্তু দেশ স্বাধীন হওয়ার পর দেশের সবচেয়ে অবহেলিত এলাকা এই তেলিয়াপাড়া। আওয়ামী লীগ সরকারের সাবেক সমাজকল্যাণ মন্ত্রী এনামুল হক মোস্তাফা শহীদ ও সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এ এম এস কিবরিয়া প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন তেলিয়াপাড়া রেলওয়ে স্টেশনটিকে বি ক্লাস স্টেশনে উন্নীত করা হবে। কিন্তু সেই প্রতিশ্রুতি আজও বাস্তবায়ন হয়নি। বর্তমানে সিলেট-আখাউড়া রেল লাইনের মাধবপুর উপজেলার তেলিয়াপাড়ায় শত বছরের স্টেশন মাস্টারের ঘরটি দীর্ঘ দিন ধরে বন্ধ রয়েছে। রেলওয়ের কিছু অসাধু কর্মচারী মাসিক চুক্তিতে ভাড়া দিয়েছে স্টেশন মাস্টারের অফিসটি। ফলে শত শত যাত্রীকে বিনা টিকিটে চরম দুর্ভোগের মধ্যে দিয়ে এ স্টেশন থেকে দেশের বিভিন্ন স্থানে যাতায়াত করছেন। ট্রেনের সময়সূচি এবং রক্ষনাবেক্ষনের অভাবে স্টেশনের মালামাল নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। বিভিন্ন সময় মন্ত্রী, এমপিরা এ স্টেশনকে বি-ক্লাসে উন্নীত করার প্রতিশ্রুতি দিলেও বাস্তবায়ন করেননি কেউ-ই। প্রায় শত বছর পূর্বে এ স্টেশনটি তৈরী করা হলেও আধুনিকতার ছোঁয়া আজও লাগেনি। স্টেশনটিকে বি-ক্লাসে উন্নতি করলে উপজেলার ২৭টি গ্রামের জনসাধারণ ও তেলিয়াপাড়া, সুরমা চা বাগানসহ ২২টি চা-বাগানের শত শত যাত্রী এই স্টেশন দিয়েই ঢাকা-সিলেট-চট্টগ্রাম রেলপথে যাতায়াত করতে পারবে। স্টেশনটিতে যাত্রীদের জন্য কোন সুযোগ সুবিধা নেই বললেই চলে। এমনকি এই স্টেশনটিতে একজন বুকিং মাস্টারও নেই, গেইটম্যান শুধু গেইট উঠানো-নামানোর কাজ করে থাকেন। স্টেশনে মহিলাদের জন্য কোন শৌচাগার ও বিশ্রামাগার নেই। তেলিয়াপাড়া রেল স্টেশনটি নামেই শুধু রেল স্টেশন এখন। ১৯৭১ সালে তেলিয়াপাড়ার গুরুত্ব ছিল অপরিসীম। ঐতিহাসিক তেলিয়াপাড়া থেকেই ৪ এপ্রিল মুক্তিযুদ্ধের সেক্টর বন্টন এবং আনুষ্ঠানিক ভাবে মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি নেয়া হয়। মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি বিজড়িত এই স্থানটিকে দর্শনার্থীদের জন্য আরও আকর্ষণীয় করে তুলতে রেল স্টেশনটি বি-ক্লাসে রূপান্তর করা জরুরী। এ বিষয়ে এলাকাবাসী প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা ও বেসামরিক বিমান পরিবহণ ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট মাহবুব আলী এমপির হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।