ঊমা ব্যানার্জী নীতু
হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের অন্যতম ধর্মীয় পর্ব জগন্নাথ দেবের রথযাত্রা আজ শুক্রবার অনুষ্ঠিত হবে। প্রতি বছর আষাঢ়ের শুক্লপক্ষের দ্বিতীয়া তিথিতে এ রথযাত্রা শুরু হয়। দীর্ঘ ৯ দিনব্যাপী বিভিন্ন অনুষ্ঠানমালার মধ্যদিয়ে চলে এ উৎসব।
রথযাত্রার সূচনা প্রায় সাড়ে পাঁচ হাজার বছরের পুরনো। ইতিহাস অনুযায়ী, গঙ্গা রাজবংশ ও পরে গজপতি রাজারা ভারতের পুরীতে রথযাত্রা চালু করেন। শ্রীকৃষ্ণের মৃত্যু ও দারুকার কাঠ দিয়ে তাঁর বিগ্রহ নির্মাণের সঙ্গে এই উৎসবের গভীর যোগ রয়েছে। পুরাণ অনুযায়ী, রথে করে ভগবান জগন্নাথের সফর মূলতঃ তাঁর মাসি গু-িচার ঘরে যাওয়ার প্রতীক। ব্রহ্মা-পুরাণ অনুযায়ী, কৃষ্ণ তাঁর ভক্ত রাজা ইন্দ্রদ্যন্মুর সম্মুখে আবিভূর্ত হয়ে পুরীর সমুদ্রতটে ভেসে আসা একটি কাষ্ঠখ- দিয়ে তাঁর মূর্তি নির্মাণের আদেশ দেন। মূর্তি নির্মাণের জন্য রাজা একজন উপযুক্ত কাষ্ঠশিল্পীর সন্ধান করতে থাকেন। তখন এক রহস্যময় বৃদ্ধ ব্রাহ্মণ কাষ্ঠশিল্পী তাঁর সম্মুখে উপস্থিত হন এবং মূর্তি নির্মাণের জন্য কয়েকদিন সময় চেয়ে নেন। সেই কাষ্ঠশিল্পী রাজাকে জানিয়ে দেন মূর্তি নির্মাণকালে কেউ যেন তাঁর কাজে বাঁধা না দেন। বন্ধ দরজার আড়ালে শুরু হয় কাজ। রাজা ও রানী সহ সকলেই নির্মাণকাজের ব্যাপারে অত্যন্ত আগ্রহী হয়ে ওঠেন। প্রতিদিন তাঁরা বন্ধ দরজার কাছে যেতেন এবং শুনতে পেতেন ভিতর থেকে খোদাইয়ের আওয়াজ ভেসে আসছে। ৬-৭ দিন বাদে যখন রাজা বাইরে দাঁড়িয়েছিলেন এমন সময় আওয়াজ বন্ধ হয়ে যায়। অত্যুৎসাহী রানী কৌতুহল সংবরণ করতে না পেরে দরজা খুলে ভিতরে প্রবেশ করেন। দেখেন মূর্তি তখনও অর্ধসমাপ্ত এবং কাষ্ঠশিল্পী অন্তর্ধিত। এই রহস্যময় কাষ্ঠশিল্পী ছিলেন দেবশিল্পী বিশ্বকর্মা। মূর্তির হস্তপদ নির্মিত হয়নি বলে রাজা বিমর্ষ হয়ে পড়েন। কাজে বাধাদানের জন্য অনুতাপ করতে থাকেন। তখন দেবর্ষি নারদ তাঁর সম্মুখে আবির্ভূত হন। নারদ রাজাকে সান্ত¡না দিয়ে বলেন এই অর্ধসমাপ্ত মূর্তি পরমেশ্বরের এক স্বীকৃত স্বরূপ ও এই অসম্পূর্ণ রূপেই পূজা শুরু করতে বলেন। রথযাত্রার দিন বিশ্বের প্রায় আশিটি দেশের শতাধিক শহরের বিভিন্ন মন্দিরে জগন্নাথ, বলরাম ও সুভদ্রা মূর্তি মন্দির বাহিরে সর্বসমক্ষে বাহির করা হয়। তারপর তিনটি সুসজ্জিত রথে (কোনো কোনো স্থলে একটি সুসজ্জিত সুবৃহৎ রথে) বসিয়ে দেবতাদের পূজা সম্পন্নপূর্বক রথ টানা হয়। এখানে তিন দেবতাকে গু-িচা মন্দিরে জগন্নাথদেবের মাসির বাড়ি নিয়ে যাওয়া হয়। দক্ষিণ এশিয়ার ভারতবর্ষ কেন্দ্রিক রথযাত্রা অনুষ্ঠিত হতো। বর্তমানে আন্তর্জাতিক কৃষ্ণ ভাবনামৃত সংঘের মাধ্যমে ১৯৬৮ সাল থেকে বিশ্বের বেশিরভাগ প্রধান শহরে অর্থাৎ আমেরিকা, লন্ডন, কানাডা, রাশিয়া, ফ্রান্স, আফ্রিকা, অষ্ট্রেলিয়া, ইউরোপ, ইউক্রেন, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, সংযুক্ত আরব আমিরাত, কাতার, ফিজি, চীন, মরিশাস, উজবেকিস্থান, খাজাকিস্থান, নাইজেরিয়া, ডেনমার্ক, পাকিস্তান, বাংলাদেশ, নেপাল ও ভারতে রথযাত্রা উৎসব একটি সাধারণ দৃশ্য হয়ে উঠেছে।