স্টাফ রিপোর্টার ॥ নিশিরাতের সিইসি হিসেবে আলোচিত, সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নুরুল হুদাকে চার দিন রিমান্ডে নেওয়ার আদেশ দিয়েছেন আদালত। সোমবার (২৩ জুন) ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমান রিমান্ডের এই আদেশ দেন।
ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ঢাকার শেরেবাংলা নগর থানার এসআই শামসুজ্জোহা সরকার সাবেক সিইসি কেএম নুরুল হুদাকে হাজির করে ১০ দিন রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন করেন।
রিমান্ড আবেদনে তদন্ত কর্মকর্তা উল্লেখ করেন, আসামি নুরুল হুদা ২০১৮ সালের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকালে বাংলাদেশের প্রধান নির্বাচন কমিশনার হিসেবে নিযুক্ত ছিলেন। কিন্তু তিনি ওই নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে পারেননি ও দেশকে গভীর সংকটের মধ্যে নিমজ্জিত করেছেন। এ ছাড়া প্রশাসনকে একটি পক্ষে ব্যবহার করেছেন। যাতে করে তিনি সংবিধান অমান্য করেছেন এবং শপথ ঠিক রাখতে পারেনি। আসামি নুরুল হুদা দ-বিধি আইনের ১৭১ (ক) ধারার সংজ্ঞা মতে নির্বাচনের ছদ্মবেশ ধারণ করে দিনের ভোট রাতে সম্পাদন করার লক্ষ্যে সংশ্লিষ্ট সরকারি প্রতিষ্ঠানকে বাধ্য করে নির্বাচন সম্পন্ন করেছেন। সে নির্বাচন কমিশনের প্রধান ব্যক্তি ছিলেন। তিনি অন্যান্য কমিশনার এবং বিভাগীয় ও জেলা উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তাদের পরিচালনার দায়িত্বে ছিলেন। তিনি ষড়যন্ত্রমূলকভাবে সরকারি আদেশ, সাংবিধানিক ক্ষমতা হ্রাস, দেশের জনগণের ভোটাধিকার লঙ্ঘন করেছেন। তরুণ সমাজকে ভোট বিমুখ ও নির্বাচনের ভাবমূর্তি নষ্ট করেছেন।
এ ছাড়া কে এম নুরুল হুদা ২০১৮ সালের একাদশ জাতীয় নির্বাচনে প্রধান নির্বাচন কমিশনার থাকা অবস্থায় কার পরামর্শে ও সহযোগিতায় ভোটকেন্দ্রে নিয়োজিতদের দ্বারা দিনের ভোট রাতে সম্পন্ন করে মিথ্যা বিবৃতির মাধ্যমে একটি দলকে বিজয়ী ঘোষণা করেছেন এবং মিথ্যা গেজেট প্রকাশ ও বাস্তবায়ন করেন। আসামি নুরুল হুদা প্রধান নির্বাচন কমিশনার হিসেবে দায়িত্বে থাকা অবস্থায় ২০১৮ সালের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে একটি দলকে বিজয়ী ঘোষণা করার লক্ষ্যে জনগণের ভোটাধিকার হরণ করে প্রহসনমূলক নির্বাচন ব্যবস্থা গ্রহণ করে কত টাকা ঘুষ গ্রহণ করেছে তা উদঘাটন করা প্রয়োজন। যাতে করে নতুন প্রজন্মের কোটি কোটি ভোটার ভোট দিতে পারেননি। তাতে দেশে স্বৈরাচারের বীজ বপন করা হয়েছিল।
রিমান্ড আবেদনে আরও বলা হয়, নির্বাচন কমিশন একটি স্বাধীন ও সংবিধানিক প্রতিষ্ঠান হওয়া সত্ত্বেও গ্রেপ্তারকৃত আসামি সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার কেএম নুরুল হুদা কার ইন্ধনে ও কী স্বার্থে ২০১৮ সালের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সম্পূর্ণভাবে জনগণকে তাদের ভোটের অধিকার থেকে বঞ্চিত করেছেন। আসামি নুরুল হুদা ফ্যাসিবাদের মূল নায়ক। তার কাছ থেকে পাতানো নির্বাচনের কৌশল ও এর সঙ্গে জড়িতদের পরিচয় উদঘাটন করা দরকার। আসামি নুরুল হুদা কোন কোন সংসদ আমলে কার কার কাছ থেকে কত টাকা ঘুষ গ্রহণ করে ফলাফল পরিবর্তন করে গেজেটে সাজানো ভোটের ফলাফল প্রকাশ করেছেন তার তথ্য উদঘাটন করা দরকার। এছাড়া মামলার মূল রহস্য উদঘাটন করার জন্য রিমান্ডে নিয়ে তাকে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করা প্রয়োজন।
রিমান্ড অবেদনের পরে বিকেল ৩টায় নুরুল হুদাকে আদালতে আনা হয়। এসময় তাকে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের হাজতখানায় রাখা হয়। শুনানির আগে বিকেল ৪টা ৮ মিনিটে তাকে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে তোলা হয়।
রিমান্ড শুনানির সময় রাষ্ট্রপক্ষের প্রধান কৌঁসুলি ওমর ফারুক ফারুকী শুনানিতে বলেন, মামনীয় আদালত; ফ্যাসিস্ট হাসিনার ফ্যাসিজমে ভূমিকা রাখা ব্যক্তিদের মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করেছেন তিনি (নুরুল)। পরে জনগণের হাতে ধরা পড়েন। জনগণের মৌলিক অধিকার, বাঁচার অধিকার, ভোটের অধিকার হরণ করেন। জনতা তাকে আটক করে পুলিশে সোপর্দ করে উনাকে ফুলের মালা দিয়েছে। এরা সেদিন মানুষ ও জনতার পক্ষে থাকলে হাসিনা এত বড় ফ্যাসিস্ট হতো না। তার আমলে ২০১৮ সালে সবাই নির্বাচনে অংশ নিয়েছে। তারা জনগণ ও রাজনৈতিক দলের সঙ্গে প্রতারণা করেছেন। জনগণের ভোটের অধিকার কেড়ে নেন। নির্বাচনের সময় কমিশন ডিসি-ইউএনওদের অর্ডার দিয়ে রাতে ভোট দিয়েছেন। দিনের ভোট রাতে করার জন্য টাকা দিয়েছেন, বিরিয়ানি দিয়েছেন। অথচ সে বলেছে জনগণ ভোট দিয়েছে। কত বড় নির্লজ্জ হলে এমন কথা বলা যায়। এখনও তারা হাসে। আমার মনে হয় অন্য কেউ হলে নিজ থেকেই মরে যেত। আমরা তাকে চিনি নিশি রাতের নির্বাচন কমিশনার হিসেবে। আমি জানি না, তিনি কীভাবে পরিবারের সামনে মুখ দেখান।
মামলা সূত্রে জানা গেছে, গত ২২ জুন সকালে শেরেবাংলা নগর থানায় দশম, একাদশ ও দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন পরিচালনাকারী তিনজন সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ, কে এম নুরুল হুদা ও কাজী হাবিবুল আউয়ালের নেতৃত্বাধীন কমিশনের বিরুদ্ধে মামলা করে বিএনপি। দলের জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বাদী হয়ে মামলাটি করেছেন। মামলায় সাবেক তিন প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ ২৪ জনকে এজাহারনামীয় আসামি করা হয়।