
স্টাফ রিপোর্টার ॥ হবিগঞ্জ জেলার মাধবপুর উপজেলায় জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) নবগঠিত কমিটিতে আহ্বায়ক পদে জায়গা পেয়েছেন বঙ্গবন্ধু পরিষদ নেতা আজিজুর রহমান জয়ের স্ত্রী, আওয়ামী ঘরানার নেত্রী আছমা আক্তার চৌধুরী। এই নিয়োগকে কেন্দ্র করে উপজেলার রাজনৈতিক অঙ্গনে শুরু হয়েছে বিতর্ক ও মিশ্র প্রতিক্রিয়া।
২০ জুন এনসিপির কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ সদস্যসচিব আখতার হোসেন এবং উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম স্বাক্ষরিত চিঠিতে আছমা আক্তার চৌধুরীকে মাধবপুর উপজেলা আহ্বায়ক কমিটির প্রধান হিসেবে অনুমোদন দেয়া হয়।
তবে বিষয়টি নিয়ে উঠেছে নানা প্রশ্ন। স্থানীয়ভাবে পরিচিত আওয়ামীলীগপন্থী নেতা আজিজুর রহমান জয়, যিনি সাবেক বিমান মন্ত্রী অ্যাডভোকেট মাহবুব আলীর ঘনিষ্ঠ সহযোগী হিসেবে পরিচিত, তার স্ত্রী কীভাবে একটি বিপ্লবী সংগঠন এনসিপির নেতৃত্বে এলেন- তা নিয়ে উঠেছে তুমুল সমালোচনা।
২০২৪ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জয় ও তার স্ত্রী নৌকা প্রতীকের পক্ষে জোরালো প্রচারণায় অংশ নিয়েছিলেন। যদিও মাহবুব আলী সে নির্বাচনে পরাজিত হন, এরপর বিজয়ী এমপি সুমনের আনুকূল্যে আছমা আক্তার চৌধুরী মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন একতরফা ভোটারবিহীন নির্বাচনে। সেই রাজনৈতিক পটভূমির প্রেক্ষিতে এনসিপির মতো একটি ভিন্নমতধারার সংগঠনের নেতৃত্বে তার আসা প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা সায়েদ বোরহান উদ্দিন খান তার ফেসবুকে ক্ষোভ প্রকাশ করে লেখেন: “যাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ছিল, তারাই এখন হবিগঞ্জ মাধবপুরে এনসিপির নেতা! ৮/৯ মাস আমরা কঠোর পরিশ্রম করেছি, আজ আমরা হেরে গেলাম। এসব কমিটি জুলাই বিপ্লবের চেতনা ধ্বংস করেছে।” অন্যদিকে এনটিভি ইউরোপের মাধবপুর প্রতিনিধি সাংবাদিক জামাল মোঃ আবু নাছের লিখেছেন: “নতুন বাংলাদেশের স্বপ্ন নিয়ে এনসিপির যাত্রা শুরু হয়েছে, যেখানে স্বৈরাচারের ছায়া থাকার কথা নয়। কিন্তু অত্যন্ত কৌশলে আওয়ামীলীগের দোসররা ঢুকে যাচ্ছে। এটি হতাশাজনক।”
এই কমিটিতে আরও অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে সুরমা চা বাগানের আওয়ামী ঘরানার কর্মী লাল বাবু ও সমীরন পান তাতীকে, যারা সরাসরি আওয়ামী রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত।
এই পরিস্থিতিতে মাধবপুরে এনসিপির সক্রিয় সংগঠক সৈয়দ মোঃ বোরহান খান নিজেকে সংগঠনের কার্যক্রম থেকে গুটিয়ে নিয়েছেন। তিনি লিখেন: “ঘাম, শ্রম, মেধা দিয়ে এনসিপির সংগঠন দাঁড় করালাম। কিন্তু এই কমিটি ঘোষণার পর রাজনীতি থেকে নিজেকে গুটিয়ে নিলাম।”
মাধবপুরে এনসিপির এই বিতর্কিত কমিটি এখন জেলার রাজনৈতিক অঙ্গনে আলোচনা-সমালোচনার কেন্দ্রে।