স্টাফ রিপোর্টার ।। হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ উপজেলায় ২০ লাখ টাকা যৌতুকের দাবিতে এক গৃহবধূকে গরম খুন্তি দিয়ে পুড়িয়ে মারার চেষ্টা চালিয়েছে স্বামী ও তার আত্মীয়রা। মারাত্মক দগ্ধ অবস্থায় ওই নারীকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এ ঘটনায় ভুক্তভোগী লিজা আক্তার ওরফে নাজিরা আক্তার লিজা গত ২৭ এপ্রিল নবীগঞ্জ থানায় স্বামীসহ চারজনকে আসামি করে মামলা দায়ের করেছেন। মামলায় অভিযুক্তরা হলেন- নবীগঞ্জ উপজেলার আউশকান্দি ইউনিয়নের মুকিমপুর গ্রামের বাসিন্দা জরিপ খানের মেয়ে বাদীর ননাশ রেবি খান, ভাসুর ফয়েজ খান, দেবর হাবিবুর খান ও বাদীর স্বামী মোঃ শোয়াইবুর খান। অপরদিকে বাদী লিজা নবীগঞ্জ উপজেলার পানিউমদা ইউনিয়নের বড়চর গ্রামের ইলাছ মিয়ার কন্যা।

মামলার পরিপ্রেক্ষিতে গত ৬ জুন সিলেটের ওসমানীনগর সেনা ক্যাম্পের ক্যাপ্টেন শাহরিয়ার এর নেতৃত্বে সেনাবাহিনীর একটি বিশেষ টিম বিশ্বনাথ উপজেলার দশ গ্রাম এলাকায় অভিযান চালিয়ে সেখানকার একটি বাড়িতে পালিয়ে থাকা অবস্থায় মামলার ২জন আসামীকে আটক করা হয়। আটকক…তরা হলেন-নবীগঞ্জের মুকিমপুর গ্রামের জরিপ খানের মেয়ে রেবি খান ও তার ভাই ফয়েজ খান। পরে সেনাবাহিনী আটকক…তদের বিশ্বনাথ থানায় সোপর্দ করেন।

মামলার অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, ২০২৩ সালের ২৪ নভেম্বর ৪ নম্বর আসামী মোঃ শোয়াইবুর খানের সঙ্গে লিজার বিয়ে হয়। শোয়াইব আইইএলটিএস সম্পন্ন করে যুক্তরাজ্যে যাওয়ার প্র¯‘তি নিলে লিজার বাবার বাড়ি থেকে প্রথমে ১৫ লাখ এবং পরে ১২ লাখ-মোট ২৭ লাখ টাকা দেয়া হয়। এরপর ২০২৪ সালের ১৪ মার্চ লিজা ও শোয়াইবুর ব্রিটেনে পাড়ি জমান এবং কিছুদিন শান্তিপূর্ণভাবে বসবাস করেন। কিš‘ এরই মাঝে ৩ নম্বর আসামী হাবিবুর খান যুক্তরাজ্যে যেতে চাইলে আসামিরা লিজার কাছে আরও ২০ লাখ টাকা যৌতুক দাবি করেন। টাকা না দিলে তাকে তালাক দিয়ে দেশে ফেরত পাঠানোর হুমকি দেয় তারা। একপর্যায়ে গত বছরের ৩ অক্টোবর লিজাকে দেশে পাঠানো হয়।
এরপর ২০২৫ সালের ২২ এপ্রিল সকাল ১০টার দিকে লিজা স্বামীর বাড়িতে অবস্থানকালে আসামিরা আবারও ২০ লাখ টাকা যৌতুক দাবি করেন। তিনি টাকা দিতে অস্বীকার করলে ৪ নম্বর আসামী মোবাইল ফোনে বলেন, “শালির বেটি টাকা দেবে না, খুন করে লাশ নদীতে ভাসিয়ে দে।”

পরে ১ নম্বর আসামী রেবি খান রান্নাঘরে থাকা গরম খুন্তি দিয়ে লিজার বাম ও ডান হাতে ভয়াবহভাবে আঘাত করে। তার জামার হাতা পুড়ে যায়, শরীরের অংশ দগ্ধ হয়। পালাতে গেলে ২ ও ৩ নম্বর আসামী চুল ধরে মেঝেতে ফেলে মারধর করে। গলা চেপে ধরারও চেষ্টা চালায়। এ সময় তিনি প্রাণে বাঁচতে কৌশলে তার ভাবী জাকিয়া সুলতানা জিবাকে ফোন দিয়ে খবর দেন। লিজা আসামীদের কবল থেকে তাকে জীবিত উদ্ধার করার জন্য ভাবীকে অনুরোধ করেন। এ খবর পেয়ে পরিবারের লোকজন নবীগঞ্জ থানায় গিয়ে লিখিত আবেদন করলে থানা পুলিশ ঘটনা¯’লে গিয়ে তাকে উদ্ধার করে হবিগঞ্জ সদর হাসপাতালে ভর্তি করে। বর্তমানে তিনি চিকিৎসাধীন অবস্থায় রয়েছেন। অভিযোগে বলা হয়, যৌতুক না পেয়ে আসামিরা পূর্বপরিকল্পিতভাবে হত্যাচেষ্টা চালিয়েছে।
এ ব্যাপারে সেনাবাহিনীর মেজর মুবীন আর রহমান জানান, আমাদের কাছে মামলার বাদী লিখিত অভিযোগ করেন। এ প্রেক্ষিতে আমরা যাচাই-বাছাই করে অভিযোগের সত্যতা পাই। আদালতে আসামীদের হাজিরা দেওয়ার কথা ছিল। কিš‘ নির্ধারিত তারিখে আসামীরা আদালতে হাজির হয়ে আত্মসমর্পণ করেননি। পরবর্তীতে আমরা তথ্য প্রযুক্তির মাধ্যমে নিশ্চিত হই আসামীরা সিলেটের মেজরটিলা এলাকায় অব¯’ান করছেন। সেখানে অভিযান পরিচালনা করে সেনাবাহিনী। কিন্ত কৌশলে সেখান থেকে আসামীরা পালিয়ে যায়। পরবর্তীতে আমরা জানতে পারি আসামীরা বিশ্বনাথের একটি গ্রামে অবস্থান করছেন। আমরা বিষয়টি ওসমানিনগর সেনা ক্যাম্পের ক্যাপ্টেন শাহরিয়ারকে অবগত করলে তিনি একটি টিম নিয়ে সেখানে প্রায় আড়াই ঘন্টা অভিযান চালিয়ে ৪জনকে আটক করেন। পরবর্তীতে আটকক…তদের বিশ্বনাথ থানায় সোপর্দ করা হয়। বিশ্বনাথ থানার অফিসার ইনচার্জ আমাদেরকে জানিয়েছেন আসামীদের নবীগঞ্জ থানায় হস্তান্তর করা হবে। কিš‘ পরবর্তীতে আমাদের কাছে সংবাদ আসে আসামীদের ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। এ বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার জন্য আমরা আবারও বিশ্বনাথ থানার অফিসার ইনচার্জের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি জানান, বিশেষ ক্ষমতা আইনে আসামীদের মুচলেকা নিয়ে ছেড়ে দেয়া হয়েছে।
এ ব্যাপারে বিশ্বনাথ থানার ওসির মোবাইল নাম্বারে যোগাযোগ করা হলে ফোন রিসিভ করেন এসআই নুর মিয়া। তিনি জানান, অফিসার ইনচার্জ ছুটিতে আছেন। তিনি খোঁজ নিয়ে জানান, সেনাবাহিনী ২জন আসামীকে হস্তান্তর করেছিলেন। ওই দুজন আসামীকে নবীগঞ্জ থানা পুলিশ এসে নিয়ে গেছে।

এ ব্যাপারে নবীগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ কামরুজ্জামান জানান, রেবি খান ও ফয়েজ খান নামের দু’জন আসামীকে আমাদের থানায় হস্তান্তর করা হয়েছিল। কিš‘ আমরা প্রাথমিকভাবে তদন্ত করে আটকক…তদের ঘটনার সাথে জড়িত থাকার প্রমাণ পাইনি। এছাড়াও রেবি খানের সাথে দুই বছরের কন্যা সন্তান থাকায় ও ফয়েজ খান অসুস্থ হওয়ায় আমাদের উধ্বর্তন কতৃপক্ষের সাথে আলাপ করে তাদেরকে অভিভাবকের জিম্মায় ছেড়ে দেওয়া হয়। তবে তদন্ত করে ঘটনার সাথে জড়িত থাকার প্রমাণ পেলে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।