
নবীগঞ্জ প্রতিনিধি \ হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ উপজেলায় চলন্ত বাসে কলেজছাত্রীকে ধর্ষণের ঘটনায় দায়ের করা মামলার আসামী বাসের হেলপার লিটন মিয়াকে (২৬) ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই গ্রেফতার করেছে র্যাব। সোমবার দিবাগত রাত ১২ টার দিকে র্যাব-৯, সিলেট সদর কোম্পানি ও শায়েস্তাগঞ্জ ক্যাম্পের যৌথ আভিযানে সিলেট জেলার দক্ষিণ সুরমা থানাধীন জালালপুর এলাকা থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়।
র্যাব-৯ এর মিডিয়া অফিসার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার কে. এম শহিদুল ইসলাম সোহাগ স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে গ্রেফতারের বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে। র্যাবের অভিযানে গ্রেফতার হওয়া বাসের হেলপার লিটন মিয়া সিলেটের বিশ্বনাথ উপজেলার রশিদপুর গ্রামের নুরু মিয়ার ছেলে। এর আগে ওই ঘটনায় বাস চালক সাব্বির মিয়াকে আটক করে সেনাবাহিনী। আটক সাব্বির মিয়া নবীগঞ্জ উপজেলার কুর্শি ইউনিয়নের এনাতাবাদ গ্রামের ফকির আলীর ছেলে।
নবীগঞ্জ থানা পুলিশ জানায়, ভুক্তভোগী ঢাকার একটি কলেজের ছাত্রী। সে বানিয়াচং উপজেলার বাসিন্দা হলেও বর্তমানে ঢাকার তেজগাঁও এলাকায় পরিবার নিয়ে বসবাস করছে। রবিবার ঢাকা থেকে দাদার বাড়ি হবিগঞ্জের বানিয়াচংয়ে যাওয়ার জন্য বিলাশ পরিবহণের একটি বাসে ওঠে ঘুমিয়ে পড়ে ওই তরুণী। বাস থেকে সে শায়েস্তাগঞ্জ নামার কথা থাকলেও বাসে ঘুমিয়ে পড়ায় বাসটি মৌলভী বাজারের শেরপুর চলে যায়। পরে শেরপুর থেকে নবীগঞ্জ হয়ে বানিয়াচং যাওয়ার জন্য ‘মা এন্টারপ্রাইজ’ নামক একটি বাসে উঠে ওই তরুণী। বাসটি বিভিন্ন স্টপেজ থেকে যাত্রী উঠা-নামা করার ফলে এক পর্যায়ে বাস ফাঁকা হয়ে পড়ে। নবীগঞ্জের আউশকান্দি এলাকায় পৌঁছার পর অন্যান্য যাত্রীরা নেমে গেলে বাসে ওই তরুণী একা হয়ে পড়ে। তাকে একা পেয়ে প্রথমে বাসের হেলপার ও পরে চালক তাকে পালাক্রমে ধর্ষণ করে। পরে নবীগঞ্জ পৌর এলাকার তিন তালাব পুকুর পাড় এলাকায় বাসটি পৌঁছালে তরুণীর শোর চিৎকারে স্থানীয়রা সেনাবাহিনীকে খবর দেয়। রাত ১২টার দিকে নবীগঞ্জ-আউশকান্দি-শেরপুর সড়কের তিন তালাব এলাকায় স্থানীয়রা বাস চালককে আটক করে সেনাবাহিনীর কাছে সোপর্দ করে এবং তরুণীকে উদ্ধার করে। ওই সময় কৌশলে বাসের হেলপার লিটন পালিয়ে যায়। সোমবার সকালে তরুণী নিজেই নবীগঞ্জ থানায় সাব্বিরকে প্রধান ও লিটনকে ২য় আসামী করে তাদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে। পরে ওই তরুণীকে চিকিৎসার জন্য হবিগঞ্জ ২৫০ শয্যা জেলা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ওইদিন সকালে ঘটনাস্থল নবীগঞ্জের তিন তালাব এলাকা পরিদর্শন এবং থানায় গ্রেফতারকৃত আসামীর সঙ্গে কথা বলেন হবিগঞ্জের পুলিশ সুপার এ.এন.এম সাজেদুর রহমান। পরে পুলিশ সুপার হবিগঞ্জ সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ভুক্তভোগী তরুণীর সাথে দেখা করেন এবং তাকে সর্বাত্মক সহযোগীতার আশ্বাস দেন। এসময় পুলিশ সুপার সাংবাদিকদের বলেন, ধর্ষিতা কলেজছাত্রী অনেক অসুস্থ ও মানসিক ভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছেন। তাকে ডিস্টার্ব না করার জন্য অনুরোধ করেন তিনি।
এদিকে ধর্ষণ ঘটনার পর পর সটকে পড়ে ধর্ষক বাস হেলপার লিটন। গ্রেফতার এড়াতে লিটন আত্মগোপনে চলে যায়। অন্যদিকে লিটনকে গ্রেফতার করতে গোয়েন্দা নজরদারী বৃদ্ধি করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। সোমবার দিবাগত রাত ১২টার দিকে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে র্যাব-৯, সিলেট এর সদর কোম্পানী এবং সিপিসি-৩ হবিগঞ্জের শায়েস্তাগঞ্জ ক্যাম্প এর যৌথ আভিযানিক দল সিলেট জেলার দক্ষিণ সুরমা থানাধীন জালালপুর এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে। অভিযানে চলন্ত বাসে কলেজছাত্রীকে ধর্ষণ মামলার আসামী বাসের হেলপার লিটন মিয়াকে ২৪ ঘন্টার ভিতরে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয় র্যাব।