স্টাফ রিপোর্টার ॥ মানব পাচার মামলায় বানিয়াচং উপজেলার মন্দরী ইউনিয়নের উত্তর সাঙ্গর গ্রামের আদম ব্যবসায়ী মোজ্জামিল হককে কারাগারে প্রেরণ করেছে আদালত। গতকাল বুধবার মানব পাচার ট্রাইব্যুনাল-১ হবিগঞ্জ এর বিজ্ঞ বিচারক মমিনুল হাসানের এর আদালতে হাজির হয়ে মোজাম্মিল হক আত্মসমর্পণ করেন। আদালত শুনানী শেষে তার জামিন নামঞ্জুর করেন।
মামলার বিবরণ ও আদালত সূত্রে জানা যায়, উত্তর সাঙ্গর গ্রামের মোজ্জামিল হকের মেয়ে জামাতা ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নাসির নগর উপজেলার গোয়ালনগর গ্রামের গ্রামের বাসিন্দা দেওয়ান মিয়া ফ্রান্সে বসবাস করেন। মেয়ের জামাতা ফ্রান্স থাকায় মোজ্জামিল হক এলাকায় প্রচার করেন তার মেয়ের জামাতা ফ্রান্স, ইতালীতে লোক নেন। এই সুবাদে পাশ্ববর্তী দক্ষিণ সাঙ্গর গ্রামের মরহুম গাজীউর রহমানের ছেলে নোমানকে ইতালিতে পাঠানোর জন্য মোজ্জামিল হক, তার মেয়ের জামাতা দেওয়ান মিয়া ও ছেলে মুছা মিয়ার সাথে কথা বলেন নোমানের বড় ভাই লিটন মিয়া। এ সময় মোজ্জামিল হক ও তার মেয়ের জামাই দেওয়ান মিয়া জানান, ইতালীতে পৌছা পর্যন্ত তাদেরকে ১৬ লাখ টাকা দিতে হবে। চুক্তি অনুযায়ী ২০২১ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি মোজ্জামিল হকের বাড়িতে গিয়ে তাদের হাতে ৮ লাখ টাকা ও নোমানের পাসপোর্ট সমজিয়ে দেন লিটন মিয়া। এ প্রেক্ষিতে একই বছরের ৭ মার্চ নোমান মিয়াকে দুবাইতে পাঠানো হয়। সেখানে নোমানকে রেখে মোজ্জামিল গংরা আরো ৬ লাখ টাকা দাবি করেন। তাদের দাবি অনুযায়ী ২০২৩ সালের ২০ জুন আরো ৬ লাখ টাকা দেন লিটন মিয়া এবং ২৭ মার্চ নোমানকে দুবাই থেকে লিবিয়া পাঠানো হয়েছে বলে জানানো হয়। লিবিয়াতে কিছু দিন থাকার পর মোজ্জামিল গংরা লিটনকে জানায়, সেখানে নোমানকে আটক করে নির্যাতন করছে মাফিয়া চক্র। ওই নির্যাতন থেকে তাকে বাঁচাতে হলে ৫ লাখ টাকা দিতে হবে। অন্যথায় নোমানকে হত্যা করা হবে বলে হুমকি প্রদান করা হয়। শুধু তাই নয়, নোমানের পরিবারের সদস্যদেরকে তাকে যে নির্যাতন করা হচ্ছে, সেই দৃশ্য দেখানো হয়। নির্যাতনের দৃশ্য দেখে নোমানের পরিবারের সদস্যরা আতংকিত হয়ে পড়েন। কিন্তু কোথা থেকে টাকা দেবেন, এ নিয়ে দুঃচিন্তার মধ্যে পড়েন তারা। ১৪ লাখ টাকা দিতেই জমি-জমা বিক্রি করে অনেকটা নিঃস্ব হয়ে গেছেন নোমানের পরিবার। এ দিকে নোমানের পরিবার টাকা না দেওয়ায় মোজ্জামিল হক, তার মেয়ের জামাই দেওয়ান মিয়ার নির্দেশে নোমানকে সেখানে প্রতিদিন মারধোর করছে এবং তার বাড়ি থেকে টাকা এনে দেওয়ার জন্য চাপ সৃষ্টি করছে মাফিয়া চক্র। বর্তমানে নোমানের সন্ধান পাচ্ছে না তার পরিবার। তার সন্ধান না পেয়ে পরিবারের সদস্যরা দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। নোমানের সন্ধানসহ তার পরিবারের কাছ থেকে নিয়ে যাওয়া টাকা উদ্ধারের জন্য ২০২৪ সালের ২৫ জুন মানব পাচার ট্রাইব্যুনাল-১ হবিগঞ্জ এর আদালতে দেওয়ান মিয়া, তার শ্বশুর মোজ্জামিল হকসহ ৪জনকে আসামী মামলা করেন নোমানের বড় লিটন মিয়া। বিজ্ঞ আদালত মামলাটি এফআইআর ভুক্ত করেন। ওই মামলায় আসামী মোজ্জামিল হক গতকাল আদালতে আত্মসমর্পণ করলে বিজ্ঞ আদালত তার জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে প্রেরণের নির্দেশ দেন। মামলার বাদীপক্ষে আইনজীবি ছিলেন অ্যাডভোকেট সালাউদ্দিন হেলাল। তিনি জানান, কারাগারে প্রেরণকৃত আসামী মোজ্জামিল হক একজন মাফিয়া চক্রের প্রধান হিসেবে ওই এলাকায় কাজ করছেন। ইতিমধ্যে তার বিরুদ্ধে ৪টি মামলা দায়ের করা হয়েছে। তিনি বলেন- ৪টি মামলার ভুক্তভোগীদের কাছ থেকে মোজ্জামিল হক ৫৪ লাখ টাকা আত্মসাত করেছেন।